Image description

যুক্তরাজ্যের এমপি ও সাবেক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক বলেছেন, ‘সত্যি কথাটা হলো, মুহাম্মদ ইউনূস ও আমার খালার (শেখ হাসিনা) মধ্যে বিরোধের কারণে আমি ক্ষতিগ্রস্ত। বৃহত্তর শক্তির বিরুদ্ধে আমি লড়াই করছি। বাংলাদেশে যে অন্যায় হয়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এবং এর জন্য তাদের শাস্তি পাওয়া উচিত। কিন্তু আমি তাদের কেউ নই।’

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন টিউলিপ সিদ্দিক। গতবছর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিক। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ও মামলার শুনানির বিষয়ে গার্ডিয়ানের সঙ্গে কথা বলেন ৪২ বছর বয়সী এই ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ।

টিউলিপের দাবি, আদালতে হাজির হওয়ার আনুষ্ঠানিক সমন পাননি তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে কী কী অভিযোগ আনা হয়েছে–তা তিনি এখনো জানেন না।

বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযুক্ত করা তথ্যটি মাত্র সপ্তাহখানেক আগে আইনজীবীর মারফতে জেনেছেন বলে দাবি করেন টিউটিপ। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি তাঁর খালা শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগসাজশে প্রভাব খাঁটিয়ে ঢাকার পূর্বাচলে তাঁর মা, ভাই ও বোনের জন্য প্লট নিয়েছেন। বরাবরের মতোই গার্ডিয়ানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, এসব অভিযোগ পুরোপুরি অবাস্তব। 

গার্ডিয়ান বলছে, সোমবার ঢাকার আদালতে টিউলিপসহ আরও ২০ জনের বিরুদ্ধে এই মামলার শুনানি শুরু হবে। সশরীরে বা ভিডিওলিংকের মাধ্যমে তিনি এই শুনানিতে অংশ নেবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি হোগো কিথ কেসির (আইনজীবী) কাছ থেকে আইনি পরামর্শ নিচ্ছি। আমার পরবর্তী পদক্ষেপ কী হওয়া উচিত সেটা তাদের পরামর্শের আলোকে নির্ধারণ করা হবে।’ 

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার জানিয়েছে, প্রয়োজনে টিউলিপের অনুপস্থিতিতেই বিচার চলবে। টিউলিপ দোষী প্রমাণিত হলে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে প্রত্যর্পণ ইস্যু সামনে আসবে। তবে দুর্নীতির অভিযোগের মুখে গত জানুয়ারিতে পদত্যাগ করা এই সাবেক ব্রিটিশ মন্ত্রী বলেন, ‘আমি নিজে খোঁজ নিয়ে দেখেছি, এমন কোনো প্রত্যর্পণ চুক্তি নেই।’ 
  
শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহেনার মেয়ে টিউলিপ গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘আমি তো আমার খালার পক্ষে সাফাই গাইছি না। আমি জানি, কীভাবে তাঁর সরকারের পতন হয়েছে, সে ব্যাপারে তদন্ত চলছে। এবং আমি অবশ্যই আশা করি বাংলাদেশের মানুষ যেটা চেয়েছিল, সেটার ছোঁয়া পাবে।

গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশত্যাগ করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ক্ষমতায় আসেন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হন তিনি। টিউলিপ বলছেন, শেখ হাসিনা সঙ্গে ইউনূসের দ্বন্দ্ব আছে। এটি ‘নোংরা রাজনীতি’ এবং এ কারণে তাঁকে মাথা ঘামাতে হচ্ছে।   

শেখ হাসিনার পতনের পর তাঁর এবং টিউলিপের বিরুদ্ধে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। একটি ছবিকে কেন্দ্র করে এই অভিযোগের পালে হাওয়া লাগে। ছবিতে দেখা যায়, ২০১৩ সালে রাশিয়া সফরের সময় শেখ হাসিনা দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বসে আছেন। তাঁর পাশেই দাঁড়িয়ে আছেন হাস্যোজ্জ্বল টিউলিপ সিদ্দিক। তবে খালার সঙ্গে জড়িয়ে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগকে তিনি ‘নোংরা রাজনীতি’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।

এই ছবির বিষয়ে টিউলিপ বলেন, ‘আমার খালা রাশিয়ায় সরকারি সফরে গিয়েছিলেন। আমি ও আমার বোন লন্ডন থেকে রাশিয়ায় তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমি কোনো রাজনৈতিক আলোচনায় অংশ নিইনি। আমরা ভ্রমণ করেছি, মজা করেছি, রেস্টুরেন্টে গেছি, শপিং করেছি। সফরের শেষ দিনে, সেখানে উপস্থিত সব রাজনীতিবিদদের পরিবারের সদস্যদের চা পানের এক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সেখানে ছবিও তোলা হয়েছিল। আমি দুই মিনিটের জন্য পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলাম।’