Image description

নির্বাচন নিয়ে নানান শঙ্কা প্রকাশ ও দোদুল্যমানতা আর গুজব পেরিয়ে অবশেষে নির্বাচনের নির্ধারিত সময় ঘোষণা করলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার ভাষণে বলেছেন, জুলাই ঘোষণাপত্র এবং নির্বাচন কমিশনের তৎপরতা মিলিয়ে নির্বাচন নিয়ে আর সংশয়ের কিছু নেই। 

নির্বাচনের কেবল দিনক্ষণ বা তারিখ ঘোষণা বাকি। কিন্তু নির্বাচনের কোনা সুনির্দিষ্ট তারিখ দেননি তিনি। তাতে নির্বাচন নিয়ে সংশয় কি দূর হলো? তরপরও সংশয় প্রকাশে বাধা নেই। নির্বাচন আসলে হবে তো? এ প্রশ্ন করার অধিকারে কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি। বিজয় বেহাত হওয়ার শঙ্কা করতেও বাধা নেই। এ বাস্তবতাতেই এখন বাংলাদেশে। 

যদিও আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন। সিইসি বলেছিলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে আগামী জাতীয় নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলেও, নির্বাচন ঘনিয়ে এলে পরিস্থিতি উন্নতি হবে। এ এম এম নাসির উদ্দীন আরো বলেন, যখন একটি দেশে রাষ্ট্র, সরকার ও দল এক হয়ে যায়, তখন সবকিছু একসঙ্গে ধসে পড়ে। নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা নষ্ট হয়ে গেছে। মানুষকে ভোটকেন্দ্রে আনাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভ্রান্তি সৃষ্টির বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হচ্ছে, যা মোকাবিলায় কমিশন কাজ করছে। 

তিনি বলেন, গত নির্বাচনে যেসব প্রিজাইডিং অফিসার সমস্যার সৃষ্টি করেছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা আগামী নির্বাচনে কারও পক্ষে বা বিপক্ষে কাজ করব না, ১৮ কোটি মানুষের হয়ে কাজ করব। ভোট দেয়া যেমন নাগরিক দায়িত্ব, তেমনই ঈমানি দায়িত্বও। 

তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন, আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন স্বচ্ছ ও সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য নির্বাচন কমিশন সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। এরপরও মহলবিশেষ আবারও বিজয়ের সুফল বেহাত করার ইঙ্গিত পাচ্ছেন। নানান কারণে সন্দেহ-সংশয় এ অবস্থায় এসে ঠেকেছে। এর অবসান না পর্যন্ত আসলেই রাজনৈতিক সংকট নিরসনের রাস্তা নেই। প্রশ্নের পর প্রশ্নের দুয়ারও খোলা।

জুলাই ঘোষণাপত্রের ২৫ ও ২৭ অনুচ্ছেদে আগামী জাতীয় সংসদের ওপর সংবিধান সংস্কারের দায়-দায়িত্ব ছেড়ে দেয়ার মাঝে গোলমাল দেখছেন প্রশ্নকর্তারা। কিন্তু সংসদ ছাড়া এ দায়িত্ব কার কাছে ছাড়া যেত, তাও বলতে পারছেন না তারা। কোনো জায়গা বা পদ্ধতি আবিষ্কার না করে প্রশ্ন ছোড়ার মাঝে চিকন বুদ্ধির পরিচয় মেলে, সাবলীলতা মেলে না। 

সংবিধান সংস্কারের জায়গা অবশ্যই পরবর্তী সংসদ। ফরেন সার্ভিস একাডেমি বা যমুনা সেই জায়গা নয়। সেই ব্যবস্থা করতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের চিঠির প্রেক্ষিতে ভোটের প্রস্তুতি এগিয়ে নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। আর এ চিঠির মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজন করতে সরকারের পক্ষ থেকে ইসিকে অনুরোধের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলো। তারিখ ঘোষণা প্রধান উপদেষ্টার কাজ নয়, নির্বাচন কমিশনের কাজ। এর আগে বিভিন্ন ধরনের ‘চ্যালেঞ্জ’ থাকলেও আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনে নিজেদের প্রস্তুতি এগিয়ে নিচ্ছে বলে জানিয়েছিল নির্বাচন কমিশন-ইসি। 

ভোটার তালিকা, সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, নির্বাচনী সামগ্রী কেনাকাটার মতো বড় কাজগুলো আগামী মাসের মধ্যে শেষ করতে চায় ইসি। এসবের বেশ কিছু কাজ এরইমধ্যে হয়ে গেছে প্রায়। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পরদিনই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মপরিকল্পনা বিষয়ে বৈঠক করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, নির্বাচনের আগে এসপি-ওসিদের লটারির মাধ্যমে পদায়ন করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ও নির্বাচনী খরচের বন্দোবস্ত করে রেখেছে। 

