
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি ঘোষণার পর পাকিস্তানে তেলের বিশাল ভান্ডার নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম 'ট্রুথ স্যোশালে' দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প দাবি করেছেন, পাকিস্তান এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছে, যার অধীনে দুই দেশ পাকিস্তানের বিশাল তেল ভান্ডার অনুসন্ধানে যৌথভাবে কাজ করবে।
এই ঘোষণা এমন এক সময়ে এসেছে যখন পাকিস্তানে তেল ও গ্যাসের উৎপাদন লাগাতার কমছে। স্থানীয় চাহিদা মেটাতে দেশটিকে বিদেশ থেকে তেল আমদানি করতে হচ্ছে। তাই ট্রাম্পের এই ঘোষণা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
পাকিস্তানের জ্বালানি খাতের বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ট্রাম্পের এই ঘোষণার বাস্তব ভিত্তি নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ পাকিস্তানে বর্তমানে যে তেলের মজুদ আছে, তা দিয়ে দেশের মাত্র ১০ থেকে ১৫ শতাংশ চাহিদা পূরণ হয়। বাকিটা আমদানি করতে হয়।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ মুহাম্মদ ওয়াসি খান বলেন, ইউএস এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের তথ্যানুযায়ী, পাকিস্তানে ৯০০ কোটি ব্যারেল পেট্রলের মজুদ আছে। কিন্তু এই হিসাব কতটা সঠিক, তা বলা কঠিন। কারণ বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলন শুরু না হলে প্রকৃত মজুদ জানা সম্ভব নয়। তার মতে, অতীতে তেল অনুসন্ধানের জন্য বিনিয়োগ ও প্রযুক্তির অভাবে পাকিস্তান খুব একটা সফল হতে পারেনি।
ট্রাম্পের ঘোষণা অনুযায়ী, উভয় দেশ এখন তেল অনুসন্ধানের জন্য সংস্থা বাছাইয়ের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। ওয়াসি খান মনে করেন, এটি পাকিস্তানের জন্য একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। কারণ মার্কিন সরকারের সহায়তায় কোনো বড় তেল সংস্থা এই কাজে যুক্ত হতে পারে, যা পাকিস্তানের জ্বালানি খাতে নতুন বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তি নিয়ে আসবে।
তবে এই চুক্তির ফলে পাকিস্তানে চীনা বিনিয়োগের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীন পাকিস্তানের দীর্ঘস্থায়ী অংশীদার। তাই মার্কিন সংস্থার যুক্ত হওয়া চীনা বিনিয়োগে কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। বরং, এতে করে পাকিস্তানের জ্বালানি খাত আরও উন্নত হবে এবং চীনও নতুন প্রকল্পে অংশ নিতে পারে।
ট্রাম্পের এই ঘোষণা নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব কানওয়াল সিবাল এই ঘোষণায় অসন্তোষ প্রকাশ করে ট্রাম্পের মানসিকতার সমালোচনা করেছেন। তিনি মনে করেন, এটি ভারতের উপর চাপ সৃষ্টির একটি কৌশল। অন্যদিকে, কিছু পাকিস্তানি সামাজিক মাধ্যমে এই ঘোষণাকে ভারতের জন্য অপমানজনক বলে মনে করছেন।
সব মিলিয়ে, ট্রাম্পের ঘোষণাটি পাকিস্তানে তেলের বিশাল ভান্ডার নিয়ে আলোচনার জন্ম দিলেও এর বাস্তবায়ন ও ফলাফল সম্পর্কে এখনো পরিষ্কার কোনো ধারণা পাওয়া যায়নি।
Comments