Image description

মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রসারে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি, সাধারণ স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার সমন্বয় এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব জোরদার করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। সোমবার (১১ আগস্ট) ঢাকায় সাজেদা ফাউন্ডেশন আয়োজিত “ট্রমা ও নিরাময়: একটি সম্মিলিত অগ্রগতির পথ” শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এসব কথা বলা হয়।

আলোচনায় বিশেষজ্ঞরা জানান, মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় বিনিয়োগের প্রতি ডলারে ১০ বছরে প্রায় ১০ গুণ ফল পাওয়া সম্ভব। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উপাত্ত তুলে ধরে সংস্থার প্রোগ্রাম ম্যানেজার (এনসিডি ও এমএইচ) ডা. ইশাকুল কবির বলেন, ৫০৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগে ১০ বছরে ৫,৩৩৭ মিলিয়ন ডলারের ফলাফল পাওয়া যায়।

সাজেদা ফাউন্ডেশনের জরিপে দেখা গেছে, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে আহতদের মধ্যে ২৮% হতাশা, ২০% ক্রোধ, ১৬% উদ্বেগ, ১৬% আতঙ্ক এবং ১৫% পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডারে (পিটিএসডি) ভুগছেন। এছাড়া, বাংলাদেশে মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত ৯২% মানুষ এ সংক্রান্ত স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করেন না।

জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (নিটোর) উপ-পরিচালক এসএম মুহম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, “বড় স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মনোরোগবিদ্যা বিভাগ স্থাপন এবং এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানো জরুরি।” সাজেদা ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদা ফিজ্জা কবির জানান, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে আহতদের সেবা প্রদানের মাধ্যমে তারা প্রমাণ করেছেন, অল্প খরচে উন্নত মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া সম্ভব। তিনি বলেন, “দুর্যোগপ্রবণ বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দুর্যোগ প্রতিক্রিয়ার অংশ হওয়া উচিত।”

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ডা. এস এম মাহমুদুর রশিদ বলেন, “মানসিক স্বাস্থ্য জনস্বাস্থ্যের সবচেয়ে অবহেলিত ক্ষেত্র। মাত্র দুটি বিশেষায়িত হাসপাতাল বিপুল জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে পারছে না।” বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. নাহিদ মাহজাবিন মোর্শেদ মানসিক স্বাস্থ্য পেশাজীবী তৈরি এবং মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাসিরুল্লাহ সাইকোথেরাপি ইউনিটের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী কমিউনিটি-ভিত্তিক পদক্ষেপ, প্যারাপ্রফেশনাল উন্নয়ন এবং জরুরি মানসিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর (এসওপি) প্রণয়নের আহ্বান জানান। ইনোভেশন ফর ওয়েলবিয়িং ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর মনিরা রহমান সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের উপদেষ্টা সৈয়দ মো. নূরউদ্দিন, মাইক্রো ফাইন্যান্স রেগুলেটরি অথরিটির সহকারী পরিচালক মতিয়ার রহমান, আইসিডিডিআর,বির উপ-প্রকল্প সমন্বয়কারী ডা. মোহাম্মদ সোহেল শমিক এবং সাজেদা ফাউন্ডেশনের উপ-প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফজলুল হক। গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সাজেদা ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক ফারজানা শারমিন।