নির্বাচন না হলে গৃহযুদ্ধের ঝুঁকি, উপদেষ্টাদের নিরাপত্তার জন্য নির্বাচন অপরিহার্য: ডা. সায়ন্থ

চিকিৎসক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. সাখাওয়াত হোসেন সায়ন্থ বলেছেন, দেশের গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে, অর্থনৈতিক অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে এবং উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের নিরাপদে দায়িত্ব থেকে সরে আসতে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। তিনি সতর্ক করে বলেন, নির্বাচন না হলে দেশে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, যা ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীর উত্থানের সুযোগ করে দেবে এবং গৃহযুদ্ধের ঝুঁকি সৃষ্টি করবে। সম্প্রতি এক টেলিভিশন টক শোতে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. সায়ন্থ বলেন, “যদি এই দেশকে রক্ষা করতে চায়, গণতন্ত্রের উত্তরণ সুসংহত করতে চায়, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা নিজেরা নিরাপদে এক্সিট করতে চান, দেশে গৃহযুদ্ধ এড়াতে চান এবং অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নিতে চান—তাহলে নির্বাচন হতেই হবে।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, সরকারের তরফ থেকে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে এতদূর এগিয়ে আসার পর যদি নির্বাচন না হয়, তবে তা একটি অস্বাভাবিক অবস্থা হবে, যা দেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
তিনি আরও বলেন, “এই ধরনের অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হলে ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠী সুযোগ নেবে। এই পরিস্থিতি সরকার বনাম কোনো রাজনৈতিক দল বা দলগুলোর মধ্যে সংঘাতের জন্ম দেবে, যা কেবল ঘরের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। গৃহযুদ্ধ হলে তা গৃহের ভেতরে সীমিত থাকবে না, বরং গৃহে গৃহে ছড়িয়ে পড়বে। এতে মধ্যবর্তী স্থান আর নিরাপদ থাকবে না।”
ডা. সায়ন্থ সতর্ক করে বলেন, “এই অবস্থায় যে ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠী এখন চুপচাপ ঘাপটি মেরে আছে, তারা সক্রিয় হয়ে উঠবে। তাদের নেত্রী এজন্য স্ক্রিপ্ট তৈরি করে রেখেছেন। তারা মাঠে নামলে গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক গোষ্ঠী, যারা এই সরকার গঠন করে নেতৃত্ব দিয়েছে, তারা কেউই নিরাপদ থাকবে না।” তিনি উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলেন, “নিজেদের নিরাপত্তার জন্য হলেও নির্বাচন আয়োজন করতে হবে, কারণ ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠী তাদের আস্ত রাখবে না।”
প্রধান উপদেষ্টার উচ্চাকাঙ্ক্ষার কথা উল্লেখ করে ডা. সায়ন্থ বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বকে ‘থ্রি জিরো’ লক্ষ্যে নিয়ে যেতে চান। তিনি দারিদ্র্য দূর করতে এবং বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চান, যা নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী হিসেবে তার লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই উচ্চাকাঙ্ক্ষা অন্যায় নয়। তবে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার সঙ্গে তিনি আলংকারিক কিছু শব্দ যোগ করেছেন, যেমন ‘যদি’ বা ‘কিন্তু’। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে এবং হতেই হবে—কোনো বিকল্প নেই।”
তিনি উপসংহারে বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমেই দেশে স্থিতিশীলতা এবং গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করা সম্ভব। নির্বাচন বিলম্বিত বা বাতিল হলে দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়বে, যা কেবল সরকার বা রাজনৈতিক দল নয়, সাধারণ মানুষের জন্যও ক্ষতিকর হবে।
Comments