বৃদ্ধা মায়ের প্রতি সন্তানদের অবহেলা; জুলেখা বেগমের করুণ জীবন

শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার কুড়িকাহুনিয়া ইউনিয়নের চিথলিয়া গ্রামে একটি ভাঙা ঝুপড়ি ঘরে মাটিতে পলিথিন জড়িয়ে দিন কাটাচ্ছেন বৃদ্ধা জুলেখা বেগম। বয়সের ভারে ও অসুস্থতায় জর্জরিত এই মা একসময় নিজের জীবন উৎসর্গ করে দুই ছেলে, জুলহক ও জুলহাস,কে মানুষ করেছেন। কিন্তু আজ সেই সন্তানদের কাছে তিনি হয়ে উঠেছেন বোঝা। খাবার ও চিকিৎসার অভাবে তিনি ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।
জীবনের সংগ্রাম ও সন্তানদের অবহেলা
প্রায় ২০-২৫ বছর আগে স্বামীর মৃত্যুর পর জুলেখা বেগম জীবিকার তাগিদে ধান শুকানোর চাতালে ও মানুষের বাড়িতে কঠোর পরিশ্রম করে সংসার চালিয়েছেন। নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বিসর্জন দিয়ে দুই ছেলেকে মানুষ করেছেন। বড় ছেলে জুলহক ঢাকায় দিনমজুরের কাজ করেন, আর ছোট ছেলে জুলহাস কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু অসুস্থতার কারণে জুলহাস স্ত্রী-সন্তান নিয়ে শ্বশুরবাড়ি চলে যান, মাকে ফেলে রেখে একা। প্রথম দিকে জুলহক কিছু খাবার পাঠালেও তা এখন বন্ধ। এমনকি জুলেখার বয়স্ক ভাতার টাকাও নিয়ে নেন জুলহাস। ফলে, অনেক দিন তিনি একবেলা খাবারও পান না।
স্থানীয়দের অভিযোগ ও ছেলের আচরণ
চিথলিয়া গ্রামের বাসিন্দা ইসরাফিল জানান, জুলেখার শারীরিক অবস্থা কয়েক মাস ধরে দ্রুত খারাপ হচ্ছে। খাবার ও চিকিৎসার অভাবে তিনি মৃত্যুর মুখে। স্থানীয়রা সাহায্য করতে চাইলেও জুলহাস গালাগালি ও বাধা দেন। তিনি বলেন, মায়ের মল-মূত্র পরিষ্কার করার দায়িত্ব কে নেবে, তাই সেবা দেন না। মাকসুদুল আলম লিটন বলেন, “আমাদের চোখের সামনে একজন মা শেষ হয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু ছেলের বাধার কারণে কিছু করতে পারছি না।” সাইফুল ইসলামের মতে, জুলহাসের আচরণে এলাকায় বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে, ফলে সাহায্য করা কঠিন।
প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া
শ্রীবরদী উপজেলার নির্বাহী অফিসার শেখ জাবের আহামেদ জানান, বিষয়টি তাঁর জানা ছিল না। সঠিক তথ্য পেলে ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বারের মাধ্যমে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
সমাজের প্রতি আহ্বান
জুলেখা বেগমের মতো একজন সংগ্রামী মায়ের এই অবস্থা সভ্য সমাজের জন্য লজ্জাজনক। স্থানীয়রা ও প্রশাসনের সম্মিলিত উদ্যোগে তাঁর চিকিৎসা ও জীবনযাত্রার মান উন্নত করা জরুরি। সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে, যাতে জুলেখা বেগমের মতো মায়েরা শেষ জীবনে ন্যূনতম সেবা ও সম্মান পান।
Comments