Image description

মার্কিন বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্ক ছাড় সংক্রান্ত খবরটি নিয়ে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে।এই ছাড়কে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিএনপি এবং বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর নেতারা।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই খবরকে দেশের জন্য ‘ভালো খবর’ বলে মন্তব্য করেছেন। অন্তর্বর্তী সরকারকে এ জন্য সাধুবাদও জানিয়েছেন তারা। জাতীয় পার্টি এবং এনসিপির একাধিক নেতাও এই খবরকে স্বাগত জানিয়েছেন।

অন্যদিকে, সিপিবি এবং জাতীয় পার্টির কিছু নেতা এই চুক্তি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, এটি কোনো গোপন চুক্তি কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে। তারা দুই দেশের মধ্যকার এই চুক্তি জনসম্মুখে প্রকাশের দাবিও তুলেছেন।

এই ধরনের মিশ্র প্রতিক্রিয়া স্বাভাবিক, কারণ প্রতিটি দলের নিজস্ব দৃষ্টিকোণ এবং রাজনৈতিক অবস্থান থেকে তারা ঘটনাটিকে মূল্যায়ন করে।

শুক্রবার ঢাকার উত্তরায় এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আজ একটা ভালো খবর আছে। কয়েক দিন আগে আপনারা দেখেছেন যে, আমেরিকা আমাদের পণ্যে শুল্ক আরোপ করেছে। ট্যারিফ কী জানেন? আমরা যেসব পণ্য রপ্তানি করব, তার ওপরে ৩৫ শতাংশ ট্যাক্স নিয়ে নিবে। মানে ১০০ টাকার জিনিস, দাম পড়বে ১৩৫ টাকা। ফলে আমাদের জিনিসটা আর বিক্রি হবে না।”

‘‘ওটা আমাদের পররাষ্ট্র দপ্তর ও উপদেষ্টারা আলোচনা করে কমিয়ে ২০ শতাংশ পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন। সেজন্য আমি অন্তর্বর্তী সরকারকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। তারা একটা বড় দায়িত্ব পালন করেছে।”

শুল্ক ছাড়ের ঘটনায় সন্তোষ প্রকাশ করলেও চুক্তিতে কী কী শর্ত আছে, তা প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির আরেক নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

শুক্রবার গুলশানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে দলের স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, “পুরো নেগোসিয়েশনের সার্বিক বিষয়টা তো আমাদের জানা নেই। আমরা শুধু ট্যারিফের বিষয়টা জানি।

“সার্বিক বিষয়টা জানার পরে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে পারব। এর (ট্যারিফ) বিপরীতে আর কী দিতে হয়েছে, সেটা না জানা পর্যন্ত তো এর ইমপেক্টটা কী হবে, সেটা আমরা বলতে পারছি না।”

শুল্কে ছাড় পাওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে আরেক রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগের কারণে শুল্ক হার কমানো সম্ভব হয়েছে বলেও মনে করে দলটি।

শুক্রবার দলের আমির শফিকুর রহমান ফেইসবুক পোস্টে লেখেন, “আলহামদুলিল্লাহ। বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যে উচ্চ ট্যাক্স হার ঘোষণা করা হয়েছিল, বাংলাদেশ সরকারের কার্যকর উদ্যোগ এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আন্তরিকতায় তা কমে ২০ শতাংশে নেমে এসেছে। এজন্য প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ও অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসের সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

“আশা করছি, ভবিষ্যতে মুহাম্মদ ইউনূস এবং পরবর্তীতে যারা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে আসবেন, তারা সম্মানজনক অবস্থান ধরে রেখে বিশ্ব কূটনীতির ময়দানে মর্যাদাপূর্ণ দায়িত্ব পালন করবেন।”

দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় বসার পর গত ২ এপ্রিল শতাধিক দেশের ওপর চড়া হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। বাংলাদেশের ঘাড়ে পড়ে ৩৫ শতাংশ।

পরে দুই দেশের মধ্যে এ নিয়ে আলোচনা চলতে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি অনুযায়ী বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয় বাংলাদেশ।

মার্কিন কোম্পানি বোয়িংয়ের কাছ থেকে ২৫টি উড়োজাহাজ কেনার ঘোষণা আসে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম, সয়াবিন তেল ও তুলা আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। শুল্ক ছাড়ের ঘোষণা আসে ছয় শতাধিক মার্কিন পণ্যে।