নির্বাচনমুখী দলগুলো কিসের অপেক্ষা করছিল তা গত কদিনের নমুনাতেই স্পষ্ট। তারা চাচ্ছিল একটা ঘোষণা। প্রধান উপদেষ্টার এক ভাষণে কেবল ঘোষণা মেলেনি, জুলাই আন্দোলনকারীদের সম্মান-নিরাপত্তার বিষয়ও এসেছে। নির্বাচন আয়োজনের জন্য বড় কাজগুলোর মধ্যে বাকি আছে ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করা, সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ, প্রয়োজনীয় কেনাকাটা, কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন ইত্যাদি। এগুলো আগামী মাসের মধ্যে শেষ করা কঠিন নয়। এ মাসের মধ্যে ভোটার তালিকা (বাদ পড়া ভোটার অন্তর্ভুক্তি ও মৃত ভোটারের নাম কর্তন) চূড়ান্ত হবে। 

ভোটার তালিকা আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি হয়েই আছে। তরুণ ভোটারদের অন্তর্ভুক্ত করতে ভোটের আগে একটি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়া হবে। ওই সময়ের মধ্যে যারা ভোটার হওয়ার উপযুক্ত হবেন, তারা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের খসড়াও প্রকাশ করা হয়েছে। ১০ আগস্ট পর্যন্ত দাবি আপত্তি নেয়া হবে। এরপর শুনানি করে সীমানা নির্ধারণ চূড়ান্ত করা হবে। ভোটের জন্য প্রয়োজনীয় কেনাকাটাও চলছে। নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তাহলে আর বাকি বা অবশিষ্ট থাকে কী? 

অবশিষ্ট বলতে নির্বাচন কমিশনের ওপর মানুষের আস্থা সৃষ্টি করা, ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করা। এআইয়ের অপব্যবহার রোধ করা এবার বাড়তি চ্যালেঞ্জ। এসবের বাইরে নির্বাচনের প্রস্তুতির মধ্যে আছে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, ভোটকেন্দ্র স্থাপন, ব্যালট পেপার ছাপানোর মতো কিছু রুটিন কার্যক্রম। প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ চলছে। সাধারণত তফসিল ঘোষণার পর এ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। ব্যালট পেপার ছাপা হয় তফসিল ঘোষণা ও প্রতীক বরাদ্দের পর। আর ভোটকেন্দ্র স্থাপনের জন্য ইতোমধ্যে নীতিমালা সংশোধন করেছে ইসি। সাধারণত যেসব প্রতিষ্ঠান ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে, সেগুলোই কেন্দ্র হিসেবে রাখা হবে। ভোটের কিছুদিন আগে ভোটকেন্দ্র চূড়ান্ত করে গেজেট প্রকাশ করা হবে।

এর পরও সংশয় না কাটার কিছু কারণ অবশ্যই রয়েছে। সংশয় এবং প্রশ্ন বাস্তব নানা কারণেই। আবার প্রশ্নের ঘুরপাকে থাকলে নির্বাচন, সংস্কার, বিচার, অর্থনীতিসহ  বিভিন্ন বিষয়ে আলোকপাত করা প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের মানে থাকে না। সেদিন অতি জরুরি ছিল ভাষণটি। যেখানে তিনি তার কিছু উচ্চাশার কথা জানিয়েছেন, আবার নির্বাচনমুখী দলগুলোর জন্য ঈদের চাঁদ দেখার মতো বার্তাও দিয়েছেন। ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে ভাষণটিতে তিনি আশা করেছেন, ঐকমত্যের ভিত্তিতে অচিরেই রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে এবং এর বাস্তবায়নেও ঐকমত্যে পৌঁছাবে। 

দাবি করেছেন, ‘জাতীয় জীবনে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে, অর্থনীতিতে গতিশীলতা এসেছে, সংকট দূর হয়েছে। তাই অন্তর্বর্তী সরকার এখন থেকে একটি নির্বাচিত সরকারের হাতে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব তুলে দেয়ার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। মানে নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে। সঙ্গে আবার এ কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, একটা গোষ্ঠী নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে উন্মুখ হয়ে আছে। তারা দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে দেশের বাইরে বসে এবং ভেতরে থেকে নানা অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। 

স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টার এমন উপলব্ধি ও বার্তার পর মানুষের মধ্যে নানা প্রশ্ন ও সংশয় অমূলক নয়। এতদিন ফেব্রুয়ারির শুরুতে অথবা এপ্রিলে নির্বাচন আয়োজনের কথা বলা হয়েছিল। সেদিনের ভাষণে সরল ভাষায় জানিয়েছেন, নির্বাচনটি হবে রমজানের আগে। সেই টাইমফ্রেমে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্বাচনের জন্য মানসিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক প্রস্তুতির কথাও বলেছেন। 

তিনি দাবি করেন, ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে ইতিহাসের কলঙ্কিত কোনো অধ্যায়ের পুনরাবৃত্তি করতে চায় না তার সরকার। দেশের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত যতগুলো বড় সংঘাত, সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে তার সবগুলোর নেপথ্যে কারণ ছিল ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন। নির্বাচনী ইশতেহার থেকে নারী এবং তরুণরা যেন বাদ না পড়ে সেদিকে নজর রাখতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিও আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা। এমন মন্তব্য বা উপলব্ধির পর নির্বাচন প্রশ্নে আর বলার কিছু বাকি থাকে না। 

