Image description

৩৩ বছর পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচন আজ বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ৮টি প্যানেলের প্রার্থীদের নিয়ে প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থী ২১টি হলের ২২৪টি বুথে ভোট দেবেন। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।

নির্বাচনে কেন্দ্রীয় সংসদের ২৫টি পদে ১৭৮ জন প্রার্থী এবং ২১টি হল সংসদের ৩১৫টি পদে ৪৪৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মোট ভোটার ১১ হাজার ৮৪৩, যার মধ্যে ছাত্র ৬ হাজার ১১৫ এবং ছাত্রী ৫ হাজার ৭২৮। প্রতি ভোটার ৪০টি পদে ভোট দেবেন। তবে ছাত্রী হলের ১৫০টি পদের মধ্যে মাত্র ৩৮টিতে সরাসরি ভোট হচ্ছে, বাকিগুলো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত বা ফাঁকা রয়েছে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, “প্রস্তুতি সন্তোষজনক। ১ হাজার ২০০ সদস্যের নিরাপত্তা বাহিনী, সিসি ক্যামেরা, এবং কেন্দ্রীয় মনিটরিংয়ের মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা হবে।” ভোটের দিন বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

প্রার্থীদের মধ্যে ছাত্রদলের প্যানেলে শেখ সাদী হাসান (ভিপি) ও তানজিলা হোসেন বৈশাখী (জিএস), বাগাছাসের ‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম’-এ আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল (ভিপি) ও আবু তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম (জিএস), ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন’-এ আব্দুর রশিদ জিতু (ভিপি) ও মো. শাকিল আলী (জিএস), এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরের ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’-এ আরিফুল্লাহ আদিব (ভিপি) ও মাজহারুল ইসলাম (জিএস) নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ ও ‘সংশপ্তক পর্যদ’-এর প্রার্থীরাও বিভিন্ন পদে লড়ছেন।

শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎসাহ থাকলেও কেউ কেউ ভোটার উপস্থিতি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। জামিন হায়দার নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, “জাকসু নির্বাচনের আমেজে ৬০ শতাংশ ভোট পড়তে পারে। তার ভাষ্য, “প্রথমে ভাবছিলাম, ৫৫ শতাংশ ভোট পড়বে। তবে ডাকসু নির্বাচনের আমেজের কারণে ভোটের পরিমাণ কিছুটা বাড়তে পারে। তবে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ও ছুটির কারণে কিছু শিক্ষার্থী হল ত্যাগ করায় উপস্থিতি প্রভাবিত হতে পারে।

কেন্দ্রীয় সংসদের কার্যকরী সদস্য পদপ্রার্থী আদৃতা রায় বলেন, “প্রচারে ঘাটতি ছিল, ক্যাম্পেইনের সুযোগ পাইনি। মানুষ অনুমাননির্ভর ভোট দেবে। পিএল চলছে, আবার ফাইনালও শেষ। নির্বাচন উপলক্ষে বাসের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়নি। ফলে ঢাকার ভোটাররা আসতে পারবে না বলে মনে করছি।”

প্রার্থীদের মধ্যে নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। ছাত্রদলের শেখ সাদী হাসান নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানান। স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রশিদ জিতু প্রশাসনের গাফিলতির কথা উল্লেখ করেন। ছাত্রফ্রন্টের সজীব আহমেদ ডোপ টেস্ট প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, “এটি নাটক মনে হচ্ছে। পোলিং এজেন্ট ও বহিরাগত নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন ব্যর্থ হলে কারচুপির আশঙ্কা রয়েছে।”

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলাম বলেন, “নতুন বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ভোট দিতে যাচ্ছি। যে প্রার্থীই নির্বাচিত হন, শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে কাজ করবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।”

নিরাপত্তা জোরদার ও নির্বাচনকে ঘিরে সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে আশাবাদী প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মো. মনিরুজ্জামান।

তিনি বলেন, “এখন পর্যন্ত আমাদের প্রস্তুতি সন্তোষজনক। দুপুরের পর থেকে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা আরও দৃশ্যমান হবে। প্রায় ১২০০ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন উপহার দিতে চাই।”

ছাত্রদল লড়ছে শেখ সাদী হাসান ও তানজিলা হোসেন বৈশাখীর নেতৃত্বে। বাগাছাসের ‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম’ লড়বে আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল ও আবু তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়ামের নেতৃত্বে। ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন’ প্যানেলে আব্দুর রশিদ জিতু ভিপি এবং মো. শাকিল আলীর জিএস পদে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

ইসলামী ছাত্রশিবির ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ নামে লড়বে। তাদের ভিপি প্রার্থী আরিফুল্লাহ আদিব ও জিএস মাজহারুল ইসলাম। ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেলে জিএস পদে শরণ এহসান, এজিএস (পুরুষ) পদে নুর এ তামীম স্রোত এবং এজিএস (নারী) পদে ফারিয়া জামান নিকি লড়বেন। এ প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী অমর্ত্য রায় জনের প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে। ছাত্র ইউনিয়ন-ছাত্রফ্রন্টের ‘সংশপ্তক পর্যদে’ জিএস পদে জাহিদুল ইসলাম ঈমন, এজিএস-নারী পদে সোহাগী সামিয়া জান্নাতুল ফেরদৌস লড়াই করছেন।

জাকসুর মোট প্রার্থীর ২৫ শতাংশ ছাত্রী, বাকি ৭৫ শতাংশই ছাত্র। ভিপি পদে কোনো নারী শিক্ষার্থী প্রার্থী হননি। জিএস পদে ১৫ জনের প্রার্থীর মধ্যে মেয়ে দুইজন। আর চারটি পদে কোনো মেয়ে প্রার্থীই নেই। সবগুলো হল সংসদ মিলিয়ে মোট প্রার্থীর ২৪ দশমিক ৪ শতাংশ ছাত্রী। আর মেয়েদের হলগুলোর পাঁচটিতে ১৫ পদে প্রার্থীই নেই।

নির্বাচন কমিশনের সদস্যসচিব এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, “ভোটের দিন ফটক বন্ধ থাকবে, শুধু শিক্ষার্থী ও অনুমতিপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা প্রবেশ করতে পারবেন। ডোপ টেস্টের ফলাফল এখনো পাইনি, প্রয়োজনে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।”