Image description

গাজীপুরে নারী উদ্যোক্তার সৃজিত ফলের বাগানের রাস্তা কেটে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন প্রতিহিংসা পরায়ণ প্রতিবেশীরা। সরকারি খাস জমির উপর কয়েক যুগের প্রচলিত পুরনো রাস্তা কেটে কলাগাছ লাগিয়ে ও কাঁটা বিছিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে। চার দিক থেকেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে প্রায় একশ একর আয়তনের সুবিশাল বাগান নিয়ে এখন বিপাকে পড়েছেন নারী উদ্যোক্তা স্কুল শিক্ষিকা জোহরা আক্তার।

বাগানে প্রবেশের উভয় পাশের রাস্তা কেটে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করায় বাগানে সরবরাহের অপেক্ষায় থাকা লাখ লাখ টাকার ফল ও বিপুল পরিমাণের আখের চারাসহ বিভিন্ন গাছের চারা নষ্ট হচ্ছে। উদ্যোক্তা জোহরা আক্তারের ত্রিশ বছরের শিক্ষকতার অর্জিত অর্থ এবং ব্যাংকের লোন নিয়ে দীর্ঘদিনে গড়া এ বাগান। বতর্মানে ওই বাগানে দেশ এবং বিদেশ থেকে ক্রেতারা আসতে না পাড়ায় ইতি মধ্যে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকার ক্ষতি সাধন হয়েছে।

এছাড়া তিনি ব্যাংকের কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে পারছেন না। ব্যাংকের কিস্তির টাকার পরিশোধে দুশ্চিন্তায় দিশেহারা জোহরা বেগম।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের সিঙ্গার দীগি গ্রামে প্রায় ১শ বিঘা আয়তনের বিশাল বাগানের ভেতর জোহরা আক্তারের মাটির ঘর। ছেলে-মেয়েরা উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে থাকেন বিদেশে। স্বামী-স্ত্রী কৃষিশ্রমিকদের দিয়ে বাগানটি পরিচর্যা করেন।

জোহরার স্বামী ফজলুল হক মোড়ল ‘চ্যানেল আই’ এর গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি। তিনি গাজীপুর জেলার একজন সিনিয়র সাংবাদিক ও গাজীপুর টেলিভিশন সাংবাদিক ক্লাবের সভাপতি। সর্ব মহলে এই দম্পতির ব্যাপক সুনাম ও সুখ্যাতি থাকা সত্বেও সমাজের হিংসুটে মানুষের কাছে তারা আজ নিতান্তই অসহায়।

ফজলুল হক মোড়ল জানান, নিজের পৈত্রিক জমিতে তাঁর স্ত্রীর ইচ্ছাতেই প্রথমে পারিবারিক চাহিদা মেটাতে ছোট পরিসরে একটি বাগান করেন। এতে ব্যাপক সম্ভাবানা দেখা দেয়ায় তাঁর স্ত্রী বাগানের পরিসর বাড়ানোর উদ্যোগ নেন। পাশেই আরো কিছু জমি কিনে বৃহত্তর পরিসরে বাগান গড়ে তুলেন। বাগানের পাশেই মৎস্য খামারও করেন। বর্তমানে তাঁর বাগানে দেশি-বিদেশী চার সহস্ত্রাধিক বিভিন্ন প্রতাজির ফলজ গাছ রয়েছে। বাগানের ৩৫ বিঘা জমি জুড়ে উন্নত মানের সিডলেস লেবুসহ ৩ প্রকারের প্রায় ৬ হাজার লেবু গাছ রয়েছে। ফজলি ও আমেরিকান পালমার আমসহ মৌসুমী ও বারোমাসি ৪০ প্রকারের চার সহস্রাধিক আম গাছ রয়েছে। প্রায় ৫০০ লটকন গাছ ও দার্জিলিং প্রজাতির কমলা-সহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশি-বিদেশী ফলের সম্ভার তাঁর বাগানে। রসখানে দেড় বিঘা জমিতে উন্নত জাতের (৩০-৫০ ফিট উচ্চতার) আখ ক্ষেত করেছেন। তাঁর বাগান থেকে উন্নত জাদের রেঙ্গুন বাঁশের চারা বিদেশেও রপ্তানি হয়।

