Image description

পটুয়াখালীর কলাপাড়া পৌরসভার অপরিকল্পিত উন্নয়ন কার্যক্রম নাগরিকদের জন্য দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শহরের ব্যস্ততম সড়কগুলোতে জলাবদ্ধতা, খানাখন্দে ভরা রাস্তা, অপরিকল্পিত ড্রেন নির্মাণ এবং ময়লা ব্যবস্থাপনার অব্যবস্থাপনা নিত্যদিনের সমস্যা। এসব সমস্যা নাগরিকদের জীবনযাত্রাকে দুর্বিষহ করে তুলেছে।

জলাবদ্ধতা ও অব্যবস্থাপনার চিত্র
কলাপাড়া পৌরসভার ৩ নম্বর রহমতপুর ওয়ার্ডের একটি আবাসিক এলাকার ব্যস্ত সড়কে বর্ষা মৌসুমে মাসের পর মাস পানি জমে থাকে। এমন দৃশ্য শহরের অয়েলমিল মসজিদ সড়ক, টিএনও সড়ক, হাসপাতাল সড়ক, ইসমাইল তালুকদার টেকনিক্যাল সড়ক, নজরুল ইসলাম সড়ক, পল্লী বিদ্যুৎ সড়ক, নাচনাপাড়া সড়ক, রহমতপুর কানেকটিং সড়ক ও ভূমি অফিস সড়কেও দৃশ্যমান। খানাখন্দে ভরা এসব সড়কে যানবাহন চলাচল ও পথচারীদের চলাফেরা দুরূহ হয়ে পড়েছে।

অপরিকল্পিত ড্রেন নির্মাণও সমস্যা আরও জটিল করেছে। সড়কের চেয়ে উঁচু ড্রেন নির্মাণের ফলে ফুটপাথ হিসেবে ব্যবহারের উপযোগিতা হারাচ্ছে। ফের ড্রেন ভেঙে সড়কের সমান্তরাল করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও এতে পৌরসভার অর্থ অপচয় হচ্ছে। এছাড়া, অনুমোদনহীন নকশায় বাড়ি নির্মাণ ও সড়ক সংকুচিত হওয়ায় শহরের আবাসিক এলাকাগুলোতে জটিলতা বাড়ছে।

অর্থ লোপাটের অভিযোগ
সূত্র জানায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকার উন্নয়ন কাজের বেশিরভাগ ব্যয় হয়েছে সড়ক ও ড্রেন নির্মাণে। এছাড়া, ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে ফেরীঘাট চৌরাস্তা থেকে বড় মসজিদ পর্যন্ত ওয়াকওয়ে নির্মাণ কাজ চলছে। স্থানীয় বিএনপি নেতার অভিযোগ, এই কাজে ৫০ লাখ টাকার বেশি খরচ হবে না, বাকি অর্থ লুটপাটের আশঙ্কা রয়েছে।

হাট, বাজার ও বাসস্ট্যান্ডের ইজারা আদায়ে অস্বচ্ছতা এবং দরপত্র প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগও উঠেছে। দরপত্র প্রকাশের আগেই কাজ সম্পন্ন করা, বিল ছাড়ের আগেই অর্থ আত্মসাৎ এবং প্রভাবশালী নেতাদের দাপটে প্রকৌশলীদের হুমকি দেওয়ার ঘটনাও প্রকাশ পেয়েছে।

নাগরিকদের ক্ষোভ
রহমতপুর ৩ নম্বর ওয়ার্ডের নাগরিক অ্যাডভোকেট বিএইচ তালুকদার সুমন বলেন, “আমার বাসার সামনের সড়কে মাসের পর মাস পানি জমে থাকছে। স্বাভাবিক চলাফেরা ব্যাহত হলেও কেউ পদক্ষেপ নিচ্ছে না।”

পৌর কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
কলাপাড়া পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মশিউর রহমান বলেন, “কলাপাড়া পৌরসভার উন্নয়নে কোনো মাস্টার প্ল্যান করা হয়নি। শহরের বেশ কিছু সড়ক সংস্কারে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। এডিবি’র বরাদ্দ পেলে সংস্কার কাজ বাস্তবায়ন করা হবে।” তিনি আরও বলেন, “সকল দরপত্র প্রক্রিয়া অনলাইনে সম্পন্ন হয়। বাইরে কী হচ্ছে, সেটি আমাদের দেখার বিষয় নয়। ক্ষমতাসীনদের দাপট সবসময়ই থাকে।”

চ্যালেঞ্জ ও সমাধানের পথ
জলাবদ্ধতা, মশার উপদ্রব, পানি সরবরাহ সংকট, ময়লা ব্যবস্থাপনার অব্যবস্থাপনা এবং গবাদিপশুর উপদ্রব নাগরিকদের নিত্য সঙ্গী। টেকসই উন্নয়নের জন্য মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন, স্বচ্ছ দরপত্র প্রক্রিয়া এবং কঠোর নজরদারির মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান জরুরি।