
মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার চরমস্তফাপুর এলাকায় কুমার নদীর ভাঙন যেন দানবের মতো এগিয়ে আসছে। কৃষকের সোনালি ধানের জমি, শস্যভরা গোলা আর চিরচেনা গ্রাম, সবই একে একে নদীগর্ভে মিলিয়ে যাবে। পাড় রক্ষায় স্থানীয়দের উদ্যোগে এখন বাঁশের খুঁটি গেড়ে, বালুর বস্তা ফেলে ‘শেষ চেষ্টা’ চালানো হচ্ছে।
উপজেলা প্রশাসনের তহবিল থেকে প্রায় ১৫০ মিটার জুড়ে বাঁশের বাঁধ নির্মাণ চলছে। কিন্তু নদী তো থেমে নেই, এখনও প্রায় এক কিলোমিটার ভাঙনপ্রবণ এলাকা খোলা পড়ে আছে। ইশিবপুর মৌলিক কান্দি ও গাং কান্দি গ্রামের প্রায় ৪০০ পরিবার ভাঙনের সরাসরি হুমকির মুখে। গত কয়েক বছরে এই নদীই গিলে নিয়েছে শতাধিক ঘরবাড়ি আর অসংখ্য একর ফসলি জমি, যার হিসাব রাখা কারও পক্ষে সম্ভব হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, টেকেরহাট-মস্তফাপুর-মল্লিক কান্দি-গাং কান্দি হয়ে শ্রীনদীতে যুক্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ পাকা সড়ক রয়েছে ভাঙনপথের ঠিক সামনে। নদী যদি আরও খানিকটা এগোয়, তবে ভেঙে যাবে সড়কটি, আর তার মানে ওই অঞ্চলের সঙ্গে টেকেরহাট ও শ্রীনদীর যোগাযোগ একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।
শুক্রবার সকালে ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন রাজৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাহফুজুল হক। তিনি জানান, বর্তমানে জরুরি ভিত্তিতে বাঁশ ও বালুর বস্তা দিয়ে প্রতিরোধের কাজ চলছে। স্থায়ী সমাধানের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ মোল্লা বললেন, ভাঙন এখন ভয়াবহ রূপ নিয়েচ্ছে। ইউনিয়নের পক্ষ থেকে সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে, তবে স্থায়ী বাঁধ ছাড়া মুক্তি মিলবে না।
৭ নং ওয়ার্ডের মেম্বার নুরুল আমিনের আক্ষেপ, আমাদের গ্রাম থেকে বহু ঘরবাড়ি ও জমি নদীতে হারিয়ে গেছে। সাময়িক বাঁধ একদিন ভেঙে যাবে, স্থায়ী বাঁধ ছাড়া রক্ষা নেই।
সরেজমিনে দেখা যায়, নদীর কিনার ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে ১০-১২টি ঘর, যেন পরের মুহূর্তেই ভেঙে পড়বে নদীর পেটে। আশঙ্কা আরও বাড়াচ্ছে অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য, প্রতিদিন ১০-১৫টি ট্রলার নদীর বুক চিরে বালু তুলে নিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয়দের ভাষায়, নদীকে হত্যা করছে নদীর মানুষই।
আসন্ন বর্ষায় যদি স্থায়ী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, কুমার নদীর গতি হবে আরও তীব্র, আর তখন হয়তো মানচিত্র থেকেই হারিয়ে যাবে চরমস্তফাপুর ও এর আশপাশের গ্রামগুলো।
Comments