Image description

জুলাই অভ্যুত্থানের পর নতুন চেহারায় আবির্ভূত ইসলামী ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে অভাবনীয় সাফল্য লাভ করেছে। ছয় বছর পর অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে শিবির সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল ১২টি সম্পাদকীয় পদের মধ্যে ৯টিতে জয়ী হয়েছে, যার মধ্যে ভিপি ও জিএস পদ অন্তর্ভুক্ত। প্রায় ৪০ হাজার ভোটারের ৭০ শতাংশেরও বেশি অংশগ্রহণে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে এই উৎসবমুখর নির্বাচন।

শিবিরের সাবেক সভাপতি আবু সাদিক কায়েম ভিপি পদে ১৪ হাজার ৪২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের আবিদুল ইসলাম খান পেয়েছেন ৫ হাজার ৭০৮ ভোট। জিএস পদে এসএম ফরহাদ ১০ হাজার ৭৯৪ ভোট নিয়ে জয়লাভ করেছেন, প্রতিদ্বন্দ্বী শেখ তানভীর বারী হামিমের ভোট ৫ হাজার ২৮৩। এজিএস পদে মুহা. মহিউদ্দীন খান ১১ হাজার ৭৭২ ভোট পেয়ে বিজয়ী। বিশেষ করে মেয়েদের হলগুলোতে শিবির প্রার্থীরা নজিরবিহীন সমর্থন পেয়েছেন।

প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কোনো পদে জয় পায়নি। অবশিষ্ট তিনটি পদে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিজয়ী: সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ (৭ হাজার ৭৮২ ভোট), সমাজসেবা সম্পাদক যুবাইর বিন নেছারী (৭ হাজার ৬০৮ ভোট) এবং গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক সানজিদা আহমেদ তন্বি (১১ হাজার ৭৭৮ ভোট)।

জুলাই অভ্যুত্থানে সক্রিয় শিক্ষার্থীদের সংগঠন বাগছাস খুব একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারেনি। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের অনুপস্থিতিতে এবারই প্রথম সরকারি দল-সমর্থিত ছাত্র সংগঠন ছাড়া ডাকসু নির্বাচন দেখল বিশ্ববিদ্যালয়। শিবিরের প্যানেলে চারজন নারী এবং একজন অমুসলিমকে অন্তর্ভুক্ত করে ‘অন্তর্ভুক্তির’ চমক দেখানো হয়েছে।

ফল ঘোষণার পর বিজয়ী সাদিক কায়েম বলেন, “ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে জুলাইয়ের প্রজন্ম বিজয়ী হয়েছে। আমরা সবাই একসাথে কাজ করব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে মাল্টিকালচারাল একাডেমিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করব।” তবে ছাত্রদলের আবিদুল ইসলাম খান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী উমামা ফাতেমা কারচুপির অভিযোগ তুলে ফল প্রত্যাখ্যান করেছেন। উমামা বলেন, “নিজেদের হীনস্বার্থের জন্য শিবিরের বেঈমানি ইতিহাসে লেখা থাকবে।”

রাতভর উত্তেজনা ও বিজয় মিছিলের মধ্যে বুধবার সকালে আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা করেন প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক জসীম উদ্দিন। শিবিরের ৪৮ বছরের ইতিহাসে এমন প্রকাশ্য সুযোগ তারা আর কখনো পায়নি।

শিবির সমর্থিত বিজয়ীদের তালিকা:

  • ভিপি: আবু সাদিক কায়েম (১৪ হাজার ৪২ ভোট)
  • জিএস: এসএম ফরহাদ (১০ হাজার ৭৯৪ ভোট)
  • এজিএস: মহিউদ্দীন খান (১১ হাজার ৭৭২ ভোট)
  • মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন: ফাতিমা তাসনীম জুমা (১০ হাজার ৬৩১ ভোট)
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি: ইকবাল হায়দার (৭ হাজার ৮৩৩ ভোট)
  • কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া: উম্মে সালমা (৯ হাজার ৯২০ ভোট)
  • আন্তর্জাতিক বিষয়ক: জসীমউদ্দিন খান (৯ হাজার ৭০৬ ভোট)
  • ক্রীড়া: আরমান হোসেন (৭ হাজার ২৫৫ ভোট)
  • ছাত্র পরিবহন: আসিফ আব্দুল্লাহ (৯ হাজার ৬১ ভোট)
  • ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট: মাজহারুল ইসলাম (৯ হাজার ৩৪৪ ভোট)
  • স্বাস্থ্য ও পরিবেশ: আব্দুল্লাহ আল মিনহাজ (৭ হাজার ৩৮ ভোট)
  • মানবাধিকার ও আইন: সাখাওয়াত জাকারিয়া (১১ হাজার ৭৪৭ ভোট)