Image description

বিগত সরকারের আমলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ে, জনগণ আস্থা হারায়। গণঅভ্যুত্থানের পর এ বাহিনীর সংস্কার নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু এখনো কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি চোখে পড়ছে না। অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূর্ণ হতেই চলছে নানান আলোচনা-সমালোচনা। 

একদিকে বছরব্যাপী আন্দোলনের ঢল ঠেকাতে ব্যস্ত সরকার, অন্যদিকে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি। জানা যায়, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন এই সরকার চলতি এক বছরে মোকাবিলা করেছে প্রায় পৌনে দুইশটি আন্দোলন। কিন্তু এরই মধ্যে রাজধানীসহ দেশের নানা স্থানে ছিনতাই, ডাকাতি ও সহিংসতার ঘটনায় জনগণের নিরাপত্তা নিয়ে উঠেছে বড় প্রশ্ন। 

রাজনৈতিক অভ্যুত্থানের পর প্রশাসন, অর্থনীতি ও সমাজজুড়ে তৈরি হয় শূন্যতা। সেই মুহূর্তে অনেকেই আশার আলো দেখেছিলেন ড. ইউনূসের নেতৃত্বে। কিন্তু দিন যতই যাচ্ছে, হতাশার পাল্লা ভারী হচ্ছে। জনগণ শুধু হতাশ হচ্ছেন না, তাদের আতঙ্কে দিন কাটছে। 

গত বুধবার বিকালে গাজীপুরের সাহাপাড়া এলাকায় সৌরভকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে দুর্বৃত্তরা। একদিন পর বৃহস্পতিবার রাতে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় কুপিয়ে খুন করা হয় তুহিনকে। এসব ঘটনার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। একদিনের ব্যবধানে গাজীপুরে একজন সাংবাদিককে কুপিয়ে হত্যা এবং আরেকজনকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে গুরুতর আহত করার ঘটনায় দেশের আইনশৃঙ্খলার নাজুক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ আরও বাড়ছে। 

প্রকাশ্যে পিটিয়ে গুরুতর আহত করার ঘটনায় দেশের আইন-শৃঙ্খলার নাজুক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ আরও বাড়ছে। সাম্প্রতিক সময়ে সাংবাদিকদের ওপর হামলা বা সাংবাদিক নির্যাতনের অনেক ঘটনা ঘটেছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী গত ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশে অন্তত ১৯৬ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে হত্যার হুমকি পেয়েছেন ৮ জন। এই সময়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে মামলার আসামি হয়েছেন ৪৪ জন সাংবাদিক। 

২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের সময় পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান ছয় সাংবাদিক। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের একজন কর্মকর্তা বলেন, জুলাই মাসে অন্তত এক ডজন সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কোনো সন্ত্রাসী, খুনি আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে প্রকাশ্যে মানুষের সামনে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সামনে যদি হত্যা করতে পারে, তাতে বোঝা যায়, কোনো আইন-শৃঙ্খলা নেই। 

তারা দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে, সেই অবস্থাটাও নেই। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে যেভাবে মামলা হচ্ছে সেসব খবর দেশের অনেক গণমাধ্যমে না এলেও বিদেশে উঠে আসছে। সংবাদকর্মীরা কেন নিরাপদ না- সেই প্রশ্ন উঠছে। এটি একটি দেশের জন্য কাম্য নয়। যেকোনো ব্যক্তি যদি কোনো অপরাধ করেন, সে জন্য আইন আছে, কোর্ট আছে, যা হচ্ছে, দেশের জন্য ভালো হচ্ছে না। 

সরকার পতনের পর যখন নতুন সরকার এলো তখন গণঅভ্যুত্থানের পরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনাটা সরকারের প্রধান কাজ ছিল। প্রশ্ন উঠছে, সরকার কি শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না? সরকার সবার আস্থা হারাচ্ছে, মানুষের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হচ্ছে। বিদেশে দুর্নাম হচ্ছে সরকার এসব ব্যাপারে উদাসীন এবং এই উদাসীনতা মানেই প্রশ্রয় দেয়া। 

রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে সাংবাদিকদের জন্য সরকারের যে দায়, সরকার সেটা কখনোই পূরণ করেনি। দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও ক্রমেই ক্ষোভ বাড়ছে জনমনে। পুলিশের তথ্যানুযায়ী, এক বছরে শুধু ডাকাতির সময় খুনের ঘটনায় ৩৯৭টি মামলা হয়েছে। ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ ঘটেছে ৭০০টিরও বেশি। সরকার বলছে, আগের বছরের তুলনায় এখন পরিস্থিতি অনেক ভালো। অনেকটা নিজের প্রশংসা নিজে করার মতো হয়েছে। ভুক্তভোগীরা এমন ইতিবাচক কথা মানতে নারাজ।

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বিগত সরকারের আমলে শাসকচক্রের গালভরা বুলি শুনে জনগণ বিরক্ত ছিল, একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি নিশ্চয়ই তারা দেখতে চাইবে না। দেশের সব থানার কার্যক্রম পুনরুদ্ধার ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় জরুরি ব্যবস্থার বিকল্প নেই। মনে রাখতে হবে, পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে না পারলে সরকার জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারবে না। 

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় মানুষের জান ও মাল পড়েছে অনিশ্চয়তার মধ্যে- এটি অস্বীকার করার উপায় নেই। দেশের সব থানার কার্যক্রম পুনরুদ্ধার ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় জরুরি ব্যবস্থার বিকল্প নেই। মনে রাখতে হবে, পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে না পারলে সরকার জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারবে না। তাই আমাদের প্রত্যাশা, অন্তর্বর্তী সরকার জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আরও কঠোর হবে। জননিরাপত্তার জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সক্রিয় করতে অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে- এমনই প্রত্যাশা আমাদের। 

সম্প্রতি যেসব অপরাধের ঘটনা ঘটছে তার কোনো কোনোটিতে অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ইন্ধন রয়েছে, আবার কিছু সুযোগসন্ধানীও ঢুকে পড়েছে। অপরাধীরা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে দেশে একটা নৈরাজ্য তৈরির চেষ্টা করছে। অনতিবিলম্বে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি দেখতে চাই আমরা। দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে সরকারকে দায়িত্বশীল ভূমিকার বিকল্প নেই।