
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে বিএনপি। আজ রোববার বেলা তিনটার দিকে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বরাবর এই অভিযোগ করেন বিএনপির গুম, খুন ও তথ্য সংরক্ষণ সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকা মো. সালাহ উদ্দিন খান।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের দেড় দশকে বিএনপির নেতা-কর্মীদের গুম ও হত্যা এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় দলটির কর্মী-সমর্থকদের হত্যার ঘটনায় দলটির পক্ষ থেকে অভিযোগ করার পরও এখন পর্যন্ত কোনো প্রকার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। তদন্ত করে এখন পর্যন্ত কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়নি। অভিযুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তারও করা হচ্ছে না। তাই দলটি পুনরায় এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করছে।
বিএনপির লিখিত অভিযোগে বলা হয়, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে আওয়ামী লীগ সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্যের সহায়তায় বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের বছরের পর বছর গুম করে রেখে হত্যা করেন। এখন পর্যন্ত অনেকেই নিখোঁজ। ঠিক এভাবে বিএনপিকে ধ্বংস ও নিশ্চিহ্ন করার জন্য ২ হাজার ২৭৬ জনকে ‘বন্দুকযুদ্ধের’ নামে হত্যা করা হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়ায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করেছে বিএনপি। কিন্তু এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না বলে বিএনপির কাছে প্রতীয়মান হচ্ছে।
গত বছরের ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ৮৪৮ জন শহীদের মধ্যে ৫২৬ জনই বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মী ও সমর্থক বলেও লিখিত অভিযোগে দাবি করা হয়েছে। বিএনপি তাতে আরও বলেছে, তাঁদের জন্য ন্যায়বিচার চেয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আসামিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তদন্ত করে অভিযুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। এখন পর্যন্ত কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়নি।
ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর বরাবর আজ গুমের ঘটনায় পৃথক ৯টি অভিযোগ করেছে বিএনপি। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর, সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকুসহ অনেকের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ আনা হয়েছে।
পৃথক ৯টি অভিযোগ অনুযায়ী, ২০১০ সালে খাগড়াছড়ির মহালছড়ি থেকে আবু সালাম, ২০১১ সালে শাহবাগ থেকে আমিনুল ইসলামকে, গুলিস্তান থেকে মো. বশির উদ্দীনকে, মিন্টু রোডের ডিবি অফিসের সামনে থেকে মিন্টু হাসানকে, ২০১২ সালে গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে মাসুদকে (মৃদুল), ২০১৪ সালের নারায়ণগঞ্জ থেকে মো. নুরু মিয়াকে, ২০১৫ সালে রাজধানীর বিজয়নগর পানির ট্যাংকির সামনে থেকে এস এম শিহাবুদজ্জামানকে (পাভেল), ২০১৭ সালে গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শাহ-আলম তালুকদারকে এবং ২০১৮ সালে শ্যামলী থেকে আহমেদ হৃদয়কে গুম করা হয়েছে।
Comments