Image description

সরকার কর্তৃক পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করা হলেও সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলায় সুরমা নদীর দুই পাড় এখন পলিথিন ও অন্যান্য বর্জ্যের ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন বিভিন্ন হাটবাজারের ময়লা-আবর্জনা সরাসরি ফেলা হচ্ছে নদীতে, যা একদিকে নদীর নাব্যতা কমাচ্ছে, অন্যদিকে মারাত্মকভাবে দূষিত করছে নদীর পানি ও ব্যাহত করছে মৎস্য সম্পদের বংশবিস্তার।

উপজেলার বুক চিরে বয়ে যাওয়া সুরমা নদী জামালগঞ্জ সদরসহ ছয়টি ইউনিয়নকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছে। নদীর উত্তর পাড়ে সাচনা বাজার, রামনগর বাজার, মমিনপুর বাজার, দূর্লভপুর বাজারসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ হাটবাজার অবস্থিত। অন্যদিকে দক্ষিণ পাড়ে রয়েছে উপজেলা সদর, নোয়াগাও, লালপুর, হারুন মার্কেট, মনসুরাবাদ বাজার, মন্নান ঘাট বাজার, সেলিমগঞ্জ বাজার, গজারিয়া বাজার ও আমানীপুর বাজার।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উভয় পাড়ের প্রতিটি বাজারের পাশেই নদীর তীরে পলিথিন ব্যাগ, ককশিট, প্লাস্টিকের বোতল এবং বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের খালি প্যাকেটসহ নানান ধরনের বর্জ্যের স্তূপ জমে উঠেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, বাজার পরিষ্কার করার দায়িত্বে থাকা কর্মীরাও প্রতিদিনের আবর্জনা নদীতেই ফেলছেন।

সাচনা বাজারের পথচারী আবুল কালাম বলেন, "ময়লা আবর্জনা ফেলে নদীর পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে। এতে নদীর নাব্যতা দিন দিন কমছে, মাছের প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে এবং নদীর পানি দূষিত হচ্ছে।"

ফল ব্যবসায়ী আলী হোসেন জানান, "নদীর পাড়ে পলিথিনের স্তূপ দেখা যায়। পানিতে ভেসে বেড়ানো পলিথিন পরিবেশের ক্ষতি করছে এবং নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন প্রায় শত শত টন ময়লা নদীতে ফেলা হয়, কিন্তু কেউ কোনো বাধা দেয় না।"

পরিবেশ ও হাওড় উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা এই বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, "নদীতে প্লাস্টিক ফেলা হলে তা ধীরে ধীরে ক্ষয় হয়ে পানিতে ক্ষতিকর রাসায়নিক মেশায়, যা পানি দূষণের পাশাপাশি মানুষ ও প্রাণীর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী প্লাস্টিক খেলে তা খাদ্যচক্রের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে দীর্ঘমেয়াদি রোগের কারণ হতে পারে। সাম্প্রতিক গবেষণায় মানুষের রক্তেও মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।"

তিনি আরও বলেন, "প্লাস্টিক বর্জ্য নদীর স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে বন্যার ঝুঁকি বাড়াতে পারে এবং কৃষিকাজ ও নৌ চলাচলে সমস্যা তৈরি করতে পারে। পরিবেশ রক্ষা ও জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে নদীতে প্লাস্টিক দূষণ রোধ করা জরুরি। এর জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন।"

কাসমির রেজা পলিথিনের বিকল্প সহজলভ্য না থাকায় বাজারে এর অবাধ ব্যবহার ও উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন,  প্রতিটি হাটবাজারে পলিথিনসহ অন্যান্য বর্জ্য ফেলার জন্য বড় ডাস্টবিন স্থাপন এবং নিয়মিতভাবে সেই বর্জ্য পোড়ানোর ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই। এই পদক্ষেপ গ্রহণ করলে সুরমা নদীর দূষণ অনেকাংশে কমানো সম্ভব হবে।

স্থানীয় সচেতন মহল মনে করছেন, সরকারি নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও পলিথিনের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। তারা অবিলম্বে পলিথিনের বিকল্প সহজলভ্য করার পাশাপাশি প্রতিটি বাজারে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। অন্যথায় সুরমা নদীর পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।