
চার দফা দাবিতে জামায়াতে ইসলামীসহ আট দলের যুগপৎ আন্দোলন শুরুর আগেই ফাটল ধরেছে। যুগপৎভাবে মাঠে নামার ঘোষণা রাজনৈতিক অঙ্গনে শোরগোল তুললেও শেষ মুহূর্তে তিনটি দল এই উদ্যোগ থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। ফলে জামায়াতপন্থি ও ইসলামী ধারার পাঁচটি দল নিয়ে এই আন্দোলন এগিয়ে যাচ্ছে।
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, জাতীয় পার্টির রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ, উচ্চকক্ষে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতি চালু এবং নির্বাচনে লেভেল প্লেইং ফিল্ড নিশ্চিতকরণের দাবিতে আন্দোলনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। তবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ এবং আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি এই যুগপৎ কর্মসূচিতে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।
আন্দোলনে অংশ নিচ্ছে জামায়াতে ইসলামী, খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি (একাংশ) এবং বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। এই পাঁচ দল আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় গণসমাবেশের মাধ্যমে আন্দোলন শুরু করবে। পরে পর্যায়ক্রমে দেশব্যাপী কর্মসূচি ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
চার দফা দাবি
যুগপৎ আন্দোলনের চার দফা দাবি হলো: ১) জুলাই সনদের অবিলম্বে বাস্তবায়ন। ২) জাতীয় পার্টির রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ। ৩) উচ্চকক্ষে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতি চালু। ৪) নির্বাচনে লেভেল প্লেইং ফিল্ড নিশ্চিতকরণ।
জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) তাদের কর্মসূচি ঘোষণা করবে। এছাড়া, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ইতিমধ্যে পাঁচ দফা দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, যার মধ্যে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন এবং উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু অন্তর্ভুক্ত।
যুগপৎ আন্দোলনে ফাটল
শনিবার একটি জাতীয় দৈনিকে ‘চার দাবিতে আট দল যুগপৎ আন্দোলনে নামছে’ শিরোনামে খবর প্রকাশিত হলে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সামাজিক মাধ্যমে খবরটি দ্রুত ভাইরাল হয়। কিন্তু বিকেল গড়াতেই এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব ফেসবুকে লিখেন, সংবাদটি ‘মিসলিডিং’। তিনি জানান, এনসিপি শুধু উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি এবং জাতীয় পার্টির কার্যক্রম স্থগিতের বিষয়ে একমত, কিন্তু যুগপৎ আন্দোলনে যোগ দেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, “যুগপৎ কর্মসূচির বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। আমরা ফ্যাসিবাদবিরোধী সব দলের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে চাই। তবে আট দলের যুগপৎ আন্দোলনের কথা আমাদের জানা নেই। আমরা জুলাই সনদ আলোচনার মাধ্যমে বাস্তবায়ন চাই এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যকে শক্তিশালী করার জন্য কাজ করছি।”
একইভাবে, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু ও সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ এক বিবৃতিতে বলেন, “যুগপৎ কর্মসূচির বিষয়ে প্রকাশিত সংবাদ বিভ্রান্তিকর। দলীয় সিদ্ধান্ত ছাড়া কোনো জোটে যোগ দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।”
ইসলামপন্থি দলগুলোর রোডম্যাপ
জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ পাঁচটি ইসলামপন্থি দল ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় গণসমাবেশের মাধ্যমে আন্দোলন শুরু করবে। প্রাথমিকভাবে গণমিছিল ও সমাবেশের মতো কর্মসূচি থাকলেও পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে তারা। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, এই আন্দোলনের মাধ্যমে তারা সরকারের পাশাপাশি বিএনপিকেও চাপে রাখতে চায়। তবে বিএনপি এই কর্মসূচি নিয়ে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি।
তিন দলের সরে দাঁড়ানোর প্রভাব
আট দলের ঘোষণার পর তিন দলের সরে দাঁড়ানো শুধু সংখ্যার হ্রাস নয়, বরং বিরোধী রাজনীতিতে আস্থার সংকটের ইঙ্গিত বহন করে। ইসলামী ঘরানার পাঁচ দল মিলে আন্দোলন শুরু করলেও বিএনপি, গণঅধিকার পরিষদ বা এবি পার্টির মতো নতুন প্রজন্মের দলগুলোকে বাইরে রেখে এই উদ্যোগ কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন বলেন, “কোনো দল বলেনি তারা এই আন্দোলনে নেই। সবাইকে দলীয় ফোরামে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছিল। আমরা আশা করি, তারা আমাদের দাবির সঙ্গে একমত হয়ে সুবিধামতো মাঠে নামবে।” তিনি আরও বলেন, “এখানে কোনো দলের নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয় নেই। সবাই সমান, এবং সবার দাবির প্রতি একাত্মতা রয়েছে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, শুরুতেই ভাঙন ধরায় এই যুগপৎ আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়েছে। এটি মাঠের কর্মসূচিতে প্রভাব ফেলতে পারে এবং সরকারের বিরুদ্ধে কার্যকর চাপ তৈরির পরিবর্তে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে।
Comments