Image description

বিয়ানীবাজারে বছরের পর বছর অনাবাদি চার হাজার ২শ একর ফসলি জমি। জলাবদ্ধতা, পানি চলাচলের পথ না রেখে অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ, জমির উর্বরতা হ্রাস, প্রবাসমুখিতা ও খাল দখলের কারণে পানি সেচের অভাবে এসব জমি পরিত্যক্ত পড়ে আছে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বিয়ানীবাজারে মোট আবাদি জমির পরিমাণ প্রায় ১৬ হাজার একর। সম্প্রতি কৃষি অফিসের জরিপে দেখা গেছে, নানা কারণে অনাবাদি হয়ে পড়ে আছে উপজেলার চার হাজার ২শ’ একর ফসলি জমি। অনাবাদি এসব জমিতে আগে আমন মৌসুমে ৩-৪ হাজার হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হতো। এ ছাড়া রবিশস্য বা সবজি উৎপাদন হতো অন্তত ২ হাজার মেট্রিক টন।

বিয়ানীবাজার থেকে সদ্য বদলী হয়ে যাওয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. লোকমান হেকিম বলেন, ‘বিস্তীর্ণ ফসিল জমি অনাবাদি থাকার কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রধান কারণ হলো জলাবদ্ধতা। চারখাই-আলীনগর এলাকার বিস্তৃর্ণ জমি জলাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকে। খাল খনন করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করলে চাষের আওতায় আসবে এসব অনাবাদি জমি। অন্য কারণটি হলো কৃষকদের অনীহা। কৃষকরা চাষ করতে না চাইলে তো জমি অনাবাদি থাকবেই। আর প্রধান কারণ হচ্ছে তরুণ-যুবকদের বিদেশমুখিতা।’

সরজমিন দেখা যায়, আবাদযোগ্য কিছু জমি থাকলেও তা খালি পড়ে আছে। কেউ কেউ খালি জমি বালু ভরাট করে রেখেছেন প্লট হিসেবে বিক্রির জন্য। আবার খালি জায়গা ভাড়া দেওয়ার জন্য অনেকে সাইনবোর্ডও ঝুলিয়ে রেখেছেন। কিছু জায়গায় ফেলে রাখা হয়েছে গাছের গুঁড়ি ও বিভিন্ন সরঞ্জাম।

বিয়ানীবাজার পৌরসভাসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ পরিত্যক্ত জমি কচুরিপানা আর আগাছায় ভরপুর। কোনাগ্রামের কৃষক ফজলুল হক বলেন, ‘শত বছর ধরে চাষাবাদের ওপর নির্ভরশীল এলাকার বেশির ভাগ মানুষ। এসব বিলে চাষাবাদ হতো খালের পানি দিয়ে। এখন খালগুলো নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জলাবদ্ধতার কারণে কয়েক বছর ধরে চাষাবাদ বন্ধ।’

তিলপাড়ার কৃষক অমল দে, আমিনুল ইসলাম ও ঝন্টু বলেন, ‘অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ, বাঁধ নির্মাণ, খাল ভরাট করে পানি নিস্কাশনের পথ বন্ধ করে দেওয়ায় গত ১০ বছর ধরে বহু জমি অনাবাদি হয়ে গেছে । আগে এখানে আমন ও বোরো আবাদের পাশাপাশি শীতকালীন প্রচুর শাক সবজি উৎপাদন হতো। 

শেওলা গ্রামের বাসিন্দা আক্তার হোসেন (৩২) জানান, নিজেদের দুই বিঘা জমিসহ কিছু বর্গা জমিতে তাঁর পরিবার বছর দশেক আগেও ধান চাষ করতেন। চাষাবাদের সেই জায়গায় এখন ঘর তোলা হয়েছে। কিছু জমি খালি পড়ে আছে। 

আক্তার হোসেন বলেন, চাষে আর লাভ হয় না। খরচ বেশি, সেই তুলনায় উৎপাদন কম। তা ছাড়া ফসল ফলানোর জন্য পানির ব্যবস্থাও নেই।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম মুস্তাফা মুন্না বলেন, ‘আবাদযোগ্য পতিত জমি আবাদের আওতায় আনতে আমরা নানা পদক্ষেপ নিয়েছি। আবাদের আওতায় আসা জমিতে ভালো ফলন হচ্ছে। আবাদযোগ্য পতিত জমি সিলেটে বেশি। এখানকার অনেক জমির মালিক বিদেশ থাকায় তাঁরা কাউকে চাষাবাদ করতে দিতে ভরসা পান না। তবে পরিবেশ ও প্রাণ-প্রকৃতির জন্য আবাদযোগ্য কিছু জায়গা উন্মুক্ত থাকাও ভালো।’