Image description

স্বেচ্ছায় নিজের জীবন কেড়ে নেওয়া বা আত্মহত্যা ইসলাম ধর্মে একটি মহাপাপ এবং আল্লাহর ইচ্ছার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ইসলামে আত্মহত্যাকারীকে দাফন-কাফনের যথোপযুক্ত ব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের দণ্ডবিধির ৩০৯ ধারা অনুসারে আত্মহত্যার চেষ্টা করাও একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। মানুষ যখন জীবনে দুঃখ, কষ্ট, অবহেলা বা নিরাশা অনুভব করে, তখনই আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে চায়।

ইসলাম মনে করে, দুনিয়ার এই ক্ষণস্থায়ী কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে আত্মহত্যার মাধ্যমে যারা জীবন শেষ করতে চায়, তারা আসলে কোনো মুক্তি পায় না। কারণ মৃত্যু জীবনের শেষ নয়, বরং আরেকটি জীবনের শুরু। আল্লাহর বিধান না মানার কারণে সেই জীবনেও তারা শান্তির দেখা পাবে না।

প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা.)-এর জীবনেও অশান্তি ছিল। ইসলাম প্রচার করতে গিয়ে কষ্ট সহ্য করেছেন, তা কোরআন হাদিস, নবীর (সা.) জীবনী পড়লে জানা যাবে। তখন জীবনের কষ্ট আর কষ্ট মনে হবে না।

আত্মহত্যাকে অন্যান্য কবিরা গুনাহ বা বড় পাপসমূহের চেয়েও বেশি ভয়াবহ মনে করা হয়। কারণ এই পাপে আল্লাহর ওপর ভরসাহীনতা এবং তাঁর রহমত থেকে নৈরাশ্য প্রকাশ পায়, যা অবিশ্বাসীদের বৈশিষ্ট্য। আত্মহত্যাকারী এই পাপ থেকে ফিরে আসার বা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার কোনো সুযোগ পায় না।

হাদিসে আত্মহত্যার কঠোর শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজেকে পাহাড়ের ওপর থেকে নিক্ষেপ করে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে যাবে। সেখানে সর্বদা সে ওইভাবে নিজেকে নিক্ষেপ করতে থাকবে অনন্তকাল ধরে। যে ব্যক্তি বিষপান করে আত্মহত্যা করবে, সে তার বিষ তার হাতে থাকবে। জাহান্নামে সর্বদা সে ওইভাবে নিজেকে বিষ খাইয়ে মারতে থাকবে অনন্তকাল ধরে। যে কোনো ধারালো অস্ত্র দিয়ে আত্মহত্যা করেছে, তার কাছে জাহান্নামে সেই ধারালো অস্ত্র থাকবে। সেটি দিয়ে সে নিজের নিজের উদর ছিন্ন করতে থাকবে।’ (মুসলিম, হাদিস: ১০৯)

অন্য এক হাদিসে হাসান বসরি (রহ.) বলেন, জুনদাব (রা.) বলেছেন, এক ব্যক্তির শরীরে জখম ছিল, সে আত্মহত্যা করল। তখন আল্লাহ্ তা‘আলা বললেন, আমার বান্দা তার প্রাণ নিয়ে আমার সাথে তাড়াহুড়া করেছে। আমি তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিলাম। (সহিহ বুখারি: ১৩৬৪)

এই হাদিসগুলো স্পষ্ট করে যে আত্মহত্যা একটি মহাপাপ এবং এর কারণে আখেরাতে কঠোর শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।

ইসলামে নিরাশ হওয়াকে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। আল্লাহ বলেছেন, ‘বলো, হে আমার বান্দাগণ, তোমরা যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছ, আল্লাহর অনুগ্রহের ব্যাপারে নিরাশ হয়ো না। আল্লাহ সমুদয় পাপ ক্ষমা করে দেবেন। তিনি তো ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।’ (সুরা জুমার, আয়াত: ৫৩)।

আল্লাহ আরও বলেন, ‘আর তোমরা নিজেদের হত্যা করো না। আল্লাহ তো তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। এবং আর যে কেউ বিদ্বেষবশত ও অন্যায়ভাবে তা (আত্মহত্যা) করবে, আমি নিশ্চয় তাকে আগুনে পোড়াব, আর এ আল্লাহর পক্ষে সহজসাধ্য।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ২৯-৩০) এবং ‘আর তোমরা নিজেরা নিজেদের সর্বনাশ করো না, আর তোমরা সৎকর্ম করো। আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের কে ভালোবাসেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৯৫)

তবে আলেমদের নির্ভরযোগ্য মত অনুযায়ী, আত্মহত্যাকারী মহাপাপী হলেও কাফের বা চিরস্থায়ী জাহান্নামী নয়। উপরে উল্লিখিত হাদিসগুলো মানুষকে এই মহাপাপে জড়িত হওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করার জন্য বলা হয়েছে। আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাকে কঠোর শাস্তি দিতে পারেন, তবে তিনি যদি দয়া করেন, তাহলে আত্মহত্যাকারী জাহান্নাম থেকে মুক্তিও পেতে পারে।