
ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদের প্রার্থিতা বাতিলের জন্য হাইকোর্টে রিট করা ‘অপরাজেয় ৭১, অদম্য-২৪’ প্যানেলের মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী বিএম ফাহমিদা আলমকে গণধর্ষণের হুমকি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ সেশনের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আলি হুসেন। তিনি শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের একজন আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, ফরহাদের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে ফাহমিদার করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবারের ডাকসু স্থগিতের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালত সেই স্থগিতাদেশ স্থগিতের নির্দেশ দিয়ে নির্বাচন প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়ার আদেশ দেন।
তবে ডাকসু নির্বাচন স্থগিতাদেশ আসার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। ছাত্রদল, ছাত্র অধিকার পরিষদের মতো ছাত্রসংগঠনগুলো মিছিল নিয়ে বের হয়, ভিসির বাসা ঘেরাও এবং স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস। এমন পরিস্থিতির জন্য ফাহমিদাকে দায়ী করে তাকে গণধর্ষণের দাবি করে ফেসবুকে পোস্ট করেন আলি হুসেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফাহমিদার ছবি পোস্ট করে হুসেন লেখেন, ‘হাইকোর্টের বিপক্ষে আন্দোলন না করে আগে একে গণধর্ষণের পদযাত্রা করা উচিত। (কেউ এইসব শব্দচয়ন দেখে সুশীল হইয়েন না, যে একে সাপোর্ট করবে উপরের কথাটা তার জন্যও প্রযোজ্য।’
আলি হুসেন নামের সেই ফেসবুক আইডিটি বর্তমানে ডিএক্টিভেট আছে।
হুসেনের সতীর্থদের কাছ থেকে জানা গেছে, আইডিটি তিনি নিজেই চালান। এ প্রসঙ্গে হুসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে একাধিকবার মুঠোফোনে তাকে কল করলে নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়।
অভিযোগ উঠেছে, আলি হুসেন নামে ওই শিক্ষার্থী নাকি ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মী। তবে শিবির সমর্থিত ঐক্যজোট প্যানেলের ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েম বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। একই প্যানেলের জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদও তার শাস্তি দাবি করেছেন।
ফেসবুকে পোস্ট করে তিনি লেখেন, ‘রাজনৈতিক এবং আদর্শিক মতবিরোধ থাকবে কিন্তু সেটাকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে নিয়ে গিয়ে কাউকে আক্রমণ করা বা ধর্ষণের হুমকি দেয়া জঘন্য অপরাধ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ থাকবে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হুসেনের এই কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করেছেন তারই বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক সামিনা লুৎফা।
ফেসবুকের এক পোস্টে তিনি লিখেন, ‘আপনার অপছন্দ হলেও ফাহমিদার অধিকার আছে রিট করার। কিন্তু সেজন্য তাকে গণধর্ষণের হুমকি দেয়ার অধিকার নেই আলি হুসেনের। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক। তবে সেটাও হতে হবে ডিউ প্রসেসে। এটা সুশীলগিরি হলে আমি সুশীল! লাউড এন্ড ক্লিয়ার!’
তিনি আরও লেখেন, ‘কোনো নারীর মত প্রকাশের ধরন পছন্দ না হলেই তার উপরে যে আক্রমণ শুরু হয় তার একটা অন্যতম অংশ আসে বটলীগ আর আল বটর বাহিনী থেকে। আর আসে আফসোস লীগ আর জাশি থেকে। এরা মানুষকে নোংরা গালাগাল করতে এবং হুমকি দিতে ওস্তাদ। সকালে খাই লীগারদের থ্রেট আর সন্ধ্যায় জাশির। নিজের ছাত্রকে নিয়ে আর কী লিখবো। সে সুশীলগিরি দেখাতে না করেছে সেই সুশীলগিরিই দেখাইলাম।’
এই অধ্যাপক লেখেন, ‘সে বলেছে ফাহমিদাকে যে সাপোর্ট করবে তাদের জন্যও সে একই দাওয়াই প্রস্তাব করছে। যারা আলি হুসেনের মতামতে বিশ্বাস করেন এবং সমাজবিজ্ঞান পড়েও মনে করেন যে কোনো মানুষকে গণধর্ষণের হুমকি দেয়া যায় অকাতরে তারা আর আমার ক্লাসে বসার চেষ্টা করবেন না। আমি আপনাদের পড়াবো না।’
Comments