Image description

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে ভোট কারচুপি ও নানা অনিয়মের অভিযোগের মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৫টায় ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। নির্বাচন কমিশন কার্যালয় জানিয়েছে, সন্ধ্যা ৭টায় ভোট গণনা শুরু হবে। তবে, দিনভর নানা অব্যবস্থাপনা ও অভিযোগে উত্তপ্ত ছিল নির্বাচনী পরিবেশ।

ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল এবং বামপন্থীদের ‘সংশপ্তক’ প্যানেল ভোট কারচুপির অভিযোগে বিকেলে নির্বাচন বর্জন করে। ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেলও অভিযোগ তুলেছে, নির্বাচনে একটি পক্ষকে জিতিয়ে দেওয়ার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ৩টায় মওলানা ভাসানী হলের সামনে সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদল তাদের বর্জনের সিদ্ধান্ত জানায়।

ছাত্রদলের বিবৃতিতে বলা হয়, “আমরা সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চেয়েছিলাম, কিন্তু ভোটগ্রহণের সময় বিভিন্ন অসঙ্গতি আমাদের হতাশ করেছে। প্রশাসন ফ্যাসিবাদী কায়দায় আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করছে।” তাদের অভিযোগের মধ্যে রয়েছে: ক) পোলিং এজেন্টদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে বাধা। খ) প্রার্থীদের ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনের অনুমতি না দেওয়া। গ) শিবির সমর্থিত প্যানেলের নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করে লিফলেট বিতরণ। ঘ) বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে জাল ভোট ও ভিপি প্রার্থীকে হেনস্থা। ঙ) কিছু কেন্দ্রে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে ভোট কারচুপির সুযোগ। চ) ভোটার সংখ্যার তুলনায় বুথ কম থাকায় ভোটারদের ভোগান্তি। ছ) অমোচনীয় কালি ব্যবহার না করায় একই ব্যক্তির একাধিক ভোট প্রদান। জ) ভোটার তালিকায় ছবি না থাকায় ভোটের অপব্যবহার। ঝ) কাজী নজরুল ইসলাম হলে তিনজন কার্যকরী সদস্যের পরিবর্তে ব্যালটে একজনের নাম।

এছাড়া, ব্যালট পেপার ছাপানো নিয়ে বিতর্ক উঠেছে। ছাত্রদল দাবি করেছে, ব্যালট জামায়াতের প্রতিষ্ঠানে ছাপানো হয়েছে, যদিও শিবির সমর্থিত ভিপি প্রার্থী দাবি করেন, ব্যালট ছাপা হয়েছে বিএনপি সমর্থকের প্রতিষ্ঠানে।

অনিয়মের অভিযোগে অন্তত তিনজন শিক্ষক ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। তারা দাবি করেন, পুরো প্রক্রিয়া রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও কারচুপির জন্য পূর্বপরিকল্পিত।

শহীদ রফিক-জব্বার হলের এক আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, “আমি ২০ মিনিট লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিতে গিয়ে দেখি আমার ভোট আগেই অন্য কেউ দিয়ে গেছে। জীবনের প্রথম ভোট এভাবে নষ্ট হবে, আমি কোনোদিন ভাবিনি।” ওই হলের পোলিং অফিসার মো. জাকির হোসেন জানান, “সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, রবিউল নামে এক শিক্ষার্থীর ভোট দুপুর আড়াইটার দিকে ভুয়া আইডি কার্ড ব্যবহার করে অন্য কেউ দিয়েছে। বিষয়টি কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়েছে।”

নির্বাচনে ২১টি হলের ২২৪টি বুথে সকাল ৯টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। মোট ১১,৯১৯ জন ভোটারের মধ্যে ২৫টি পদে ১৭৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। ছাত্রদল, শিবির, বাম সংগঠন, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদসহ আটটি প্যানেল নির্বাচনে অংশ নেয়। উল্লেখ্য, ১৯৯২ সালে সর্বশেষ জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখনও অনিয়মের অভিযোগে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।