এর আগে গত বছর দায়িত্ব গ্রহণের চার মাসের মাথায় জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে তিনি ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলেছিলেন। পরে লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে তার বৈঠকের পর বিএনপি ও সরকার যৌথভাবে জানায় নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হতে পারে। ৫ আগস্টের ভাষণে সেই বিষয়টিই আবার উঠে আসলো। বাকি কথার মধ্যে সংস্কার, প্রশাসন, অর্থনৈতিক পরিস্থিতিসহ অন্যান্য বিষয় এসেছে। 

জানান, দায়িত্ব নেয়ার পর মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বাজার পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার চ্যালেঞ্জ সরকার সফলভাবে মোকাবিলা করেছে। ভঙ্গুর অর্থনীতি ও বন্যার কারণে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছিল প্রায় ১৪ পার্সেন্ট। এখন সেটা অর্ধেকে নেমে এসেছে। তার আশা ডিসেম্বরের মধ্যে এটি ৬ শতাংশে নেমে আসবে। গত এক বছরে রেমিট্যান্সের ইতিবাচক প্রবাহের কারণে দেশের মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে উল্লেখ করে ড. ইউনূস জানান, ‘গত অর্থবছর ব্যাংকিং চ্যানেলে রেকর্ড তিন হাজার ৩৩ কোটি ডলার প্রবাসী আয় দেশে এসেছে। রপ্তানি আয় প্রায় ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এছাড়া গত ১৬ বছরে দেশ থেকে পাচার হওয়া বিপুল অর্থ ফিরিয়ে আনা এবং চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনাকে নতুন করে সাজানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলেও জানান। 

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত এবং আহতদের জন্য সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন। তার জানানো তথ্য: এখন পর্যন্ত ৭৭৫টি পরিবারকে প্রায় ১০০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র ও মাসিক ভাতা বাবদ ব্যাংক চেক দেয়া হয়েছে। অবশিষ্টদেরও কয়েকটি আইনগত বিষয় নিষ্পত্তি সাপেক্ষে সঞ্চয়পত্র দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এর পাশাপাশি আহত ১৩ হাজার ৮০০ জনকে তিনটি ক্যাটাগরিতে নগদ টাকা ও চেক বাবদ মোট ১৫৩ কোটি ৪ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। 

আলোকপাত ছিল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনা অনুযায়ী ১৬টি সংস্কারকাজ সম্পন্ন হয়েছে। আরও ৪৩টি সংস্কারকাজ শেষ হওয়ার পথে। এর মধ্য দিয়ে ‘দলীয় বাহিনীতে পরিণত হওয়া ভঙ্গুর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে’ নতুন করে গড়ে তোলার জন্য তার সরকার কাজ করছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিতে আগের সরকারের করা সাইবার নিরাপত্তা আইন এবং ওই আইনের অধীনে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে করা সব মামলা বাতিল করা হয়েছে বলে জানান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তিতে দিনটিতে ভাষণের আগে ছিল তার পাঠ করা ঘোষণাপত্র। 

সেখানে জানানো হয়েছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের জাতীয় বীর এবং আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা পাবে আইনি সুরক্ষা। এছাড়া এই ঘোষণাপত্র সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত থাকবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার অনুষ্ঠানমঞ্চ থেকে ড. ইউনূসের এ ঘোষণাপত্র পাঠ অনুষ্ঠানে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপিসহ বিভিন্ন দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ঘোষণাপত্রে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং এই ভূখণ্ডের মানুষের সংগ্রামের নানা ধাপ তুলে ধরা হয়। এছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের নানা কর্মকাণ্ড এবং জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার ত্যাগের বিষয়গুলোও উঠে আসে। 

বিগত ষোল বছরের দীর্ঘ ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামের সময় এবং ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক সংঘটিত গুম-খুন, হত্যা, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও সকল ধরনের নির্যাতন, নিপীড়ন এবং রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি লুণ্ঠনের অপরাধসমূহের দ্রুত উপযুক্ত বিচারের কথাও বলা হয়। এছাড়া, দেশের মানুষ বিশেষ করে তরুণদের আকাক্সক্ষা অনুযায়ী আইনের শাসন ও মানবাধিকার, দুর্নীতি, শোষণমুক্ত, বৈষম্যহীন ও মূল্যবোধসম্পন্ন সমাজ এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় যুক্তিসঙ্গত সময়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচনের কথাও বলা হয়েছে ঘোষণাপত্রে। 

প্রধান উপদেষ্টার এই ঘোষণায় দোদুল্যমানতা আর গুজবের অবসান হয়েছে বলে মনে করছেন নির্বাচন বিশ্লেষক ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিটি সংশ্লিষ্টরা। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, ঘোষণাপত্র আর ভাষণে, নির্বাচনের কথার দিকেই বেশি আকর্ষণ থেকেছে মানুষের। 

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট