Image description

ময়মনসিংহ নগরীর র‌্যালীর মোড়ে (পাটগুদাম আদমজি) অবস্থিত আদমজী জুট মিলের ১০০ কোটি টাকা মূল্যের ৮৪ শতাংশ সরকারি জমি মাত্র ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকায় বিক্রির ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আদালতের নির্দেশে গত ৬ জুন এই জমির দলিল মিরাশ উদ্দিনের নামে সম্পন্ন হয়। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার মুখে দুদক তদন্তে নামে।

জমির ইতিহাস ও বিতর্ক
১৯৬৩ সালে রেবতী মোহন দাসের মালিকানাধীন এই জমি আইনি প্রক্রিয়ায় আদমজী জুট মিলস লিমিটেডের নামে হস্তান্তরিত হয়। জুট মিল বন্ধ হওয়ার পর জমিটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে এবং বিআরএস জরিপে সরকারি সম্পত্তি হিসেবে রেকর্ডভুক্ত হয়। প্রায় ৬০ বছর পর, ২০২২ সালে রবীন্দ্র মোহন দাস নিজেকে রেবতী মোহন দাসের ছেলে দাবি করে জেলা প্রশাসক ও বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের বিরুদ্ধে মামলা (নং-৫১৪/২২) দায়ের করেন। আদালত ২০২৪ সালের ৮ মে এই মামলা খারিজ করে দেয়।

তবে, মামলা খারিজের আগেই রবীন্দ্র মোহন দাস মিরাশ উদ্দিন সুমনকে আমমোক্তারনামা প্রদান করেন। এরপর মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করে নতুন ছানি মামলা দায়ের করা হয়। মামলা চলমান থাকা অবস্থায় ৬ জুন সদর আদালতের বিচারক পবন চন্দ্র বর্মণ জমিটি ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকায় মিরাশ উদ্দিনের নামে দলিল করার নির্দেশ দেন, যা সেদিনই সদর সাব-রেজিস্ট্রার বাস্তবায়ন করেন।

স্থানীয়দের ক্ষোভ ও তদন্ত
র‌্যালীর মোড়ের বাসিন্দা আবুল হোসেন বলেন, “প্রধান রাস্তার পাশে অবস্থিত এই জমি যেকোনো শিল্পপতি ১০০ কোটি টাকায় কিনতে প্রস্তুত। মাত্র সাড়ে ৫ লাখ টাকায় বিক্রি হওয়া হাস্যকর।” এই ঘটনায় সমালোচনার মুখে দুদক রোববার (২৪ আগস্ট) সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, পাটকল করপোরেশন ও আদালতে নথিপত্র যাচাই করে। দুদকের সহকারী পরিচালক রাজু মোহাম্মদ সারোয়ার হোসাইন বলেন, “অনেকের গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। দলিল ও ডিক্রি বাতিলের জন্য আদালতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে আরও তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

আদালত ও প্রশাসনের বক্তব্য
ময়মনসিংহ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি মো. আজহারুল হক বলেন, “বাদী-বিবাদীর কাগজপত্র যাচাই করে আদালত দলিল সম্পাদনের নির্দেশ দিয়েছিল। অন্য আদালতে মামলার বিষয়টি জানা ছিল না। বর্তমানে ছানি মামলার মাধ্যমে পূর্বের দলিলের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।” সদর সাব-রেজিস্ট্রার মো. জাহিদ হাসান বলেন, “আদালতের নির্দেশ মেনে দলিল সম্পন্ন করেছি। এর বাইরে আমার কিছু করার ছিল না।”

জেলা প্রশাসনের পদক্ষেপ
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আজিম উদ্দিন জানান, তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন পূর্বের দলিলের কার্যক্রম স্থগিত করতে ছানি মামলা দায়ের করেছে।