Image description

বরিশালে দিন দিন প্রাইভেট বা কোচিং বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়ছেন সরকারি-বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকরা। স্কুলগুলোর অধিকাংশ শিক্ষকরা প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করছেন শিক্ষার্থীদের। আর স্কুল কর্তৃপক্ষ নিচ্ছে না তেমন কোন পদক্ষেপ। ফলে শিক্ষার গুনগতমান থেকে পিছিয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হচ্ছে অভিভাবকদের।

জানা গেছে, বরিশাল সরকারি জিলা স্কুল, সরকারি সদর গালস্ স্কুল, সরকারি হালিমা খাতুন স্কুল, সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজ, রুপাতলী সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কাউনিয়া সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকরা প্রাইভেট ও কোচিং বাণিজ্যে জড়িত। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারি স্কুলের শিক্ষকরা সাধারণত প্রাইভেট পড়াতে পারেন না এবং এই বিষয়ে সরকারি নীতি রয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী, স্কুল চলাকালীন বা নির্দিষ্ট সময়ের বাইরেও, শিক্ষকরা নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়াতে পারেন না এবং কোনো বাণিজ্যিক কোচিং সেন্টারের সাথে যুক্ত হতে পারেন না।

বরিশাল সরকারি জিলা স্কুল প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সুনামের সাথে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় ভালো ফলাফল করছে শতবর্ষী এ প্রতিষ্ঠানটি। তবে কিছু অসাধু শিক্ষকদের কারণে দিন দিন সুনাম নষ্ট হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ শিক্ষকরা প্রাইভেট বা কোচিং বাণিজ্যের সাথে জড়িত। ক্লাসে ঠিকমত পাঠদান করাচ্ছেন না তারা। ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য প্রাইভেট পড়তে শিক্ষার্থীদের চাপ প্রয়োগ করছেন। এমনকি তারা কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অমান্য করে কোচিং বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন।

জিলা স্কুলের বেশ কয়েকজন শিক্ষক আছেন, যারা ১০০ থেকে ১৫০ শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়ান। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রতি মাসে হাতিয়ে নেয় লাখ লাখ টাকা। এসব শিক্ষকরা অঢেল সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। কেউ কেউ বরিশাল নগরীতে আলিসান বাড়ি নির্মাণ করেছেন।

একইভাবে সরকারি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, হালিমা খাতুন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় সহ অধিকাংশ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সরকারি নীতি অমান্য করে প্রাইভেট ও কোচিং বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। আবার অনেক শিক্ষক স্কুলের ভবনে পড়ান প্রাইভেট।

জিলা স্কুলের নবম ও দশম শ্রেণীর একাধিক শিক্ষার্থী নাম প্রাকাশ না করার শর্তে বলেন, শিক্ষকরা ক্লাসে ঠিকমত পড়াচ্ছেন না। বাংলা-ইংরেজী-গণিত-ব্যবসা শিক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করা হয়। প্রাইভেট না পড়লে পরীক্ষায় নম্বর কম দেয়ার হুমকি দেয়।

অভিভাবকরা বলছেন, টাকা পয়সা খরচ করে সরকারি জিলা স্কুলে ভর্তি করেছি। এখানে শিক্ষকরা ক্লাসে ঠিকমত পাঠদান করান না। সন্তানদের প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করেন। ফলে সন্তানদের লেখাপড়ায় অতিরিক্ত টাকা খরচ হয়। আর স্কুলে যাওয়ার চেয়ে প্রাইভেট বা কোচিং যাওয়ার আগ্রহ বেশি সন্তাদের। তারা বিষয়টি দেখার জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আর্কষন করেছেন।

প্রাইভেট বাণিজ্যের সাথে জড়িত জিলা স্কুলের সহকারী শিক্ষক (ইংরেজি) মোঃ রিয়াজুল ইসলাম মানবকণ্ঠকে বলেন, তিনি স্কুলে অতিরিক্ত ক্লাস নিচ্ছেন। প্রাইভেট পড়াচ্ছেন না। তাছাড়া তিনি কোন শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করেননি। জিলা স্কুলের অপর এক সিনিয়র শিক্ষক মোঃ সফিকুল ইসলাম (ব্যবসায় শিক্ষা) মানবকণ্ঠকে বলেন, শিক্ষকরা প্রাইভেট পড়াবেন, এখানে ক্ষতির কি আছে। পাস-ফেলের কথা বলে কোন শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করা হচ্ছে না। শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছায় প্রাইভেট পড়তে আসেন।

এ ব্যাপারে বরিশাল জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) অনিতা রানী হালদার মানবকণ্ঠকে বলেন, আমি স্কুলে প্রাইভেট পড়াতে নিষেধ করেছি। কিন্তু তারা মানছেন না। আর বাসায় প্রাইভেট পড়াচ্ছেন কিনা তা তিনি জানেন না। বিষয়টি তিনি জেলা প্রশাসকসহ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন।

এদিকে কয়েকটি স্কুলের শিক্ষকরা দুই তিনটি করে প্রাইভেট ব্যাচ পড়ান। সেক্ষেত্রে একেক ব্যাচে ৩০-৪০ জন করে শিক্ষার্থী প্রাইভেট পড়েন। যা কোচিং বাণিজ্যের চেয়েও ভয়াবহ। অপরদিকে এসব ব্যাচ থেকে ১৫ দিনে জন প্রতি ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত নি”েছন অসাধু শিক্ষকরা। 

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন মানবকণ্ঠকে বলেন, সরকারি স্কুলের শিক্ষকরা কোচিং এর সাথে জড়িত থাকলে অবশ্যই অভিযোগ সাপেক্ষে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।