
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও উপস্থাপক জিল্লুর রহমান বলেছেন, দেশের শিক্ষাঙ্গনের উত্তপ্ত পরিস্থিতি এখন জাতীয় রাজনীতির থার্মোমিটারে সরাসরি প্রভাব ফেলছে। চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও ময়মনসিংহের তিনটি ক্যাম্পাসের ঘটনাবলি জাতীয় রাজনীতিকে নতুন করে হাঁপিয়ে তুলছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসীর সংঘর্ষ, ১৪৪ ধারা জারি ও ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত; রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভোটার তালিকায় প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে প্রশাসনিক দপ্তর তালাবদ্ধ; এবং ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয় দফা দাবি, রেললাইন অবরোধ ও হল ত্যাগ না করার ঘোষণা—এসব ঘটনা শিক্ষাঙ্গনের তাপমাত্রাকে জাতীয় রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে।
নিজের ইউটিউব চ্যানেলে দেওয়া এক ভিডিওতে জিল্লুর রহমান এসব কথা বলেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন, “ক্যাম্পাস থেকে রাজনীতির শিরায় শিরায় চাপ তৈরি হচ্ছে। জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে দেশ যখন স্নায়ুযুদ্ধের মধ্যে, তখন ছাত্ররাজনীতি তার এক্সটেনশন হিসেবে কাজ করছে। কখনো এটি প্রেসার গ্রুপ, কখনো আগাম ফিল্ড টেস্ট হিসেবে কাজ করছে।”
জিল্লুর রহমান বলেন, ক্যাম্পাসে কর্তৃপক্ষের একচ্ছত্র আধিপত্য এখন আর অটুট নেই; এটি এখন আলোচনা ও সমঝোতার বিষয়। তিনি উল্লেখ করেন, “এত কিছুর মধ্যে সবচেয়ে রাজনৈতিক বাক্য এসেছে নির্বাচন কমিশনের দিক থেকে। তারা বলছে, ফেব্রুয়ারির ভোটে মব কিছু করতে পারবে না। ৩০০ আসনে একযোগে ভোট হলে মব ছড়িয়ে যাবে।”
তবে তিনি এই যুক্তির বাস্তবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, “যুক্তিটা টেকনিক্যালি আকর্ষণীয়, কিন্তু মাঠে কি সত্যিই এমন হবে? ঢাকার ৫০০ জনের মব বরিশালে ১৫০ জনেই কাজ সারতে পারে। ফল একই—ভয় দেখানো, ভোটারদের ঠেকানো, কমিশন ও পুলিশ প্রশাসনকে ব্যস্ত রাখা।” তিনি আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত মব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
জিল্লুর রহমান আরও বলেন, “আমাদের বড় বড় রাজনৈতিক আন্দোলন—১৯৫২, ১৯৬৯, ১৯৯০ কিংবা সাম্প্রতিক গণ-অভ্যুত্থান—সবকিছুর ট্রেলার প্রথমে ক্যাম্পাসে দেখা গেছে। ক্যাম্পাসের কণ্ঠস্বর রাস্তায় ছড়ায়, তারপর ব্যালটে বা ব্যারিকেডে তার ফলাফল প্রকাশ পায়।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, “২০২৪-এর পর ছাত্রসমাজের গণমুখী আন্দোলনের সক্ষমতা বহুগুণ বেড়েছে। এটি এখন আর তত্ত্ব নয়, প্রতিদিনের খবর।”
শিক্ষাঙ্গনের এই উত্তপ্ত পরিস্থিতি জাতীয় রাজনীতির গতিপ্রকৃতির ওপর গভীর প্রভাব ফেলছে বলে মনে করেন এই বিশ্লেষক।
Comments