Image description

সাবেক এমপি শাম্মি আহম্মেদের গুলশানের বাসায় চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেপ্তার বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের বহিষ্কৃত নেতা আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, চাঁদাবাজির টাকা তারা সমান ভাগ করে নিতেন।

রোববার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সেফাতুল্লাহের আদালত রিয়াদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও গুলশান থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোখলেছুর রহমানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। এদিন রিয়াদসহ চার আসামিকে আদালতে হাজির করা হলে তিনি স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তি দিতে সম্মত হন।

জবানবন্দিতে রিয়াদ জানান, ১৭ জুলাই রাতে তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিনিয়র সহসভাপতি জাকির হোসেন মঞ্জুর মাধ্যমে গুলশান জোনের ডিসির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি ডিসিকে জানান, গুলশানের ৮৩ নম্বর রোডের ১৩ নম্বর বাসায় আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক এমপি শাম্মি আহম্মেদ অবস্থান করছেন। ডিসি গুলশান থানার ওসিকে বিষয়টি জানান। রাত দুইটার দিকে রিয়াদ, মঞ্জু, জানে আলম অপু, সাবাব হোসেন, আতিক শাহরিয়ার, সাকাদাউন সিয়াম, তানিম ওয়াহিদ ও আতিকসহ কয়েকজন থানায় যান। ওসি জানান, রাতে গুলশান সোসাইটিতে অভিযান সম্ভব নয় এবং ফজরের আযান পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। পরে গুলশান থানার একটি টিম তাদের সঙ্গে দেওয়া হয়।

রিয়াদ জানান, তিনিসহ পুলিশ সদস্যরা শাম্মি আহম্মেদের বাসায় যান। গুলশান থানার ওসি (তদন্ত) অভিযানের নেতৃত্ব দেন। শাম্মিকে বাসায় না পেয়ে সকাল সাড়ে সাতটায় তারা ফিরে আসেন। পরে জানে আলম অপু জানান, তিনি শাম্মির বাসা থেকে একটি এয়ারপড নিয়েছেন। সকাল ১০টার দিকে রিয়াদ ও অপু এয়ারপড ফেরত দিতে বাসায় যান। সেখানে অপু শাম্মির স্বামী সিদ্দিক আবু জাফরকে বলেন, “শাম্মি বাসায় আছেন। আমরা তাকে পুলিশে দেব।” ভয় পেয়ে সিদ্দিক টাকা অফার করেন। অপু ৫০ লাখ টাকা দাবি করলেও সিদ্দিক জানান, এত টাকা বাসায় নেই। শেষে ১০ লাখ টাকা (নিজের কাছ থেকে ৫ লাখ ও ভাইয়ের কাছ থেকে ৫ লাখ) দিয়ে তারা চলে আসেন। রিয়াদ জানান, এই টাকা তারা সমান ভাগ করে নেন।

মামলার অপর তিন আসামি—মো. ইব্রাহিম হোসেন, সাকাদাউন সিয়াম ও সাদমান সাদাব—কে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াদুর রহমান। এরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের নেতা ছিলেন এবং ঘটনার পর তাদের সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া, ২ আগস্ট জানে আলম অপুকে চার দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।

মামলার এজাহার অনুযায়ী, ১৭ জুলাই সকালে রিয়াদ ও কাজী গৌরব অপু শাম্মির বাসায় গিয়ে ৫০ লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার দাবি করেন। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তারা সিদ্দিককে আওয়ামী লীগের সমর্থক আখ্যায়িত করে গ্রেপ্তারের হুমকি দেন। বাধ্য হয়ে সিদ্দিক ১০ লাখ টাকা দেন। ১৯ জুলাই রাতে তারা আবার ফিরে এসে হুমকি দেন। ২৬ জুলাই বিকেলে রিয়াদের নেতৃত্বে আসামিরা বাকি ৪০ লাখ টাকা দাবি করে হুমকি দেন। পুলিশকে জানালে পাঁচজনকে হাতেনাতে আটক করা হয়, তবে কাজী গৌরব অপু পালিয়ে যান।

পুলিশ জানায়, রিয়াদের বাসা থেকে ২২.৫ কোটি টাকার চেক ও বাড্ডার একটি ফ্ল্যাট থেকে ২.৯৮ লাখ টাকা নগদ উদ্ধার করা হয়েছে। এই ঘটনায় সিদ্দিক আবু জাফর গুলশান থানায় ছয়জনের নামে মামলা করেন।