Image description

জলোচ্ছস, বন্যা, নিম্নচাপ, লঘুচাপ ও অতিবৃষ্টির ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে জমিতে চাষ বিলম্ব হয়েছে। পাশাপাশি নষ্ট হয়েছে বেশ কিছু আমনের বীজতলা। এতে বিলম্বে বীজ বপণের আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। আমন আবাদের জমিতে এখনও পানিতে পরিপুর্ণ থাকায় সঠিকভাবে বীজ বপণ করতে পারছেন না কৃষকরা। একারণে আমন আবাদ বিলম্বের আশঙ্কা করছেন কৃষক ও কৃষি বিভাগ। 

বৃষ্টির পানি অনেকটাই আশীর্বাদ কৃষকের জন্য। কিন্তু অতিবৃষ্টির ফলে সেই আর্শিবাদ অভিশাপে রূপ নিয়েছে। অনেক বীজতলা বৃষ্টির কারণে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। যা চাষাবাদে রোপণের অনুপযোগী হয়েছে। ট্রাক্টর দিয়ে জমিতে হাল চাষে আমন বীজ রোপনের জন্য প্রস্তুত করেছেন ঝালকাঠি জেলার কৃষকেরা। অনেকে আবার জমি থেকে বীজ তোলার পর রোপণে ব্যস্ত হয়ে ওঠেছেন। প্রাকৃতিক পানি চাপ বাড়ায় সঠিকভাবে রোপণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। 

অপরদিকে সার কীটনাশক ডিজেল ও শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধিতে কাঙ্খিত লাভ নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষক। এ অবস্থায় সারের কৃত্রিম সংকট ঠেকানোর দাবি তাঁদের। ভালো লাভের আশায় সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মাঠে মাঠে হাড়ভাঙা পরিশ্রমেও যেন ক্লান্তি নেই কৃষকদের। একবিঘা জমিতে আমন উৎপাদনে কৃষকের ১৮হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ গুনতে হয়। লঘু চাপের কারণে পানি বৃদ্ধি আর বৃষ্টির পানিতে আমন আবাদি জমি তলিয়ে থাকায় বীজ রোপণে ব্যাঘাত হচ্ছে কৃষকের। 

কামরুল হোসেন নামে এক কৃষক জানান, এবছর জ্যৈষ্ঠ মাস থেকেই বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অনেক বেশি। তারমধ্যে আবার নিম্নচাপ আর লঘুচাপ এবং অতিবৃষ্টির কারণে জমি তলিয়ে গেছে। আবাদের সময় প্রায় শেষ পর্যায়ে, তবুও পানি না কমায় বীজ রোপণ করা যাচ্ছে না। আগাম যারা বীজ রোপণ করেছেন তাদের অনেকেরই বীজ পচে গেছে। পুনরায় বীজ রোপণ করার জন্য পানি কখন কমবে সেই আশায় অপেক্ষা করছে। 

তিনি আরো জানান, কয়েক বছর ধরে ধানের চারা রোপণের পর যখন রাসায়নিক সারের প্রয়োজন। ঠিক তখনই ডিলার ও সার ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে সারের মূল্য বাড়িয়ে দেয়। তখন দোকানে দোকানে ধরনা দিয়েও সার পাওয়া যায় না। 

আবদুল হাই নামে আরেক কৃষক বলেন, কয়েক বছর ধরে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে সারের দাম বাড়িয়ে দেয়। এমন ঘটনা ঘটলেও প্রশাসন বলে, সারের কোনো সংকট নেই। যা কৃষকের জন্য দুর্ভাগ্যের বিষয়। আমরা চাই প্রকৃতপক্ষে এ সংকট দূরীকরণে প্রশাসন যথাযথ ভূমিকা রাখবে। 

ঝালকাঠি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. সোলায়মান জানান, ঝালকাঠি জেলায় ৪৬৭৭০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হচ্ছে। এরমধ্যে উচ্চ ফলনশীল (উফশী) ১১হাজার ৫শ হেক্টর এবং স্থানীয় ৩৫হাজার ২৭০হেক্টর জমিতে আবাদ হচ্ছে। 

এ বিষয়ে ঝালকাঠি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ঝালকাঠি জেলায় ৪৬৭৭০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হচ্ছে। জমিতে পানি থাকায় নিচু এলাকার কৃষকের বীজ রোপণে বিলম্ব হচ্ছে। কৃষকের ধান উৎপাদন যেন ব্যাহত না হয়, তাই কৃষি বিভাগ পরামর্শ দেয়াসহ বাজার মনিটরিংয়ে জোরদার ভূমিকা রাখছে। তবে অন্যান্যবারের চেয়ে এবার আরও কঠোর অবস্থানে যাবে প্রশাসন। কৃষকের সুবিধার কথা চিন্তা করে কৃষি বিভাগ তাদের পাশে থাকবে। 

তিনি আরো জানান, জেলার সকল বীজতলার বীজ নষ্ট হয়নি। সামান্য কয়েক জায়গার বীজ নষ্ট হয়েছে। তাতে বীজ সংকট হবে না বলেও জানান তিনি।