
'জুলাইয়ের চেতনা নতুন সুবিধাবাদীদের হাতে বন্দি' বলে মন্তব্য করেছেন কলামিস্ট ও সাংবাদিক আনিস আলমগীর। তিনি বলেছেন, চেতনা কখনো চাপিয়ে দেওয়া যায় না—জাগাতে হয় হৃদয়ে, ত্যাগে, এবং উদাহরণে। বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
ফেসবুক পোস্টে আনিস আলমগীর বলেন, যখন জনগণ দেখে, ‘চেতনার’ নামে কিছু চেতনাবাজ রাতারাতি প্রভাবশালী ও ধনী হয়ে ওঠে, আইন তাদের ছুঁতে পারে না, থানায় হামলা চালানো হয় অথচ রাষ্ট্র দাঁড়ায় মবের পাশে—তখনই সেই চেতনা হয়ে ওঠে ব্যবসার পণ্য। তার মতে, একাত্তরের চেতনা যেমন সুবিধাবাদীদের হাতে বন্দি ছিল, তেমনি এখন জুলাইয়ের চেতনাও নতুন সুবিধাবাদীদের হাতে বন্দি। তিনি উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পক্ষে যারা ছিল, তারাই আজ ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ জন্য কোটা দাবি করছে।
তিনি আরও বলেন, সংসদে 'জুলাই শহীদ পরিবারদের' জন্য আসন সংরক্ষণের প্রস্তাব আসছে, যা নতুন এক রাজবংশ তৈরির ইঙ্গিত দেয়। এই অবস্থায় মুহাম্মদ জাফর ইকবাল বা ফরহাদ মজহারের কলাম লিখে চেতনা জাগানোর চেষ্টা বিরক্তি তৈরি করে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিভিন্ন দেশের বিপ্লবের উদাহরণ টেনে আনিস আলমগীর বলেন, জনগণ তখন মুখ ফিরিয়ে নেয়। চেতনা জাগাতে হলে নিজের জীবন আচরণ দিয়ে তা ধারণ করতে হয়, কলাম লিখে নয়। তিনি উল্লেখ করেন, ইরানের ইসলামি বিপ্লবের ‘চেতনা’, ভেনেজুয়েলার বলিভার বিপ্লব, কিংবা মিসরের তাহরির স্কয়ারের স্বপ্ন—সবই কয়েক বছর পর আরেক দল চেতনাবাজের দখলে চলে গেছে। জনগণ তখন বোঝে, চেতনা আর বিপ্লবের নামেই কেবল ক্ষমতা বদল হয়, বাস্তব বদলায় না।
তিনি আরও বলেন, চাঁদাবাজি, বিভ্রান্ত কর্মসূচি আর একের পর এক নাটকীয় ঘোষণা দিয়ে যখন একটি রাষ্ট্র অস্থিরতায় এগোয়, তখন ‘চেতনা’ শব্দটা নিজেই ভোতা হয়ে যায়। জুলাইয়ের এক বছর না যেতেই যখন সেই ‘চেতনা’কে মাসব্যাপী কর্মসূচির মাধ্যমে জোর করে গিলানো হয় এবং সেই কর্মসূচিও বারবার পরিবর্তিত হয়—তখন জনগণ বোঝে, চাপিয়ে দেওয়া আদর্শ টেকে না। তিনি প্রশ্ন তোলেন, জুলাই চেতনার এক বছরেই যদি এই হাল হয়, আগামী বছর কী হবে।
Comments