Image description

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার কাঞ্চননগর ইউনিয়নের চেঙ্গারমুখ ব্রিজ এলাকায় শুক্রবার (২২ আগস্ট) ভোরে কিশোর রিহান উদ্দিন মাহিনকে (১৫) মব লিঞ্চিংয়ে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় মাহিনের দুই বন্ধু মোহাম্মদ মানিক ও মোহাম্মদ রাহাত গুরুতর আহত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। নিহত মাহিনের মা খাদিজা বেগম বলেন, “খুনিদের ফাঁসিতে না ঝোলালে আমি ও আমার স্বামী জজের সামনে বিষপান করে আত্মহত্যা করবো।”

ঘটনার বিবরণ
নিহত মাহিন কাঞ্চননগর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাগর মোহাম্মদ তালুকদার বাড়ির মোহাম্মদ লোকমানের ছেলে। তার বাবা একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। আহত মানিক ও রাহাত একই ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মাইজপাড়ার মাতব্বর বাড়ির বাসিন্দা। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার ভ্রমণ শেষে বৃহস্পতিবার রাতে তিন বন্ধু সিএনজি অটোরিকশায় চট্টগ্রাম থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। ভোরে কাঞ্চননগরে পৌঁছলে কতিপয় প্রতিবেশী তাদের চোর সন্দেহে ধাওয়া করে। প্রাণভয়ে তারা একটি নির্মাণাধীন ভবনের ছাদে আশ্রয় নেয়। কিন্তু সেখান থেকে তাদের জোরপূর্বক নামিয়ে চেঙ্গারমুখ ব্রিজে রশি দিয়ে বেঁধে ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত এলোপাতাড়ি পেটানো হয়। এতে মাহিন মারা যান, এবং মানিক ও রাহাত গুরুতর আহত হন।

মাহিনের বাবা মোহাম্মদ লোকমান বলেন, “আমার ছেলে ও তার বন্ধুদের ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত পেটানো হয়। মাহিন পানি চাইলেও তাকে পানি দেওয়া হয়নি। আমি বাঁচাতে গেলে আমাকেও মারধর করা হয়। চোখের সামনে আমার ছেলের মৃত্যু হয়েছে।”

জানাজা ও মামলা
শুক্রবার রাত সোয়া ৮টায় ভোলা গাজী জামে মসজিদ মাঠে মাহিনের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় অংশ নেওয়া মুসল্লিরা দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানান। পরে মাহিনকে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়। মাহিনের মা খাদিজা বেগম বাদী হয়ে ফটিকছড়ি থানায় ৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরো ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

প্রশাসনের পদক্ষেপ
ফটিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নুর আহমদ জানান, ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ তাৎক্ষণিক তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। তিনি বলেন, “নিহত, আহত ও আসামিরা একই এলাকার পরিচিত মুখ। কী কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। দোষীরা ছাড় পাবে না।”

ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক চৌধুরী ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) নজরুল ইসলাম শুক্রবার বিকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ইউএনও বলেন, “দোষীদের ছাড় দেওয়া হবে না। দুজন গ্রেপ্তার হয়েছেন, বাকিদেরও খুঁজে বের করা হবে। রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে আছে।”

স্থানীয় প্রতিক্রিয়া
কাঞ্চননগর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুল কাদের বলেন, “এই হৃদয়বিদারক ঘটনায় ফটিকছড়ি শোকস্তব্ধ। চোর সন্দেহে পেটানো হলেও আসল কারণ খুঁজে বের করা জরুরি।” নিহতের মা খাদিজা বেগম অভিযোগ করেন, মাইজপাড়ার কিছু ব্যক্তির সঙ্গে মাহিনের বন্ধুত্ব সহ্য করতে না পেরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।