এরপর দুই দেশের প্রতিনিধি দলের কয়েক দফা বৈঠকের পর বৃহস্পতিবার শুল্কহার কমিয়ে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনার ঘোষণা দেয় ওয়াশিংটন।

কিন্তু কোন চুক্তির অধীনে যুক্তরাষ্ট্র এই ছাড় দিল, তা জনসম্মুখে প্রকাশ করার দাবি তুলেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহীন হোসেন প্রিন্স।

তিনি বলেন, "ট্রাম্প প্রশাসন যখন এ ধরনের কর বসিয়েছে, তার পর থেকে আমাদের দেশের লোকজন গিয়ে দেন দরবার করছে এবং ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে গোপন চুক্তি করেছে।

"আমেরিকা নাখোশ হয়— এমন কিছু করা যাবে না শুনেছি। যদি এ ধরনের কোনো অসম বা দেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তির মাধ্যমে শুল্ক কমানো হয়, তাহলে সেটা জনগণের প্রকৃত কল্যাণ বয়ে আনবে না।”

বাংলাদেশি পণ্যে শুল্ক ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী। তবে গোপন চুক্তি হয়ে থাকলে সেটা দেশের জন্য ‘অশনি সংকেত’ হিসেবে দেখছেন তিনি।

শুক্রবার তিনি বলেন, "ট্যারিফ ২০ শতাংশ যেটা করা হয়েছে, সেটা আমাদের জন্য সুসংবাদ। কিন্তু কী কী শর্তে করা হয়েছে, সেটা জানার অধিকার আমাদের আছে।

“আমাদের সংবিধানে রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে নন ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট (এনডিএ) করার কোনো সুযোগ নেই। অতীতে এনডিএ দিয়ে কোনো চুক্তি হয়নি।”

তবে জাপার আরেক অংশ মার্কিন শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত রপ্তানি খাতের জন্য ইতিবাচক হিসেবে দেখছে।

শুক্রবার এক যৌথ বিবৃতিতে এ প্রতিক্রিয়া জানান দলের সিনিয়র কো চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো চেয়ারম্যান এবি এম রুহুল আমিন হাওলাদার ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।

তারা বলেন, "যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণ করার সিদ্ধান্তকে জাতীয় পার্টি স্বাগত জানাচ্ছে। এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের জন্য একটি ইতিবাচক এবং আশাব্যঞ্জক পদক্ষেপ। এর ফলে আমাদের দেশের অর্থনীতি ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

"আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে আশা করি, সরকারের পাশাপাশি ব্যবসায়ী সম্প্রদায় সুযোগটি যথাযথভাবে কাজে লাগাবে এবং বাংলাদেশের অর্থনীতিকে বিশ্ব দরবারে আরও দৃঢ় ও সমৃদ্ধ অবস্থানে এগিয়ে নিয়ে যাবে।"

শুল্কে ছাড় পাওয়াকে ‘ইতিবাচক’ হিসেবে দেখছে জাতীয় নাগরিক পার্টি— এনসিপিও।

দলের যুগ্ম সদস্য সচিব আলাউদ্দিন মোহাম্মদ বলেন, “বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করে ৩৭ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশে নামিয়ে আনতে পেরেছে, এটা নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক দিক।

“যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক আলোচনায় এটি প্রাথমিক বিজয়। তবে এ আলোচনা অবশ্যই অব্যাহত রাখতে হবে। কারণ বাংলাদেশের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ও প্রতিযোগী রাষ্ট্রগুলো যদি নতুন করে আরও সুবিধা নিয়ে নেয়, তাহলে সে প্রতিযোগিতা সক্ষমতার জন্য ভালো কিছু হবে না।”

তিনি বলেন, “তবে এ ধরনের শুল্ক আলোচনার ক্ষেত্রে জাতীয় নিরাপত্তা ও জাতীয় স্বার্থের বিষয়টি সবার আগে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কারণ শুল্ক বৃদ্ধি ও হ্রাস সাময়িক বিষয়। রপ্তানির বাজারে নতুন পণ্য যোগ হতে পারে আবার পুরনো পণ্য বাদও যেতে পারে। কিন্তু জাতীয় স্বার্থ ও জাতীয় নিরাপত্তা সবসময় প্রাসঙ্গিক ও প্রয়োজনীয় থাকবে।”