Image description

সুন্দরবনের জীববৈচিত্র রক্ষায় বন বিভাগ ১ জুন থেকে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এ কারণে বনে কোন মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকলেও তা উপেক্ষা করে অর্থের লোভে সঙ্গবদ্ধ চোরা শিকারীদের অপতৎপরতা কোনভাবেই থামছে না। বন বিভাগের কঠোর নজরদারির পরেও প্রবল বর্ষনেও বনে ঢুকে হরিণ শিকারের জন্য ফাঁদ পেতে হরিণ শিকারের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। 

বন বিভাগ গত এক মাসের ব্যবধানে ১১ টি অভিযান চালিয়ে কয়েকজন শিকারিসহ হরিন ধরার ফাঁদ, ককশিট জব্দ করেছে।ধ্বংস করা হয়েছে শিকারীদের টংঘর। বেশিরভাগ শিকারি বন বিভাগের টের পেলে বনের মধ্যে পালিয়ে যায়। এ কারণে জনবল বৃদ্ধি ও আগ্নেয়াস্ত্র শটগান বনরক্ষীদের কাছে থাকা জরুরি হয়ে পড়েছে বলে ডিএফও জানিয়েছে।

বনবিভাগ সূত্র জানিয়েছে ,গত ৮ জুলাই ভারী বর্ষণের মধ্যেও শরণখোলা রেঞ্জের কচিখালী অভয়ারণ্যকেন্দ্রের বলেশ্বর নদীর সংলগ্ন দরজার খাল ও বাহির সুখপাড়া  মাঝামাঝি বনে বনরক্ষীরা অভিযান চালিয়ে ১৩৭টি মালা ফাঁদ উদ্ধার করে। পেতে রাখা ফাঁদ থেকে ৭ শত ফুট দূরে সুন্দরী কচা দিয়ে তৈরি একটি টংঘর পলিথিন, মাংস রাখার জন্য ককশিট পাওয়া যায়। যা পরে ধ্বংস করা হয়েছে।৭ জুলাই কাতলার খাল এলাকার বনে টহল কালে ১০০টি মালা ফাঁদ উদ্ধার করে। ১ জুলাই একই রেঞ্জের ছাপরাখালী থেকে বন্দে আলী খাল পর্যন্ত হেঁটে টহলখালে শিকারিদের পেতে রাখা প্রায় ২৫ কেজি, মালাফাঁদ উদ্ধার করে। কাছে তৈরি করার টংমাচা ধ্বংস করে শেলার চরের বনরক্ষীরা।

৩০ জুন কোচিকালির বাহির সুখপাড়া খাল এলাকায় বনের মধ্যে পেতে রাখা ৩০০ টি মালাপাত উদ্ধার করে। জব্দ করে বিভিন্ন মালামাল। এ সময় হাতেনাতে চোরা শিকারি আরিফুল ইসলাম দুলালকে আটক করে। তার বাড়ি পাথর ঘাটার কোরাইল্লা গ্রামে। এ সময়ে অন্য দুইজন পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় এক সপ্তাহ পরে পাথরঘাটা থানা পুলিশ শিকারিদের গ্যাং লিডার নাসির ফকিরকে আটক করে। গত ১০ জুলাই তাকে বাগেরহাট আদালতে প্রেরণ করে বন বিভাগ। তার বাড়ি পাথরঘাটার বড় টেংরা গ্রামে। গত ১৯ জুন চাঁন্দেরশ্বর ক্যাম্পের বনে টহল কালে বনরক্ষীরা ৩৬০ টি ফাঁদ উদ্ধার করে। গত ১৬ জুন শরণখোলা রেঞ্জের কোকিলমনি টহলপাড়ীর টিয়ারচর এলাকা থেকে ৬০০ মালাফাঁদ উদ্ধার করে।১৩ জুন বনের ডাইমারি এলাকা থেকে ৮২ টি নন্দবালা ফাড়ির সূর্যমুখী খাল সংলগ্ন বন থেকে ৫৩ টি ফাঁদ উদ্ধার করে। গত ১০ জুন শরণখোলা রেঞ্জের ক্যাম্পের ছোট সিন্দুক বাড়ি এলাকায় হরিণ শিকারীদের পেতে রাখা ৪৫০ টি মালাপদ উদ্ধার করে বনরক্ষীরা। গত ৫ জুন দুবলার রুপার বারানি খাল এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৮টি ও একটি সিটা ফাঁদ উদ্ধার করে।

বন বিভাগ জানায় বর্তমানে হরিণ শিকারের জন্য পাতা হয় মালাফাঁদ। যা লাইনের শক্ত দড়ি দিয়ে তৈরি করা হয়। গাছের সাথে বৃত্ত আকারে একটার পর একটা মালা বানিয়ে পেতে রাখা হয়। হরিণ যাতায়েত করার সময় আটকে পড়ে।সম্প্রতি বাগেরহাটে ডিএফও  যোগদানের পর থেকে হরিন শিকার প্রতিরোধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে।

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর দ্য কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসের এক জরিপের তথ্য মতে, বর্তমানে সুন্দরবনে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৬০৪টি হরিণ রয়েছে। এর আগে ২০০৪ সালে হরিণের সংখ্যা ছিল ৮৩ হাজার। সেই হিসাবে ১৯ বছরের ব্যবধানে সুন্দরবনে হরিণ বেড়েছে ৫৩ হাজার ৬০৪টি।কিন্তু হরিণ শিকার রোধ করা না গেলে সুন্দরবনের পর্যটক আকৃষ্ট মায়বি চিত্রল হরিণের সংখ্যা দিন দিন কমতে থাকবে।

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মোঃ রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, হরিণ শিকার প্রতিরোধে বনবিভাগ কঠোর অবস্থানে রয়েছে। যে কারণে ইতিপূর্বে শিকারীরা সহজে হরিণ শিকার করে মাংস চামড়া পাচার করত। এখন ফাঁদ পাতার সাথে সাথে ধরা পড়ছে। ইতিমধ্যে ৬ জন শিকারিসহ বিপুল পরিমাণ ফাঁদ উদ্ধার করা হয়েছে। 

তিনি আরো বলেন সুন্দরবন আয়তনের তুলনায় বনরক্ষী সংকট রয়েছে। আগ্নেয়াস্ত্র শর্ট গান দরকার। বনরক্ষীদের কাছে এই গান থাকলে শিকারীদের আটক করার সহজ হবে। হরিণ শিকার প্রতিরোধে সকলের সক্রিয় সহযোগিতা করে যেকোন মূল্যে ঠেকাতে হবে। ভোক্তা আছে বলে চোরা শিকারীরা সুন্দরবনে যায়। সমাজে এক শ্রেনির মানুষ আছে যারা শখ করে হরিণের মাংস খায়। তারা যদি মাংস খাওয়ার জন্য না কেনে তাহলে শিকারিরা বিক্রি করতে না পারলে হরিণ শিকার করবে না।