Image description

ফ্লোরিডার টাম্পায় পাকিস্তানি সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের প্রকাশ্য পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে নতুন উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে। শনিবার রাতে এক ডিনারে সম্প্রতি ফিল্ড মার্শাল উপাধিপ্রাপ্ত মুনির বলেছেন, ভারতের সঙ্গে ভবিষ্যৎ যুদ্ধে পাকিস্তান অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়লে “অর্ধেক দুনিয়া সঙ্গে নিয়ে যাবে।” এই হুমকি যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে প্রকাশ্যে তৃতীয় কোনো দেশের বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের প্রথম ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

সিন্ধু নদী নিয়ে হুমকি

মুনির সিন্ধু নদীতে ভারতের বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেছেন, এই বাঁধ পাকিস্তানের পানি সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করলে ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে তা ধ্বংস করে দেওয়া হবে। “সিন্ধু নদী ভারতের পারিবারিক সম্পত্তি নয়। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে,” বলেন তিনি। ভারতের একতরফাভাবে সিন্ধু পানি চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্তকে তিনি পাকিস্তানের ২৫ কোটি মানুষের জন্য “অনাহারের ঝুঁকি” হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

ভারতের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে প্রশ্ন

মে মাসে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চারদিনের সংঘর্ষ নিয়ে মুনির দীর্ঘ আলোচনা করেন। তিনি অভিযোগ করেন, ভারত তাদের ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত প্রকাশ করছে না। “ভারতের উচিত খেলোয়াড়ি মনোভাব দেখিয়ে ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করা। তাহলে আমরাও আমাদের ক্ষয়ক্ষতি প্রকাশ করবো,” বলেন তিনি। তিনি আরও হুঁশিয়ারি দেন, ভারত পুনরায় হামলা চালালে পাকিস্তান “পূর্বাঞ্চল থেকে শুরু করে পশ্চিমে” কঠোর জবাব দেবে।

রাজনৈতিক ইঙ্গিত ও বিতর্কিত মন্তব্য

অনুষ্ঠানে মুনির পাকিস্তানের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর ভূমিকার পক্ষে ইঙ্গিত দেন। তিনি বলেন, “যুদ্ধ জেনারেলদের হাতে ছাড়া যেমন ঠিক নয়, রাজনীতিও শুধু রাজনীতিকদের হাতে ছাড়া উচিত নয়।” এই মন্তব্য পাকিস্তানের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন বিতর্কের জন্ম দিতে পারে, কারণ গুঞ্জন রয়েছে যে মুনির আগামী দিনে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হতে পারেন।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

যুক্তরাষ্ট্রে এমন হুমকির ঘটনা অভূতপূর্ব বলে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে। ডিনারে প্রায় ১২০ জন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত অতিথি উপস্থিত ছিলেন। নিরাপত্তার কারণে মোবাইল ফোন বা ডিজিটাল ডিভাইস নিষিদ্ধ ছিল। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর একজন প্রতিনিধির উপস্থিতিও খবরে উল্লেখিত হয়েছে, যা এই ঘটনাকে আরও জটিল করে তুলেছে।

পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ গতিপ্রকৃতি

মাদ্রাসায় পড়া পাকিস্তানের প্রথম সেনাপ্রধান হিসেবে পরিচিত মুনিরের এই বক্তব্য তার রক্ষণশীল মনোভাবের প্রতিফলন বলে মনে করা হচ্ছে। তিনি ভারতকে “চকচকে মার্সিডিজ” এবং পাকিস্তানকে “পাথর ভর্তি ট্রাক” হিসেবে তুলনা করে বলেছেন, সংঘর্ষে ভারতেরই বেশি ক্ষতি হবে।

এই ঘটনা ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি এখন এই অঞ্চলের ওপর নিবদ্ধ রয়েছে, কারণ এমন হুমকি শান্তি প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।