
বর্ষাকালে পুকুরের পানি উথলিয়ে গিয়ে অল্পতেই যেনো রাস্তা ভেঙে না পড়ে সে জন্যই মুলত পুকুর ও রাস্তার ধস ঠেকাতে গাইড ওয়াল নির্মিত হয়। লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় এমনই এক গুরুত্বপূর্ণ সড়কে গাইড ওয়াল ও রাস্তা নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের তথ্য পাওয়া গিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিয়াম এন্ড সাজ্জাদ ট্রেডার্সের বিরুদ্ধে।
উপজেলার কুচলিবাড়ী ইউনিয়নের ললিতারহাট বাজার থেকে বোচার বাজার পর্যন্ত ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে প্রায় ৮৩ লক্ষ টাকা ব্যায়ে পৌনে ২ কিলোমিটার রাস্তা সংস্কার ও রাস্তা সংশ্লিষ্ট একাধিক পুকুরে গাইড ওয়াল নির্মাণে ওই প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদার শাহাদাত হোসেনের বিরুদ্ধে এই অনিয়মের তথ্য পাওয়া যায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাটগ্রাম উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যকরী সদস্য আহসান হাবীব রুজেনের তত্বাবধানে একইসঙ্গে রাস্তা ও গাইড ওয়াল নির্মাণের কাজ চলছে। একেবারে গুড়ো যুক্ত খোয়া ও নিম্নমানের ইট দিয়ে একদিকে যেমন চলছে রাস্তা মেরামতের কাজ তেমনিভাবে কোনোরকমে ওই খোয়া ও সিমেন্টের মিশ্রণে গাইড ওয়াল নির্মাণের দৃশ্য ধরা পড়ে। হাত দিলেই সিমেন্ট খুলে পড়ছে গাইড ওয়াল সংযুক্ত প্লাসেটিং খুঁটির (পোস্ট/পিলার )। কোথাও কোথাও ভেঙে পড়া পুরোনো পিলার ব্যবহার করা হয়। শুধু তাই নয়, ওয়াল নির্মাণের ৩-৪ দিনের মাথায় ইটগুলোতে হাত বা পা দিলেই অল্পতেই খসে পড়ে।
ওয়ার্ক এসিস্ট্যান্ট রুজেনের কাছে জানতে চাওয়ার মুহুর্তে তার সামনেই সিমেন্ট-বালুর মিশ্রণেও অনিয়মের দৃশ্য গণমাধ্যমকর্মীরা দেখিয়ে দিলে সে সময় কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
এক বৃদ্ধ চাচা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এত নিম্নমানের খোয়া আর ইট দিয়ে যে কাজ চলছে অথচ অফিস থেকে কেউ এসে এসব দেখছে না। এখানে কোনোরকমে কম সিমেন্ট আর বেশি বালি দিয়ে ওয়ালের কাজ করছে। কয়েকটা লোকাল পিলার দিয়েছে। আর নতুনগুলোত এখনই ভেঙে যাচ্ছে। আমরা ভালো করে করতে বললেও তারা ওভাবেই কাজ করেছে বলে দাবি এলাকাবাসীর।
এলাকাবাসীর প্রত্যক্ষ অভিমত ও সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতায় ঠিকাদার ওই কাজের ইস্টিমেট ছাড়াই ইচ্ছেমতো কাজ করেছে।
কাজের ঠিকাদার উপস্থিত না থাকলেও কাজের ইস্টিমেট সঙ্গে না রাখার বিষয় কোনো সদুত্তরও দিতে পারেননি ঠিকাদারের নিয়োজিত একজন মাইদুল ইসলাম। তিনি বলেন, কাজ ভালো হচ্ছে। তাই এবিষয়ে কিছু জানতে চাইলে ঠিকাদারের সঙ্গে যোগাযোগের কথা বলেন।
তবে ঠিকাদার শাহাদাত হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ হলে তিনি জানান, কাজত ভালো হচ্ছে। কোথায় সমস্যা বলেন। আপনি উপস্থিত থাকলে স্বচক্ষে দেখানো যেতো কিরকম অনিয়ম হচ্ছে সংবাদকর্মীর এমন কথার প্রেক্ষিতে তিনিও কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। তবে তিনি বলেন, আমি উপস্থিত না থাকলেও উপজেলার লোকজনত আছে, তারা কাজ বুঝে নেবে। সেক্ষেত্রে কাজ খারাপ করারত কোনো সুযোগ দেখছি না।
অনিয়মের বিষয় স্বীকার করে পাটগ্রাম উপজেলা প্রকৌশলী কর্মকর্তা সফিউল ইসলাম রিফাত জানান, কাজের মান খারাপ ছিল। আর কাজের বাকি বিলও এখনো পরিশোধ হয়নি। এই কাজে ঠিকাদারের অনিয়ম করার প্রবণতা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ইটগুলো নিম্নমানের ছিল পরিবর্তনের কথা বলেছি। আর পুরাতন খুঁটি ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই। আমরা ভঙ্গুর খুঁটি ব্যবহারে নিষেধ করলে কয়েকটা খুঁটি সরানো হয়েছে। পরে জানলাম এরপরেও তারা সেখানে একই খুঁটি ব্যবহার করেছে। বিষয়টি আমরা দেখছি।
পরে এবিষয়ে পাটগ্রাম উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান জানান, কাজে অনিয়ম হলে বিল বন্ধ করে দেয়া হবে। এসময় তিনি উপজেলা প্রকৌশলী কর্মকর্তাকে কাজে কঠিন নজরদারির কথা জানালেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চোখ ফাঁকি দিয়েই সেই কাজ অনিয়মের মধ্য দিয়ে শেষ করা হয়েছে। এবং কাজ শেষের মুহুর্তে রাস্তায় কার্পেটিং'র বেলাতেও অনিয়ম করেছে বলে তথ্য পাওয়া যায়।
এবিষয়ে বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার দাশ জানান, কাজের গুণগত মান পরীক্ষা করে দেখার পর যদি তা ঠিক না থাকে তাহলে বকেয়া বিল বন্ধসহ প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Comments