Image description

জাতীয় পার্টির (জাপা) নিষিদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে দলটির মধ্যে তীব্র উদ্বেগ দেখা দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সিনিয়র সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজ। তিনি বলেন, এই শঙ্কা শুধু দলের নেতাকর্মীদের মধ্যেই নয়, সরকারও এ নিয়ে চাপের মুখে রয়েছে। সম্প্রতি ভয়েস বাংলা নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে এ বিষয়ে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন তিনি।

মামলার আবেদন ও রাজনৈতিক চাপ

মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা মডেল থানায় বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আখতারুজ্জামান সম্রাট একটি মামলার আবেদন করেন। এতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের ও মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীসহ ১৫০ জনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ গণ অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের ওপর হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা ও গুরুতর জখমের অভিযোগ আনা হয়েছে।

মোস্তফা ফিরোজ বলেন, “জাতীয় পার্টির দুই অংশই এখন তাদের দলকে নিষিদ্ধ করা হতে পারে এই আতঙ্কে ভুগছে। অনেকে মনে করছেন, জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে মামলা হয়তো জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করার আগের ধাপ। এর পরবর্তী ধাপে তাদেরকে হয়তো বলা হবে যে, তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। এবং পরে নির্বাহী আদেশে হয়তো নিষিদ্ধ করা হবে।”

জামায়াতের ভূমিকা ও রাজনৈতিক কৌশল

জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল সোচ্চার হলেও এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামী অন্যতম। তবে, বিএনপি এ বিষয়ে ভিন্ন অবস্থান নিয়েছে। তারা বলছে, নির্বাহী আদেশে কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার পক্ষপাতী তারা নয়।

জামায়াতে ইসলামী কেন জাতীয় পার্টির মতো একটি জাতীয় রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করতে চাইছে? এমন প্রশ্নের জবাবে মোস্তফা ফিরোজ বলেন, “এটার একটা রাজনৈতিক ব্যাখ্যা আছে। কেউ বলছেন যে জামায়াত তার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী রাখতে চাইছে না। পরবর্তী রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যদি জামায়াত নির্বাচন করে, তাহলে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা সংগঠিত হতে পারে জাতীয় পার্টির পতাকাতলে। সেই সম্ভাবনাটা যাতে সম্প্রসারিত হতে না পারে বা বাস্তবায়িত না হতে পারে, সে কারণে জাতীয় পার্টিকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি উঠছে।”

জামায়াতে ইসলামী জাতীয় পার্টিকে ‘আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর’ আখ্যা দিয়ে দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে। এ বিষয়ে মোস্তফা ফিরোজ মনে করেন, জামায়াতের এই দাবির পেছনে রাজনৈতিক কৌশল রয়েছে, যার মাধ্যমে তারা আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীহীন রাজনৈতিক মাঠ তৈরি করতে চায়।

জাতীয় পার্টির উদ্বেগ ও ভবিষ্যৎ

মোস্তফা ফিরোজ আরো বলেন, “মোট কথা, জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধ হতে পারে— এরকম একটা শঙ্কা তাদের মধ্যে দারুণভাবে মাথা চাড়া দিয়েছে। এই দাবিতে যেহেতু কয়েকটা রাজনৈতিক দল মাঠে নেমেছে, সে কারণে তারা চিন্তিত হয়ে পড়েছে। ফলে সামনে নির্বাচন ঘিরে একটি নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরি হচ্ছে, যেখানে যথাসম্ভব প্রতিদ্বন্দ্বী দলকে দূরে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।”

তিনি মনে করেন, এই পরিস্থিতি জাতীয় পার্টির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। সরকারের ওপরও চাপ রয়েছে, কারণ এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব তাদের। আগামী দিনে এই ইস্যুটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কীভাবে প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে সবার দৃষ্টি এখন সরকার ও জামায়াতের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে।