Image description

ঝালকাঠি সরকারি হরচন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৭০০’র বেশি ছাত্রী নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সুপেয় পানির জন্য ট্যাপের ওপর নির্ভরশীল। দূষিত পরিবেশে পানি সংগ্রহের কারণে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। এই অব্যবস্থাপনা নিয়ে অভিভাবক ও সচেতন মহলে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়টি ৭৮ বছরের গৌরব বহন করলেও, অব্যবস্থাপনার কারণে এর পরিবেশ বিপন্ন। ডিপ টিউবওয়েল অকার্যকর হওয়ায় পাম্পের মাধ্যমে পানি ট্যাঙ্কে সংরক্ষণ করে ট্যাপ থেকে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু ট্যাপের চারপাশে পচা শ্যাওলা, জমে থাকা কাদা, ছড়ানো আবর্জনা, স্যাঁতসেঁতে দেওয়াল এবং দুর্গন্ধময় পরিবেশে শিক্ষার্থীদের পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। এই অসহনীয় দুর্গন্ধে দাঁড়ানোই কঠিন, অথচ এখান থেকে প্রতিদিন ১৭০০’র বেশি ছাত্রী পানি পান করছে।

বিদ্যালয়ের পুকুর, যা একসময় শিক্ষার্থীদের আড্ডা ও বিশ্রামের স্থান ছিল, এখন পচা পাতা, প্লাস্টিক ও ময়লায় ভরা মৃতপ্রায় জলাধারে পরিণত হয়েছে। এটি মশা, ব্যাকটেরিয়া ও রোগজীবাণুর উৎস হয়ে উঠেছে। বছরের পর বছর পরিষ্কার না হওয়ায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। এছাড়া, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ভবনের নকশা ভেঙে বারান্দায় কম্পিউটার রুম তৈরির অভিযোগ উঠেছে, যা ভবনের সৌন্দর্য নষ্ট করেছে এবং কাঠামোগত ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

অভিভাবক জহিরুল ইসলাম বলেন, “আমার মেয়ে এই স্কুলে পড়ে। পানি সংগ্রহের পরিবেশ এতটাই নোংরা যে, দাঁড়ানো কঠিন, পান করা তো দূরের কথা। এতে শিক্ষার্থীরা রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।”

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) ঝালকাঠির নেটওয়ার্ক মেম্বার আল আমিন বাকলাই অভিযোগ করেন, “প্রধান শিক্ষক ইচ্ছাকৃতভাবে পুকুরটি অবহেলিত রেখেছেন, সম্ভবত ভবন নির্মাণের পরিকল্পনায়। তিনি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সঙ্গে মিলে পুকুর ভরাটের চেষ্টা করেছিলেন, যা সচেতন মহলের প্রতিবাদে বন্ধ হয়। এছাড়া, তিনি নিজের সুবিধার্থে বারান্দায় কক্ষ তৈরি করেছেন, যা ভবনের সৌন্দর্য নষ্ট করেছে। তার দায়িত্বকালে পঠনপাঠনের মানও কমে গেছে।”

টিআইবি পরিচালিত সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি সত্যবান সেন গুপ্ত বলেন, “এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানের এমন দুরবস্থা দুঃখজনক। সকল সমস্যা দ্রুত সমাধানে প্রশাসন ও সচেতন মহলকে এগিয়ে আসতে হবে।”

প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম বলেন, “ফিল্টারের জন্য শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে আবেদন করব। কম্পিউটার রুমের জন্য বারান্দায় কক্ষ তৈরি করা হয়েছে। নতুন ভবন পেলে সমস্যার সমাধান হবে।”

শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী মো. খাইরুল ইসলাম বলেন, “পানির সমস্যা সমাধানে ফিল্টার স্থাপন ও প্রতিটি ভবনে ট্যাপ স্থাপনের বিষয় বিবেচনা করা হবে। প্রধান শিক্ষকের তৈরি কক্ষে ভবনের কোনো ক্ষতি হবে না।”