Image description

সুনামগঞ্জের ছাতক চন্দ্রনাথ বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো.মাহমুদুল হাসানের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগে বেতন-ভাতা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বিদ্যালয় ম্যানিজিং কমিটি ও শিক্ষা বোর্ডের আপিল অ্যান্ড আরবিট্রেশন কমিটির পরবর্তী সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত ওই অভিযুক্ত ওই শিক্ষককে গত আগষ্ট মাস থেকে বেতন-ভাতা বন্ধ রাখতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ব্যবস্থাপককে চিটি দেয়া হয়েছে। 

এছাড়াও বিদ্যালয়ের ওই শিক্ষককে শ্রেনী কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এরই সাথে সিলেটের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবরে অভিযুক্ত শিক্ষককে চাকুরী থেকে বরখাস্থের সুপারিশ করা হয়েছে। 

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের নির্বাচনী পরীক্ষার উত্তরপত্র মুল্যায়নে চন্দ্রনাথ বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. মাহমুদুল হাসান (ইংরেজী) কর্তৃক খাতার নম্বরপত্রে স্বজনপ্রীতি ও জালিয়াতির মাধ্যমে নম্বর প্রদানে সুস্পষ্ট আলামত পাওয়া গেছে। যে কারনে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিক অবক্ষয় সৃষ্টি হওয়ায় কেন অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে না, এই মর্মে গত বছরের ২ ফেব্রুয়ারী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে অত্র কারণ দর্শানোর জন্য বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কর্তৃক একটি নোটিশ প্রদান করা হয়। কিন্ত অভিযুক্ত ওই শিক্ষক মাহমুদুল হাসান কারণ দর্শানোর কোন জবাবই দেননি। এছাড়াও সহকারী শিক্ষক মাহমুদুল হাসানের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে। 

একজন শিক্ষক কর্তৃক নানা অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়টি খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ায় উপজেলা জুড়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠে। এবিষয়ে একই বছরের ১০ এপ্রিল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে আহবায়ক, বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক সাহানারা বেগম ও বিদ্যালয় অভিভাবক প্রতিনিধি মোহাম্মদ আলী আসগর সোহাগকে সদস্য মনোনীত করে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই তদন্ত কমিটি দীর্ঘ অনুসন্ধান ও স্বাক্ষ্য গ্রহন শেষে গত ১০ মার্চ বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি ও উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা কাজী মো.মহসিন বরাবরে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। 

তদন্ত কমিটির লিখিত দীর্ঘ প্রতিবেদন পর্যালোচনায় বলা হয়, সহকারী শিক্ষক মো.মাহমুদুল হাসান ২০২৪ সালের এসএসসি নির্বাচনী পরীক্ষার ফলাফলের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করে খাতা পূর্ণঃমুল্যায়নের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ও অভিভাবক লিখিত আবেদন করেন। এরই প্রেক্ষিতে পরীক্ষার খাতা পূর্ণঃমুল্যায়ন করতে গিয়ে উত্তরপত্রে নম্বর প্রদানে বেশ কিছু গুরুতর অসংহতি ও অনিয়ম ধরা পড়ে। ফলাফল প্রকাশের পর ইংরেজী বিষয়ে উত্তরপত্র মুল্যায়নকারী অভিযুক্ত শিক্ষক মো. মাহমুদুল হাসান উত্তরপত্র মুল্যায়নে যথাযথ নম্বর প্রদান না করে শিক্ষার্থীদের তাদের ন্যায্য নাম্বর প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত করেছেন। যা পেশাগত দায়িত্ব পালনে অদক্ষতা, অবহেলা ও অর্থনৈতিক ফায়দা হাসিলের উদ্দেশ্যে প্রাইভেট পড়ানোর কথা বলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার পরবর্তী সময়ে নিজ বাসায় ডেকে নিয়ে উত্তরপত্র মুল্যায়ন তাদেরকে দিয়ে উত্তর লেখান, এমনকি নিজ হাতে শিক্ষার্থীদের ভিন্ন ভিন্ন খাতায় উত্তর লিখে দেন শিক্ষক।

বিষয়টি অভিযুক্ত শিক্ষক মাহমুদুল হাসানের বিরুদ্ধে তদন্তে অভিযোগ প্রমানিত হয়েছে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কর্তৃক কারন দর্শানোর নোটিশ প্রদানের জন্য বলা হলেও তা অমান্য করেছেন। 

অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক মো.মাহমুদুল হাসান তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে তার বক্তব্যে অভিযোগের বিষয়ে সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, নির্বাচনী পরীক্ষার খাতা মুল্যায়ন করতে গিয়ে মানসিক ভাবে বিকারগ্রস্থ হয়ে পড়েছিলাম। যা অশোভনীয় এবং অন্যায় বলে মনে করি। তিনি এ ধরনের কাজে আর কখনো সস্পৃক্ত না হওয়ার অঙ্গিকার করে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি প্রদানের আবেদন জানিয়েছেন। 

চন্দ্রনাথ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান (ভারপ্রাপ্ত) প্রধান শিক্ষক শেখ মো.রবিউল ইসলাম এবিষয়ে বলেন, সহকারী শিক্ষক মো.মাহমুদুল হাসানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় তাকে বরখাস্তের দন্ড অনুমোদনের জন্য ব্যবস্থা গ্রহনে শিক্ষা বোর্ডে লিখিত আবেদন করা হয়েছে। 

এবিষয়ে সিলেটের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ফারুক আহমদ বলেন, সহকারী শিক্ষক মো.মাহমুদুল হাসানের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে আবগত আছি। এবিষয়ে আগামী মাসে বোর্ড মিটিংয়ে বরখাস্তের সুপারিশের বিষয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।