Image description

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে ধর্মীয় সভার নামে ২২ কোটি টাকার চাল আত্মসাতে দুদকের দায়ের করা মামলায় সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদসহ ১০জনকে অর্ন্তভুক্ত করে এজাহার নামীয় ১০জন আসামীকে বাদ দিয়ে আদালতে চার্জশিট (অভিযোপত্র) দাখিল করা হয়েছে। এজাহার নামীয় আসামীদের বাদ দেওয়ায় সচেতন মহলে নানা আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় ৫ বছর পর সম্প্রতি এ মামলার চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে আদালতে।  

জানা গেছে, ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে ২ হাজার ২৫৩টি ধর্মীয় সভার নামে ৫ হাজার ৮২৩ টন চাল বরাদ্দ আসে। কিন্তু তৎকালীন সাংসদ অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদের যোগসাজশে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান ও পৌর কাউন্সিলর এই চাল আত্মসাৎ করেন।

বিষয়টি জানাজানি হলে ২০২১ সালের ২৬ আগস্ট ১৬ ইউপি চেয়ারম্যানসহ ১৯ জনের নামে দুদক রংপুর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হোসাইন শরীফ বাদী হয়ে মামলা করেন।

এজাহার নামীয় আসামীরা হলো- গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) জহিরুল ইসলাম, উপজেলা পরিষদের তৎকালীন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আকতারা বেগম রূপা, কামদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোশাহেদ হোসেন চৌধুরী, কাটাবাড়ির তৎকালীন রেজাউল করিম রফিক, তৎকালীন শাখাহারের তাহাজুল ইসলাম ভুট্টু, রাজাহারের তৎকালীন আব্দুল লতিফ সরকার, সাপমারার শাকিল আলম বুলবুল, দরবস্তের শরিফুল ইসলাম জর্জ, তালুককানুপুরের তৎকালীন আতিকুর রহমান আতিক, নাকাইয়ের তৎকালীন আব্দুল কাদের প্রধান, রাখালবুরুজের তৎকালীন শাহাদত হোসেন, ফুলবাড়ীর তৎকালীন আব্দুল মান্নান মোল্লা, গুমানীগঞ্জের তৎকালীন শরীফ মোস্তফা জগলুল রশিদ রিপন, কামারদহের তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রতন, কোচাশহরের তৎকালীন মোশাররফ হোসেন, শিবপুরের সেকেন্দার আলী মন্ডল, শালমারার তৎকালীন ইউপি তৎকালীন চেয়ারম্যান আমির হোসেন শামিম, মহিমাগঞ্জের তৎকালীন আব্দুল লতিফ প্রধান ও গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভার তৎকালীন কাউন্সিলর গোলাপী বেগম। প্রকল্প কর্মকর্তা ছাড়া অন্য সবাই উচ্চ আদালতে আগাম জামিন নিলেও নিম্ন  আদালতে আত্মসমর্পণ করেননি। সেই সঙ্গে তাদের কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।

কিন্তু মূল অভিযুক্ত সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদকে বাদ দিয়ে মামলা করা হয়। বিভিন্ন মহলে অভিযোগ ওঠে মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদকে মামলায় জড়ানো হয়নি। বিষয়টি নিয়ে সমকালে একাধিকবার সংবাদ প্রকাশ হয়। 
এনিয়ে প্রকল্প যথাযথভাবে শেষ হওয়ার প্রত্যায়নকারী তৎকালীন এমপি অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদকে মামলায় না জড়ানোর ফলে বাদী অ্যাডভোকেট এ.এস.এম হরমুজ আহম্মেদের পক্ষে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবি অ্যাডভোকেট হারুন অর রশীদ দুদকের চেয়ারম্যানসহ ৮ জনের নিকট আইনি নোটিশটি দেন। 

নোটিশে উল্লেখ করা হয়, যেহেতু প্রাক্তন জাতীয় সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ বরাদ্দও এাণ বিতরণের কথা স্বীকার করলেও উপ-পরিচালক তাকে মামলায় জড়াননি। অথচ বিষয়টি পরিষ্কার প্রাক্তন সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ স্থানীয় কমিটির সঙ্গে যোগসাজশ করে ত্রাণ আত্মসাৎ করেছেন যার কারণে ত্রাণ সামগ্রীর অপব্যবহার হয়েছে। আবুল কালাম আজাদ নিজেই ত্রাণ সামগ্রী যথাযথ বন্টনের জন্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং পুরো অপারেশনের জন্য একটি ক্লিন চিট দিয়েছেন এই বলে যে, সংশ্লিষ্টদের দ্বারা বরাদ্দকৃত এাণ সামগ্রীর বিষয়ে যথাযথ ও ন্যায়সঙ্গত বিতরণ করা হয়েছে। মন্ত্রনালয়, তার নিজের হেডে, প্রাক্তন এমপি আবুল কালাম আজাদ উল্লেখ করেছেন/ লিখিত ভাবে প্রত্যায়িত করেছেন যে বিতরণটি তার নির্দেশিত তত্বাবধানে করা হয়েছিল। এ জন্য আবুল কালাম আজাদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ/উদ্যোগ নেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। অন্যথায় আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন দাখিল করা হবে বলে হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করা হয়। 

তাদের মধ্যে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) জহিরুল ইসলাম, কামদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোশাহেদ হোসেন চৌধুরী, কাটাবাড়ির তৎকালীন রেজাউল করিম রফিক, তৎকালীন শাখাহারের তাহাজুল ইসলাম ভুট্টু, রাজাহারের তৎকালীন আব্দুল লতিফ সরকার, রাখালবুরুজের তৎকালীন শাহাদত হোসেন, কোচাশহরের তৎকালীন মোশাররফ হোসেন, শালমারার তৎকালীন ইউপি তৎকালীন চেয়ারম্যান আমির হোসেন শামিম, মহিমাগঞ্জের তৎকালীন আব্দুল লতিফ প্রধান ও গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভার তৎকালীন কাউন্সিলর গোলাপী বেগম। প্রায় ৫ বছর পর সম্প্রতি এজাহারনামীয় ১০জনকে বাদ দিয়ে আদালতে সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদসহ ১০ জনকে অর্ন্তভুক্ত করে এ মামলার চার্জশিট দাখিল করে দুদক। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মামলার কয়েকজন আসামী বলেন, মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদকে মামলায় জড়ানো হয়নি। তাকে বাদ দিয়ে ১৯জনকে আসামী করে অনুমোদনের জন্য প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে কালামসহ ১০জনকে জড়িয়ে ১০জনকে মামলা হতে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। সেখানেও মোটা অংকের টাকা বাণিজ্য করা হয়েছে। এনিয়ে উচ্চ আদালতে যাবেন বলে জানান তারা। 

এ ব্যাপারে মামলার বাদী দুর্নীতি দমন কমিশন রংপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সাবেক সহকারী পরিচালক বর্তমান প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. হোসাইন শরিফ বলেন, যাদেরকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে তারা ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয় মর্মে কমিশনে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। এরপর মামলাটি পুনঃতদন্ত করা হয়েছে। সেখানে তাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। পরে কমিশন থেকে তাদের নাম বাদ দিয়েছেন। আসামীদের পক্ষ থেকে তাকে বিভিন্নভাবে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।