Image description

দেশে ফসল উৎপাদনে ব্যবহৃত রাসায়নিক বালাইনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে মানবস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, তার সমাধান নিয়ে এগিয়ে এসেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)-এর একদল গবেষক। তারা সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তি ও উপকারী অণুজীব ব্যবহার করে একটি পরিবেশবান্ধব ছত্রাকনাশক উদ্ভাবন করেছেন, যার নাম 'পি.জি. ট্রাইকোডার্মা'। এই উদ্ভাবন একইসঙ্গে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি করতেও সক্ষম।

বাকৃবির উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শাহজাহান মঞ্জিল-এর নেতৃত্বে একদল গবেষক 'ট্রাইকোডার্মা এস্পেরেলাম' নামক একটি উপকারী ছত্রাক ব্যবহার করে এই নতুন ছত্রাকনাশকটি তৈরি করেছেন। অধ্যাপক মঞ্জিল নিজেই দেশের মাটি থেকে এই ছত্রাককে আলাদা করে এর বায়োফর্মুলেশন উন্নত করেন। দলের অন্য সদস্যরা হলেন কৃষি রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. কে এম মহিউদ্দিন, যিনি গুণগত মান ও কার্যকারিতা বাড়ানোর কাজ করেছেন, এবং ফার্ম স্ট্রাকচার ও এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আলী আশরাফ, যিনি উৎপাদন প্রক্রিয়া ও পরিবেশগত দিকগুলো নিয়ে গবেষণা করেছেন।

গবেষক দলের প্রধান ড. শাহজাহান মঞ্জিল জানান, 'পি.জি. ট্রাইকোডার্মা'-এর মূল উপাদান ট্রাইকোডার্মা এস্পেরেলাম সম্পূর্ণ দেশীয় উৎস থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে, যা বাংলাদেশের জলবায়ুর সঙ্গে অত্যন্ত ভালোভাবে অভিযোজিত। তিনি আরও বলেন, এই ছত্রাকনাশকটি বাজারের অন্য আমদানিকৃত ট্রাইকোডার্মার চেয়ে বেশি কার্যকর।

এই ছত্রাকনাশকটি শুধু রোগ দমনই নয়, জৈবসার হিসেবেও কাজ করে। অধ্যাপক মহিউদ্দিনের মতে, এটি ব্যবহার করে রাসায়নিক সারের ব্যবহার ২০-২৫ শতাংশ কমানো সম্ভব। অধ্যাপক মঞ্জিল আরও জানান, এর ব্যবহারে বিভিন্ন ফসলের ফলন উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে—যেমন: চা গাছে ৮০-১০০ শতাংশ, পালং ও পুঁইশাকে ৪০-৫০ শতাংশ, এবং টমেটো, আলু ও বেগুনে ২০-২৫ শতাংশ।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, 'পি.জি. ট্রাইকোডার্মা' পরিবেশ ও জলজ জীবনের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ। অধ্যাপক মঞ্জিল নিশ্চিত করেছেন যে, এটি কোনো বিষাক্ত রাসায়নিক বহন করে না এবং মাছ, ব্যাঙ বা অন্যান্য জলজ প্রাণীর ওপর কোনো ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে না।

ইতিমধ্যে মাঠপর্যায়েও এর সুফল দেখা গেছে। মৌলভীবাজারের এক চা বাগানের ম্যানেজার এবং নরসিংদীর এক পানচাষি এই ছত্রাকনাশক ব্যবহার করে ইতিবাচক ফল পাওয়ার কথা জানিয়েছেন। ময়মনসিংহ বিভাগীয় কৃষি অফিসের অতিরিক্ত পরিচালক ড. সালমা লাইজু এই আবিষ্কারকে দেশের জন্য একটি বিশাল সম্ভাবনা বলে মন্তব্য করেছেন।