Image description

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের জুন মাসের সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদন মতে প্রতিদিন গড়ে নিহত হয়েছেন ২৩ জন। যা গত মে মাসের তুলনায় প্রাণহানি বেড়েছে ২২.৫৫ শতাংশ। সড়ক দুর্ঘটনায় ২ হাজার ৪ শত ৬৩ কোটি ২০ লাখ টাকার মানব সম্পদের ক্ষতি হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত জুন মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৬৮৯টি। নিহত ৬৯৬ জন এবং আহত ১৮৬৭ জন। নিহতের মধ্যে নারী ১০৪ (১৫.০৯%), শিশু ১০৯ (১৫.৮২%)। ২৫৬টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ২২৮ জন, যা মোট নিহতের ৩২.৭৫ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩৭.১৫ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ১২০ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ১৭.২৪ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ১০৬ জন, অর্থাৎ ১৫.২২ শতাংশ।

এই সময়ে ১৮টি নৌ-দুর্ঘটনায় ২১ জন নিহত, ১৩ জন আহত হয়েছেন। ৫৩টি রেল ট্র্যাক দুর্ঘটনায় ৪৪ জন নিহত এবং ২৫ জন আহত হয়েছেন।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এবং নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।

যানবাহনভিত্তিক নিহতের চিত্র:
দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়- মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ২২৮ জন (৩২.৭৫%), বাসের যাত্রী ৬৩ জন (৯.০৫%), ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্রলি-লরি-ড্রাম ট্রাক-রোড রোলার আরোহী ৫৪ জন (৭.৭৫%), প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস আরোহী ২২ জন (৩.১৬%), থ্রি-হুইলার যাত্রী (সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান) ১৫১ জন (২১.৬৯%), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-করিমন-ভটভটি-পাখিভ্যান-মাহিন্দ্র-টমটম) ৪৪ জন (৬.৩২%) এবং বাইসাইকেল-রিকশা আরোহী ১৪ জন (২%) নিহত হয়েছেন।

দুর্ঘটনা সংঘটিত সড়কের ধরন:
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ২৯৬টি (৪২.৯৬%) জাতীয় মহাসড়কে, ২৪৩টি (৩৫.২৬%) আঞ্চলিক সড়কে, ৫৯টি (৮.৫৬%) গ্রামীণ সড়কে, ৮৭টি (১২.৬২%) শহরের সড়কে এবং ৪টি (০.৫৮%) অন্যান্য স্থানে সংঘটিত হয়েছে।

দুর্ঘটনার ধরন:
দুর্ঘটনাসমূহের ১৬৭টি (২৪.২৩%) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৩০৬টি (৪৪.৪১%) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ১২৪টি (১৮%) পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেয়া, ৭৬টি (১১.০৩%) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ১৬টি (২.৩২%) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহন:
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের মধ্যে-ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি-ড্রাম ট্রাক-তেলবাহী ট্যাংকার-পুলিশ ভ্যান- রোড রোলার ২৪.৫৩%, যাত্রীবাহী বাস ১৭.১৩%, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-অ্যাম্বুলেন্স-জীপ ৬.৭৫%, মোটরসাইকেল ২১.৮০%, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান) ১৭.৬১%, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন (নসিমন-করিমন-ভটভটি-পাখিভ্যান-টমটম-মাহিন্দ্র) ৭.৬৪%, বাইসাইকেল-রিকশা ২.১৭% এবং অজ্ঞাত যানবাহন ২.৩৩%।

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা:
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা ১২৪৩টি। (বাস ২১৩, ট্রাক ১৮০, কাভার্ডভ্যান ৩০, পিকআপ ৩৭, ট্রাক্টর ১১, ট্রলি ১৬, লরি ৭, ড্রাম ট্রাক ১৯, পুলিশ ভ্যান ২, তেলবাহী ট্যাংকার ২, রোড রোলার ১, মাইক্রোবাস ৩১, প্রাইভেটকা ৪৪, অ্যাম্বুলেন্স ৭, জীপ ২, মোটরসাইকেল ২৭১, থ্রি-হুইলার ২১৯ (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন ৯৫ (নসিমন-করিমন-ভটভটি-পাখিভ্যান-টমটম-মাহিন্দ্র), বাইসাইকেল-রিকশা ২৭ এবং অজ্ঞাত যানবাহন ২৯টি।

দুর্ঘটনার সময় বিশ্লেষণ:
সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাসমূহ ঘটেছে ভোরে ৫.০৭%, সকালে ২৬.২৬%, দুপুরে ১৯.৪৪%, বিকালে ২০.৭৫%, সন্ধ্যায় ৮.৮৫% এবং রাতে ১৯.৫৯%।

দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান:
দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ২৯.৩১%, প্রাণহানি ২৬.৮৬%, রাজশাহী বিভাগে দুর্ঘটনা ১৫.২৩%, প্রাণহানি ১৫.৬৬%, চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ১৭.৪১%, প্রাণহানি ১৬.২৩%, খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ১০.৩০%, প্রাণহানি ১০.৭৭%, বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা ৫.৯৫%, প্রাণহানি ৫.৬০%, সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা ৩.৯১%, প্রাণহানি ৩.৫৯%, রংপুর বিভাগে দুর্ঘটনা ১০.৪৪%, প্রাণহানি ১১.৩৫% এবং ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ৭.৪০%, প্রাণহানি ৯.৯১% ঘটেছে।

ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ২০২টি দুর্ঘটনায় ১৮৭ জন নিহত হয়েছেন। সিলেট  বিভাগে সবচেয়ে কম ২৭টি দুর্ঘটনায় ২৫ জন নিহত হয়েছেন। একক জেলা হিসেবে চট্টগ্রাম জেলায় ৩৪টি দুর্ঘটনায় ২৯ জন নিহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম চাপাইনবাবগঞ্জ জেলায়। এই জেলায় ৬টি দুর্ঘটনায় ১ জন নিহত হয়েছেন।

রাজধানী ঢাকায় ৬২টি (৯%) সড়ক দুর্ঘটনায় ২৪ জন (৩.৪৪%) নিহত এবং ৮৭ জন আহত হয়েছেন।

সড়ক দুর্ঘটনায় মানব সম্পদের ক্ষতির আর্থিক মূল্য: 
সড়ক দুর্ঘটনায় যে পরিমাণ মানব সম্পদের ক্ষতি হয়েছে তার আর্থিক মূল্য ২ হাজার ৪ শত ৬৩ কোটি ২০ লাখ টাকার মতো। যেহেতু সড়ক দুর্ঘটনার অনেক তথ্য অপ্রকাশিত থাকে, সেজন্য এই হিসাবের সাথে আরও ৩০% যোগ করতে হবে। iRAP (International Road Assessment Program) এর Method অনুযায়ী হিসাবটি করা হয়েছে। দুর্ঘটনায় যে পরিমাণ যানবাহন বা প্রপার্টি ড্যামেজ হয়েছে তার তথ্য না পাওয়ার কারণে প্রপার্টি ড্যামেজের আর্থিক পরিমাপ নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি।