
পাবনার ঈশ্বরদীর পদ্মার চরে প্রতিদিন অর্ধকোটি টাকার ধনিয়া পাতা বেচাকেনা হয়। এখানকার ধনিয়ার পাতার মান ও ঘ্রাণ ভালো হওয়ায় এটি স্থানীয় চাহিদা পূরণের পর রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে পাঠানো হচ্ছে। এখানকার চরাঞ্চল থেকে প্রতিদিন ১১০০ থেকে ১৪০০ মণ ধনিয়ার পাতা বিক্রি হয়। যার বাজার মূল্যে ৪০ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ঈশ্বরদীর পদ্মার চরে ৭০ হেক্টর জমিতে এবার ধনিয়ার পাতার আবাদ হয়েছে। এটি মূলত শীত মৌসুমের ফসল হলেও পদ্মার চরে আগাম ধনিয়ার পাতার আবাদ হয়েছে।
উপজেলার পদ্মা তীরবর্তী প্রত্যন্ত চরাঞ্চল দাদাপুর, চররূপপুর, লক্ষ্মীকুন্ডা, বিলকেদার চরাঞ্চল সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, চরের জমিতে ব্যাপক ধনিয়ার পাতার জমিতে আবাদ হয়েছে । চাষিরা জমি থেকে ধনিয়ার পাতা তোলা আবার কেউ পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ব্যস্ততা চোখে পড়ে ধনিয়া পাতা ব্যবসায়ীদের। তারা ধনিয়ার পাতা জমি তোলার পর প্যাকেটজাত করণের জন্য ধোয়া, ঝুড়িতে সাজানো ও ট্রাকে লোড করার কাজ করছেন।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ধনিয়া মূলত মসলা জাতীয় ফসল হলেও সবজি হিসেবে এর সবুজ পাতার চাহিদাই সবচেয়ে বেশি। রকমারি তরকারিতে ধনিয়া পাতা অপরিহার্য উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। প্রতি বিঘা জমিতে ধনিয়ার পাতা চাষ করতে সার, সেচ, কীটনাশক ও বাজারজাতকরণসহ খরচ হয় ২৫-৩০ হাজার টাকা। ফলন ভালো হলে প্রতি বিঘা জমির ধনিয়ার পাতা ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকায় বেচাকেনা হয়।
ঈশ্বরদী উপজেলার বিলকেদার চরে ধনিয়া পাতা প্যাকেটজাতকরণের সময় কথা হয় চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জ বাজার এলাকার ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলামের।
তিনি বলেন, ঈশ্বরদীর পদ্মার চরের ধনিয়ার পাতা আমরা এখানকার কৃষকদের কাছে থেকে বিঘা হিসেবে কিনেছি। প্রতি বিঘা ধনিয়া পাতার জমি ফলনের মান হিসেবে ৬০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকায় কিনেছি। ধনিয়ার পাতা জমি থেকে তোলার পর মহিষের গাড়িতে করে পদ্মার শাখা নদীর কাছে এনেছি। সেখান থেকে নৌকাতে নদী পাড়ি দেওয়ার পর ভটভটি করে প্যাকেজিং করার স্থানে এনেছি। এখানে প্যাকেটজাত করার পর ভটভটি করে এখান থেকে দুই দূরে কিলোমিটার দূরে দাদাপুর স্কুলের সামনে নিয়ে গিয়ে ট্রাকে তোলা হচ্ছে। এখানকার ধনিয়ার পাতা ঢাকার কাওরান বাজার, যাত্রাবাড়ী, কুমিল্লার নিমশা, বরিশাল, ফরিদপুর, মাদারীপুরসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গার আরেক ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন বলেন, আমাদের জেলা চুয়াডাঙ্গাসহ পাশ্ববর্তী জেলা মেহেরপুর ও ঝিনাইদহে ব্যাপক ধনিয়ার পাতার আবাদ হয়। এবার অতিবৃষ্টির কারণে এসব জেলার ধনিয়ার পাতা নষ্ট হয়ে গেছে। ঈশ্বরদীর চররূপপুর, দাদাপুরসহ বিভিন্ন চরে ব্যাপক ধনিয়ার ফলন হয়েছে। তাই আমরা এবার এখান থেকে ধনিয়ার পাতা কৃষকদের কাছে থেকে বিঘা প্রতি কিনে তা প্যাকেটজাত করে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা শহরে পাঠাচ্ছি।
উপজেলার লক্ষ্মীকুন্ডা গ্রামের কৃষক আব্দুল মজিদ বলেন, পদ্মার চর জুড়ে এবার ব্যাপক ধনিয়ার পাতার আবাদ হচ্ছে। হঠাৎ বন্যায় বেশকিছু জমির ধনিয়ার জমির ক্ষতি হয়েছে। তবুও ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকরা বিঘা প্রতি ৮০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন। দেশের বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ীরা এখানে এসে জমি থেকে ধনিয়ার পাতা সংগ্রহ করে তারা রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলা শহরে বাজারজাতকরণের জন্য পাঠাচ্ছে। এখানকার ধনিয়ার পাতার গুনগত মান ও স্বাদ ভালো হওয়ায় প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১৩০ টাকা দরে স্থানীয়ভাবে বেচাকেনা হচ্ছে।
আরেক কৃষক আব্দুল হালিম বলেন, পদ্মার চরাঞ্চল দাদাপুর, লক্ষ্মীকুন্ডা, বিলকেদার, কামালপুর চর থেকে প্রতিদিন ১০০০-১৪০০ মণ ধনিয়ার পাতা বিক্রি হচ্ছে। যার বাজার মূল্য ৪০ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মমিন জানান, ঈশ্বরদীর পদ্মার চরে এবছর ৭০ হেক্টর জমিতে ধনিয়ার পাতার আবাদ হয়েছে। এই ধনিয়ার পাতা স্থানীয়দের চাহিদা পূরণের পর রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হচ্ছে। এসব ধনিয়া পাতার জমি কৃষকরা প্রতি বিঘা ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা বিঘায় বিক্রি করছেন। এতে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।
Comments