
কেন্দ্রের নির্দেশনা উপেক্ষা করে সম্মেলন ছাড়াই ইউনিয়ন বিএনপি কমিটি গঠনের অভিযোগ উঠেছে বরিশাল সদর উপজেলা ও জেলা বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে। এমনকি পদবঞ্চিতদের বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের দোসরদের নতুন কমিটিতে পদ দেয়ার অভিযোগ করেছেন বঞ্চিতরা।
রোববার (২০ জুলাই) বেলা সাড়ে ১২টায় বরিশাল প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেছেন বরিশাল সদর উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়ন বিএনপির একাংশের পদবঞ্চিত নেতারা। তাদের অভিযোগ বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিবের নির্দেশে ইউনিয়ন বিএনপিতে আওয়ামী লীগের দোসরদের পদ দেয়া হচ্ছে। তাই এসব কমিটি বাতিল করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভোটের মাধ্যমে কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন নেতৃবৃন্দ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে কাশিপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু তাহের খোকন মুন্সি বলেন, গত ১৬ বছরে স্বৈরাচারী সরকারের হামলা, জেল-জুলুমের শিকার কাশিপুর ইউনিয়ন বিএনপির বর্তমান সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল হক সিকদার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কাশিপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে চান্দু কাজী, সাবেক সহ-সভাপতি ও বর্তমান যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন হাওলাদার, ৬ নম্বর বিহঙ্গল ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সর্দারের মত নেতাদের ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে স্থগিতাদেশ দিয়ে দলের বাহিরে রেখে নারী কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত আওয়ামী লীগ ঘরানার লোকের নিয়ে কাশিপুর ইউনিয়ন বিএনপি গঠন করা হয়েছে।
তিনি অভিযোগ করেন, নতুন কমিটিতে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি করা হয়েছে আলী আহমেদ মাঝিকে। যিনি বিগত অবৈধ ভোটারবিহীন আওয়ামী সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত সকল ইউপি নির্বাচন, সংসদ নির্বাচন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করেছেন। ওই সময়ও তিনি বিএনপির আহ্বায়ক ছিলেন। বিএনপির পদে থেকেও স্বৈরাচারী সরকারের আমলে বিভিন্ন সময় থানা পুলিশের কাছে তথ্য দিয়ে সরকার বিরোধী আন্দোলনকারী বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানি করেন আলী আহমেদ মাঝি।
নতুন কমিটিতে সাধারণ সম্পাদকের পদ পাওয়া হুমায়ুন কবির ওয়াসিম আওয়ামী লীগের আমলে গঠন হওয়া শেখ হাসিনা পরিষদের সহ-সভাপতি পদে রয়েছেন। তিনি বাবুগঞ্জ উপজেলার চাঁদপাশা ইউনিয়নের বকশির চর গ্রামের বাসিন্দা। সদর উপজেলার বাসিন্দা না হলেও শুধুমাত্র দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবুল কালাম শাহীনের অনুসারী হওয়ায় তাকে সাধারণ সম্পাদকের পদ দেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগের ১৬ বছর একই পদে ছিলেন হুমায়ুন কবির ওয়াসিম।
এছাড়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি কাজী এমদাদ হোসেন ২০২৩ সালে ১৫ আগষ্ট নিজ বাড়িতে শেখ মুজিবুর রহমানের শোক দিবসের খিচুড়ি রান্না করে বিতরণ করেন। একইভাবে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে আওয়ামী লীগে যোগদান করা মাদক কারবারি সানাউল কবির রেজভীকে ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। ইতোপূর্বে তিনি মেম্বার পদে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগেও যোগদান করেছিলেন।
তিনি অভিযোগ করেন, কাজী এমদাদ হোসেন, জাকির হোসেন, সানাউল কবির রেজভী, আরিফুর রহমান ফারুক তালুকদাররা দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে অবৈধ ভোটার বিহীন আওয়ামী সরকার আয়োজিত ইউপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী কামাল হোসেন লিটন মোল্লার পক্ষে প্রকাশ্যে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নেন।
অথচ এসব নেতাদের বরিশাল জেলা (দক্ষিণ) বিএনপির সদস্য সচিব আবুল কালাম শাহীনের নির্দেশে তড়িঘড়ি করে ১৯ জুলাই শনিবার বিকেল ৩টায় পূর্ব বিশ্ববাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কাউন্সিল করে বিনা ভোটে আলী আহমেদ মাঝিকে সভাপতি ও শেখ হাসিনা পরিষদের সহ-সভাপতি হুমায়ূন কবির ওয়াসিমকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকা বরিশাল জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম খান রাজন বলেন, বরিশালে কমিটি গঠনে অনিয়মের বিষয়ে আমরা কেন্দ্রে অভিযোগ দিয়েছি। আমাদের দক্ষিণাঞ্চলের সাংগঠনিক প্রধান আব্দুল আউয়াল মিন্টু এবং বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান বরিশাল সদর উপজেলায় বিএনপির সম্মেলন বন্ধ রাখার জন্য বলেছেন। কিন্তু সেই নির্দেশ উপেক্ষা করেই বরিশাল উপজেলার ইউনিয়নগুলোতে কথিত সম্মেলনের নামে পকেট কমিটি গঠন করছেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবুল কালাম শাহিন।
সংবাদ সম্মেলনে কাশিপুর ইউনিয়নের পদবঞ্চিত নেতা আবু তাহের খোকন, আব্দুল হক সিকদার, জাহাঙ্গীর সরদার, কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন, কাজির হোসেন, মো. হানিফ, মো. লিটন দেওয়ানজী, কাজী আলাউদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন- বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবুল কালাম শাহিন। তিনি বলেন, ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি গঠনের দায়িত্ব ইউনিয়ন নেতাদের। তাদের কমিটি অনুমোদন করবে উপজেলা বিএনপি। ভুল-ত্রুটি করে থাকলে সেটা তাদের ব্যাপার। আমাকে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানোয় আমি সেখানে গিয়েছি।
তিনি বলেন, যিনি সংবাদ সম্মেলন করেছেন তার পাশেই বসা ছিলেন শেখ হাসিনা পরিষদের একজন সহ-সভাপতি। তার পরও কমিটিতে আওয়ামী লীগের যদি কেউ থাকে অবশ্যই তাকে বাদ দেওয়া হবে। যারা আওয়ামী লীগের কমিটিতে ছিলো, মিছিল-মিটিংয়ে কারোর ছবি থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে বিয়ে বাড়ি বা কোনো অনুষ্ঠানে গিয়ে আওয়ামী লীগের সাথে ছবি তুললে সেটা দোসের কিছু না।
Comments