
কুষ্টিয়া প্রেস ক্লাবে স্থাপিত বিএনপির অভিযোগ বক্সে এবার আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে দখল-চাঁদাবাজি অভিযোগ পড়েছে। বিএনপির এই অভিযোগ বাক্সে চলতি সপ্তাহে ৯টি অভিযোগ জমা পড়ে। বিএনপি, আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে দখল-চাঁদাবাজি ছাড়াও কুষ্টিয়া পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি, ট্রাক ইউনিয়নের নামে চাঁদাবাজি, নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ তুলে এসব অভিযোগ করা হয়।
রবিবার (২৪ আগস্ট) বেলা ১১টায় তৃতীয় বারের মতো কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির স্থাপিত অভিযোগ বাক্স খোলা হয়। এসময় জেলা বিএনপির সদস্যসচিব ইঞ্জিনিয়ার জাকির হোসেন সরকার, কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আব্দুল মুঈদ বাবুল, প্রেস ক্লাবের সভাপতি আল মামুন সাগর, সেক্রেটারি আবু মনি জুবায়েদ রিপন, সিনিয়র সহ-সভাপতি লুৎফর রহমান কুমার, দৈনিক খবরওয়ালার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুন্সি শাহিন আহমেদ জুয়েল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কুষ্টিয়া পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাহামুদ রেজা চৌধুরী বুলবুলের বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগ জমা পড়েছে। তার মধ্যে একটি অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, মাহামুদ রেজা এক সময়ের ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠা আসা এবং কুষ্টিয়া পৌরসভার তৎকালীন মেয়র আনোয়ার আলীর ডান হাত এবং তার ছেলে পারভেজ আনোয়ারের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হওয়ার সুবাদে তিনি অফিস সহকারী পদ থেকে এক লাফে পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদ বাগিয়ে নেন। এরপর কুষ্টিয়া পৌরসভাতে তিনি দুর্নীতির বরপুত্র হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে রাম রাজত্ব কায়েম করেন। পৌরসভার মিউনিসিপ্যাল বাজারে দোকান বরাদ্দ থেকে শুরু করে নিয়োগ বাণিজ্য করে অনেক অসহায় পরিবারের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে তাদের নিঃস্ব করেছেন।
অপর একটি অভিযোগপত্রে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ তুলে এক নারী উল্লেখ করেছেন, মাহামুদ রেজা চৌধুরী আমার কাছে থেকে চাকরির দোহাই দিয়ে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা গ্রহণ করেছে। পৌরসভায় কাজে যোগদানের পর জানতে পারলাম আমার সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। আমি অসহায় গরীব দুখী মানুষ। ধার কর্য করে টাকা গুলো জোগাড় করে তাকে দেই। ওই টাকা ফেরত না পেলে আমার মৃত্যু ছাড়া কোনো পথ থাকবে না।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে কুষ্টিয়া পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাহামুদ রেজা চৌধুরী বুলবুল বলেন, আমি অনিয়ম দুর্নীতি করি না। কারোর কাছে থেকে কোনো ঘুস নিইনি। আমার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
কুষ্টিয়া জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি আল আমিন রানা, আওয়ামী লীগের নেতা ডা. আমিনুল ইসলাম রতন ও ব্যবসায়ী মনির হোসেনের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ করেছেন।
তিনি অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন, কুষ্টিয়া এন এস রোড সংলগ্ন আমার একটি জমি জোরপূর্বকভাবে দখল করে রেখেছেন ডা. আমিনুল ইসলাম রতন ও মনির। বিগত দিনে তাদের জমিটি ছেড়ে দেওয়ার কথা বললেও তারা আমাকে হানিফের ভাই আতার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু আমি তার সঙ্গে যোগাযোগ করিনি। আমার জায়গাটা উদ্ধার করে আমাকে বুঝিয়ে দেওয়া হোক।
অন্যান্য অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সম্মেলন দ্রুত সম্পন্নের আবেদন। জিলাপিতলা, হাসিমপুর, হরিপুরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে তমিজ উদ্দিন মার্কেটে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে এক বিএনপি নেতা ও তার কর্মীদের বিরুদ্ধে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তারা। এছাড়াও খাজানগরে ট্রাক ইউনিয়নের নামে চাঁদাবাজির অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সদস্যসচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার বলেন, কুষ্টিয়া প্রেস ক্লাবের স্থাপিত অভিযোগ বক্সে জমা পড়া প্রতিটি অভিযোগ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখা হয়। সেই সঙ্গে প্রতিটি অভিযোগ নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে দেখা হয় এবং অভিযুক্তের কাছে উক্ত অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণসহ অভিযুক্ত ব্যক্তিকে সতর্ক করে দেওয়া হয়।
এর আগে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য আল আমিন রানা কানাই-এর বিরুদ্ধে উত্থাপিত বেনামি অভিযোগগুলো গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতিতে তদন্ত করে দেখা গেছে অভিযোগগুলো সঠিক নয়। প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে অভিযোগগুলো করা হয়েছে বলে প্রতিমান হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২১ জুলাই কুষ্টিয়ায় দলীয় নেতাকর্মীদের বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপের বিষয়ে জানতে ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অভিযোগ বাক্স স্থাপন করে জেলা বিএনপি। নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের নিচে ফটকের পাশে এটি স্থাপন করেন বিএনপির কুষ্টিয়া জেলা শাখার আহ্বায়ক কুতুব উদ্দিন আহমেদ ও সদস্যসচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার।
Comments