সৈয়দপুরে মেলার নামে লটারি ও হাউজি খেলায় সর্বস্বান্ত সাধারণ মানুষ

নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের বিমানবন্দর সড়কে ফেয়ার পার্কে কুটির শিল্প মেলার নামে অবৈধভাবে প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ১৫৫টি এর বেশি টিনের ডিব্বায় করে টিকেট বিক্রি করে হাজার হাজার খেটে খাওয়া মানুষদের সর্বস্বান্ত করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে এই মেলার কারনে শহরে বেড়েছে মাত্রাতিরিক্ত যানজট। বেড়েছে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতও। এছাড়া মেলার মূল স্পটে অবাধে চলছে হাউজির জুয়া। যার কারণে ইতিমধ্যে সর্বস্বান্ত হয়েছেন অনেকে। পারিবারিক অশান্তি দেখা দিয়েছে খেটে খাওয়া মানুষের ঘরে।
এদিকে রমরমাভাবে প্রায় ১৫-২০ দিন থেকে চললেও প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করছে। এতে এলাকার সচেতন মহল উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা বলছেন আমরা মেলার পক্ষে মেলা চলুক কিš‘ জুয়া বন্ধ অত্যন্ত জুরুরি।
ইতিমধ্যে সংবাদপত্র ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ মরন নেশার জুয়া খেলা বন্ধের দাবি উঠলেও এসব জুয়া বন্ধে কোনো ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হচ্ছে না।
জানা যায়, ২০ টাকা মূল্যের এই লটারিতে দেওয়া হচ্ছে মোটরসাইকেল, সোনার গহনাসহ নানা পুরস্কারের প্রলোভন। এসব লটারির মূল ক্রেতা রিকশা-ভ্যানচালক, চা দোকানদার, মুদি দোকানদার, দিনমজুরসহ নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষ। পুরস্কারের আশায় প্রতিদিন হাজার হাজার টাকার লটারি কিনে প্রতারিত হচ্ছেন তারা। এ ছাড়া লটারির ড্র হয় গভীর রাত পর্যন্ত। এতে মাদক ও কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা বেড়েছে নগরীজুড়ে।
অভিযোগ রয়েছে, একটি স্বার্থান্বেষি মহল সবদিক ম্যানেজ করে এসব অনৈতিক কাজ চালিয়ে নিতে সাহায্য করায় জুয়ার আয়োজক এ জুয়ার ব্যবসা জমজমাটভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিনই সৈয়দপুরের পুরো উপজেলাসহ নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলার কয়েকটি উপজেলাতে যাচ্ছে জুয়ার টিকিটি নিয়ে অসংখ্য ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা আর মাইকিং করে ডেকে সকল বয়সিদের লটারি খেলে পুরস্কার লাভের লোভ দেখিয়ে টিকিটি বিক্রি করা হচ্ছে।
এসব লটারিতে পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে মোটর-সাইকেল, সোনার গহনাসহ নানা ধরণের আকর্ষনীয় পুরস্কার আর হাজার-হাজার মানুষ এসব জুয়ার পুরস্কারের লোভে প্রতিদিন লাখ-লাখ টাকা হারাচ্ছেন। লটারির কারণে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন হাজারো খেটে খাওয়া মানুষ। এরই মধ্যে অনেকের পরিবারে অশান্তি দেখা দিয়েছে।
এলাকাবাসী বলছেন, মেলায় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পর্যন্ত ঠিক ছিল। কিন্তু মেলার নামে লটারি, হাউজির মত জুয়া চালু হয়েছে যার জন্য খেটে খাওয়া মানুষ আজ ফকির হওয়ার পথে।
সরেজমিনে শহর ঘুরে দেখা যায়, শহরের প্রতিটি পয়েন্টেই প্রকাশ্যে লটারির টিকেট বিক্রি করা হচ্ছে। মেলা শুরুর দিন থেকেই অনুমোদনহীন লটারির ব্যবসা শুরু করে আয়োজক কমিটি। রং-বেরঙের টিকেট বিক্রি হচ্ছে ধুমছে। প্রতিদিন প্রায় ২০-২৫ লাখ টাকার লটারি বিক্রি করে মোটরসাইকেল, সোনার গহনার প্রলোভন দেখানো হচ্ছে তাতে। আর ২০ টাকায় লোভনীয় সুযোগ নেওয়ার জন্য দিনের সব আয় লটারিতে খরচ করার পর রাত শেষে নিঃস্ব হয়ে বাড়ি ফিরছে দিনমজুররা।
প্রশাসনের চোখের সামনে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার লটারির খেলা চললেও নীরব ভূমিকা পালন করছে তারা। আর প্রশাসনের এ নীরবতা নানা প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে জনমনে।
ইতিমধ্যে মেলার নামে জুয়া বন্ধে আলেম সমাজসহ সচেতন সমাজ সোচ্চার হয়েছেন। অবিলম্বে জুয়া বন্ধের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
এ নিয়ে জানতে আয়োজক কমিটি ও নীলফামারী জেলা প্রশাসকের মোবাইল ফোনে করা হলেও উভয়েই রিসিভ না করায় তার বক্তব্যও নেওয়া সম্ভব হয়নি।
Comments