
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, বাংলাদেশে পাঁচটি প্রধান সমস্যার মধ্যে একটি হলো ন্যায়বিচার সংকট। তিনি বলেন, প্রচলিত আদালত ব্যবস্থার সংস্কার এবং লিগ্যাল এইড কার্যক্রমের মাধ্যমে এই সংকট নিরসন করা সম্ভব। তিনি মনে করেন, পরবর্তী রাজনৈতিক সরকার যদি এই সংস্কারগুলো ধরে রাখে, তাহলে মানুষের জন্য ন্যায়বিচার পাওয়ার অবারিত সুযোগ সৃষ্টি হবে। বুধবার সিলেটে লিগ্যাল এইড বিষয়ক পাইলট প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
লিগ্যাল এইড: মামলার জট কমানোর উপায়
ড. আসিফ নজরুল জানান, সরকার আইন সহায়তা প্রদান (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর মাধ্যমে একটি পাইলট প্রকল্প শুরু করেছে। এই প্রকল্পের আওতায় ১১টি জেলায় লিগ্যাল এইড কার্যক্রম চালু করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, রংপুর, দিনাজপুর, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, কুমিল্লা, নোয়াখালী এবং রাঙামাটি।
তিনি বলেন, এখন থেকে ১১টি নির্দিষ্ট ধরনের মামলা করার আগে লিগ্যাল এইডে যাওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পারিবারিক বিরোধ, যৌতুক, চেকের মামলা, এবং বাড়িভাড়ার মতো বিষয়গুলো। এই সিদ্ধান্তের ফলে মামলার জট অনেকাংশে কমে আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
দ্রুত নিষ্পত্তি: প্রচলিত আদালতে যে বিরোধ নিষ্পত্তিতে পাঁচ বছর লাগে, লিগ্যাল এইডে তা তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে সম্পন্ন হয়।
খরচ ও ভোগান্তি হ্রাস: এই প্রক্রিয়ায় সময় ও খরচ কম লাগে এবং ভোগান্তিও অনেকাংশে কমে যায়।
সন্তুষ্টি: লিগ্যাল এইডে বিরোধ নিষ্পত্তিতে ৯০ শতাংশ মানুষ সন্তুষ্ট থাকে এবং তাদের উচ্চ আদালতে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না।
আইন উপদেষ্টা বলেন, লিগ্যাল এইড ছাড়াও তারা এমন কিছু সংস্কার করেছেন যা বাংলাদেশের ইতিহাসে আগে কখনো হয়নি। দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির জন্য সিভিল ও ক্রিমিনাল আদালতকে পৃথক করা হয়েছে। এছাড়াও, বিচারিক পদ সৃষ্টির ক্ষমতা রাজনৈতিক মন্ত্রীদের হাত থেকে প্রধান বিচারপতির কার্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়েছে, যার ফলে একদিনে সোয়া দুইশ বিচারকের পদ সৃষ্টি করা সম্ভব হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এই ধরনের সংস্কারগুলো দেশের দরিদ্র ও অসহায় মানুষের ন্যায়বিচার ও অধিকার সুরক্ষায় একটি বিশাল সুযোগ তৈরি করবে। অনুষ্ঠানে জার্মান অ্যাম্বাসি ও জিআইজেড-এর প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন এবং প্রকল্পের প্রশংসা করেন।
Comments