বাগানটির প্রধান উদ্যোক্তা জোহরা আক্তার গাজীপুরের বাঘের বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেলে বাগান সৃজন তথা কৃষিতে সফলতা ও সম্ভবানার গল্প আমাকে উদ্ধুব্ধ করে। প্রথমে পারিবারিক চাহিদা মেটানোর জন্য ছোট পরিসরে বাগান সৃজন করি। পরবর্তীতে এতে ব্যাপক সফলকতা দেখে আরো সম্ভাবনার আশায় বাগানের পরিসর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই। শ্বশুরের রেখে যাওয়া জমির সাথে আরো কিছু জমি কিনে ৫০০ একর জমিতে বাগান ও পাশেই মৎস্য খামার গড়ে তুলি। বর্তমানে লবণ ও ভোজ্য তেল ছাড়া আমার কোন কিছুই কিনতে হয় না। মাঝে সরিষাও করেছিলাম। তখন তেলও কিনতে হতো না। বর্তমানে পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে সমাজ তথা দেশের চাহিদাও মিটাচ্ছি। বিদেশ থেকেও ব্যাপক সারা পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের এ সফলতায় ঈর্ষান্বিত হয়ে সম্প্রতি সমাজের কতিপয় দৃষ্কৃতকারী ব্যক্তি বিভিন্নভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন। শত্রুতা করে বাগানের পূর্ব পাশে সরকারি খাস জমির ওপর দিয়ে যাওয়া প্রধান সড়কের প্রবেশমুখ কেটে পাশের ধান ক্ষেতের সাথে মিশিয়ে দিয়েছে। বাকি রাস্তার মাঝে কোথাও গলাগাছ ও কোথাও বিভিন্ন কাঁটাগাছ বিছিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে। এতে আমার মতোই প্রতিবেশী আরো একটি নিরীহ পরিবারও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, বাগানের উত্তর পাশের নিজস্ব রাস্তাটিও কেটে সংকোচিত করে দিয়েছে, যাতে কোনো গাড়ি বা বাহন বাগানে যেতে না পারে। কী কারণে তাঁর সাথে এমন শত্রুতা করছে তিনি নিজেও জানেন না। 

সাংবাদিক ফজলুল হক মোড়ল বলেন, বালাই নাশক কারখানার সামনে প্রধান সড়ক থেকে বাগান অভিমুখী এলাকার শাখা রাস্তাটির প্রবেশমুখের উভয় পাশের জমি আমার চাচাতো ভাইদের। রাস্তাটি যাতে তারা বন্ধ না করেন সেজন্য তাদেরকে ওই জমির মূল্য বাবদ টাকাও দিয়েছি। কিন্তু এর পরও দীর্ঘ দিনের প্রচলিত রাস্তাটি তারা কেটে পাশের ক্ষেত্রের সাথে মিশিয়ে দিয়েছে। 

তিনি বলেন, শুনেছি রাস্তার প্রবেশমুখের দুই পাশের ক্ষেত তারা একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে। তাই ক্রেতার শর্ত পূরণ করতে গিয়ে তারা রাস্তার প্রারম্ভিক ওই অংশে প্রায় ৫০ ফিট জায়গা কেটে ফেলেছে। এতে বাধা দেওয়ায় রাস্তার অবশিষ্ট অংশে গলা গাছ রোপন ও কাঁটা বিছিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে। এমনকি বাগানের উত্তর পাশের নিজস্ব রাস্তাটিও কেটে একেবারে সংকোচিত করে ফেলেছে। তিনি যাতে বাগান ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হন সেজন্যই ঘটনার মূল হোতা মোক্তারুল করীম শামীম মোড়ল, নজরুল মোড়ল, ফাহাদ মোড়ল গং উঠেপড়ে লেগেছে বলে অভিযোগ করেন। 

এব্যাপারে মোক্তারুল করীম শামীম মোড়ল বলেন, বাগানে কোথায় দিয়ে যাবে এটা তাদের ব্যাপারে। আমাদের ব্যক্তিগত জায়গা দিয়ে চলাচল করতে দিব না। রাস্তার মাথাসহ দুই পাশে জমি আমাদের। ওই জমি আমরা অন্যত্র বিক্রি করে দিয়েছি। রাস্তার ওই জমি বাবদ ফজলুল হকের কাছ থেকে কোনো টাকা নেননি বলেও দাবি করেন। এমনকি রাস্তার বাকি অংশ সরকারি নয়, বরং তাদের পৈত্রিক জমির ওপর দিয়েই গেছে বলে দাবি করেন।

এবিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ব্যারিস্টার সজিব আহমদ বলেন, রাস্তার বন্ধের ঘটনা জানার পরে ঘটনাস্থলে মাওনা ভূমি-উপসহকারী কর্মকর্তাকের পাঠানো হয়। এতে প্রাথমিক ভাবে সত্যতা পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে পরবর্তী আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।