
ফরিদপুর জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে ঘুষের কারবার প্রকাশেই চলে এমন ভিডিও এখন ভাইরাল। দলিল রেজিস্ট্রি, জেলা ও উপাজেলা পর্যায়ের জমির নকলসহ রেকর্ড রুম থেকে কাগজ পেতে হলে ঘুষ ছাড়া কোন কাজ হয় না এমন অভিযোগ গ্রাহকদের। এছাড়া অনিয়ম দুর্ণীতি করে ভুয়া দলিল তৈরি করার অভিযোগ আছে রেকর্ড হেফাজতখানার কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুষ লেনদেনের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ঘুষ গ্রহনের ভিডিও দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্রমকর্তারা।
১২ সেকেন্ডের ভাইরাল হওয়া ভিডিতে দেখা যায়, ফরিদপুর রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের রেকর্ড রক্ষক মো: মাসুদ আলী মোল্লার টেবিলের সামনে বসা এক ব্যাক্তির নিকট থেকে ঘুষ গ্রহন করে খুশি মনেই প্যান্টের পকেটে ভরে রাখলেন। ভিডিওতে শোনা যায়, আগে দুই হাজার দিছি, এখানে দুই হাজার আছে গুনে নেন, গোনা লাগবে না বলে হাসি মুখে রেখে দেন তিনি। আরো বলেন, আপনি কোন চিন্তা করবেন না, যেভাবে সুন্দর হয় আমি সুন্দর করে কাজ করে দিব।
গোপনে ভিডিও ধারনকারী জেলার ভাঙ্গা পৌর এলাকার বাসিন্দা ভুক্তভোগী আব্দুল মান্নান শেখ বলেন, জেলা রেজিস্ট্রার অফিসে একটি জমির নকল উঠাতে দিনের পর দিন ঘুরার পর টাকা দিয়ে নকল উঠাতে বাধ্য হয়েছি। কয়েক দফায় টাকা দেওয়ার পরও নকল উঠানো নিয়ে ঘুরাতে থাকে রেকর্ড পিকার মাসুদ মোল্লা।
ফরিদপুর জেলা ও সদর সাব রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের জমি রেজিস্ট্রি, মুল দলিল উত্তোলন, বৃহত্তর ফরিদপুরের পাঁচ জেলার বহু পুরাতন দলিলের নকলসহ যেকোন সম্পত্তি হস্তান্তরের সব তথ্য সংগ্রহ ও সরবরাহ করা হয় এই অফিস থেকে। তাই অফিসের গুরুত্বও বেশি। যেকারনে এসকল কাজে বহু মানুষ এই কার্যালয়ের স্মরণাপন্ন হয়ে থাকে। সেই সুযোগে নানা অনিয়মের সাথে জড়িয়ে পড়েছে এখানকার কর্মকর্তা- কর্মচারীরা ।
শরিয়তপুর জেলার জাজিরা এলাকা থেকে আসা ভূক্তভোগী মো: রাজিব মিয়া অভিযোগ করে বলেন, তার এলাকার ১৯৭৬ সালের দলিল মুলে ক্রয় করা জমি আরএসসহ ভোগ দখলে রয়েছি। জামাল নামের একব্যাক্তি ফরিদপুর রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের রেকর্ড রক্ষক মো: মাসুদ আলী মোল্লার সাহায্যে ১৯৬৮ সালের একটি ভুয়া দলিলের নকল তৈরি করে তাদেরকে হয়রানী করছে। রেকর্ড রুমে তালাশী দিলে বলিয়ম বুকে ১৯৬৮ সালের দলিলের কোন ভিত্তি খুজে পাওয়া যায় না। ওই ভুয়া দলিলের কারনে প্রকৃত জমির মালিক হয়েও দ্বারে দ্বারে ঘুরছে বলেও জানান। গত ২৭ আগস্ট ফদিরপুরে দুর্ণীতি দমন কার্যালয়ে মো: রাজিব বাদী হয়ে রেকর্ড কিপার মো: মাসুদ আলী মোল্লার এই দুর্ণীতি ও অপকর্মের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন।
এদিকে ভিডিওতে দেখা প্রকাশ্যে টাকা নেয়ার বিষয় বে-মালুম অস্বীকার করে রেকর্ড রক্ষক মো: মাসুদ আলী মোল্লা বলেন, আমার হাতের মধ্যে জোর করে টাকা দিয়ে গেছে ওই ব্যাক্তি। তিনি তার মত করে একটি রিপোর্ট করে দিতে বলছেন, কিন্তু আমি কাগজপত্র যাচাই করে দিব বলেছি। জেলার ভাঙ্গা উপজেলার মানিকদাহ ইউনিয়নের সাবাই তাকে শাহাবুদ্দিন নামে চিনেন, তার দুটি নাম, ভাল নাম মো: মাসুদ আলী মোল্লা। তিনি ২০০৩ সালে মানিকদাহ ইউনিয়ন পরিষদের মোমবাতি মার্কা নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচন করেছিলেন বলেও জানান। তার বিরুদ্ধে নকল নবীশের চাকুরিতে ভুয়া সনদ জমা দেওয়ার বিষয়টি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবী করেন।
ফেসবুকে আসা ভিডিওতে রেকর্ড কিপার মাসুদের টাকা নেওয়ার দৃশ্য দেখে ৩ কার্য দিবসের ভিতর ব্যাখ্যা দিতে বলেছেন ফরিদপুর সদর সাব রেজিস্ট্রার মিনতী দাস। দোষী সাবস্ত হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন তিনি।
ফরিদপুর জেলা রেজিস্ট্রার মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, ভূয়া সদন দিয়ে রেকর্ড কিপার বা নকল নবীশের চাকুরি প্রাপ্তির বিষয়সহ প্রকাশ্যে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
ফরিদপুর জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি প্রফেসর সুলতান মাহমুদ হীরক বলেন, জেলার নয়টি উপজেলাসহ ৮১টি ইউনিয়ন ভুমি অফিস থেকে ভূমি সংক্রান্ত বহু সেবা নিতে আসা সাধারণ নাগরিক দুর্ণীতি ও হয়রানীমুক্ত সেবা পাবে, এমনটিই প্রত্যাশা করি।
Comments