নবীনগরে অস্ত্রের মহড়ায় অবৈধ বালু ব্যবসা, ভাঙনের মুখে ফসলি জমি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে মেঘনা নদী এখন অবৈধ অস্ত্রের মহড়া ও বালু সন্ত্রাসীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। নদীর তীরবর্তী চরলাপাং, মানিকনগর, সাহেবনগরসহ অসংখ্য গ্রামে রাতদিন শতাধিক খননযন্ত্রের গর্জনে স্থানীয়দের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এতে ফসলি জমি, মসজিদ-মাদ্রাসা ও শত শত ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
গত ১০ আগস্ট বিকেলের এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা এই আতঙ্ককে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সোনারগাঁও থেকে সলিমগঞ্জের গণিশাহ মাজারে ওরশে অংশ নিতে যাওয়া একটি ট্রলার দড়াভাঙ্গা এলাকায় বালুবোঝাই একটি বুলড্রেজারের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে ডুবে যায়। এ দুর্ঘটনায় আশরাফ উদ্দিন (৪৪) নামে এক ব্যক্তি প্রাণ হারান।
সরকারি নথি অনুযায়ী, নাসিরাবাদ বালুমহাল ২০২৫ সালের জন্য ৮ কোটি ৯৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকায় ইজারা পেয়েছে মেসার্স সামিউল ট্রেডার্স। কিন্তু ইজারাদার সরকারি নিয়ম মানছেন না। বরং রাতের অন্ধকারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলছে। এই বালু ব্যবসার সঙ্গে স্থানীয় ও পার্শ্ববর্তী উপজেলার শতাধিক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা-কর্মী জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, এই বালুমহালকে ঘিরে চলে সশস্ত্র পাহারা। কেউ প্রতিবাদ করলেই তার জীবন হুমকির মুখে পড়ে। সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা মেহেদি হাসান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এখনই ঐক্যবদ্ধ না হলে চরলাপাং, মানিকনগরসহ আশপাশের গ্রামগুলো মানচিত্র থেকে মুছে যাবে।
অভিযোগ অস্বীকার করে ইজারাদার শাখাওয়াত হোসেন বলেন, তারা সরকারি নিয়ম মেনেই কাজ করছেন। তিনি দাবি করেন, অস্ত্র মহড়া বা রাতে বালু উত্তোলনের অভিযোগ সঠিক নয়।
নবীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজীব চৌধুরী জানান, বালুমহালের অবৈধ কর্মকাণ্ড নিয়ে তার কাছে একাধিক অভিযোগ এসেছে এবং বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, বালুমহালে প্রায়ই গোলাগুলির ঘটনা ঘটে বলে সেখানে অভিযান পরিচালনা করা জটিল। তবে খুব শিগগিরই যৌথ বাহিনীর মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম বলেন, নিয়ম ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Comments