Image description

রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায় স্বদেশ স্বর্ণালী আবাসন প্রকল্পে এম এ কাইয়ূম নির্মাণ করেছে আঠারো তলা বিশিষ্ট টুইন টাওয়ার ‘ছ (কিউ) হোটেল’। অথচ আইন অনুযায়ী বিমানবন্দরের আশপাশে এ ধরনের বহুতল ভবন নির্মাণ সম্পূর্ণ অবৈধ।

সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশ (CAAB) ও আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা (ICAO)-এর নিয়ম অনুযায়ী- রানওয়ের দুই প্রান্ত থেকে অন্তত ১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকায় ভবনের উচ্চতা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকে। রানওয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকায় (lateral side) ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত ভবন নির্মাণে উচ্চতার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। 

ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের (HSIA) ১০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের ভেতরে বহুতল ভবন নির্মাণ করতে হলে CAAB-এর বিশেষ অনুমোদন বাধ্যতামূলক। কিন্তু বিমানবন্দর থেকে মাত্র ৭ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত খিলক্ষেতের স্বর্ণালী আবাসন প্রকল্প এলাকায় কোনো অনুমোদন ছাড়াই নির্মিত হয়েছে এই ১৮ তলা বিশিষ্ট টুইন টাওয়ার। 

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ ধরনের উঁচু ভবন বিমানের উড্ডয়ন ও অবতরণে ভয়াবহ ঝুঁকি তৈরি করে। একজন শীর্ষ বিমান কর্মকর্তা বলেন ‘টাওয়ার থেকে প্রতিফলিত আলো কিংবা নেভিগেশন সিগন্যালের বিঘ্নতা মারাত্মক দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। বিমান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে এ অঞ্চলের আশপাশে মাইলস্টোন দুর্ঘটনার মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে।’

এ ধরনের উঁচু ভবন বিমান চলাচলের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করে। মাইলস্টোন বিমান দুর্ঘটনার মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না।

সিভিল এভিয়েশনের অবস্থান: এ বিষয়ে সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশের (ঈঅঅই) গ্রুপ ক্যাপ্টেন নুর আলম মানবকণ্ঠকে বলেন, ‘বিষয়টি আমরা গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখব। কোনো ধরনের আইন লঙ্ঘন প্রমাণিত হলে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ 

রাজধানীর আকাশসীমায় বিমান চলাচলের নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে ফেলেছে এম এ কাইয়ূমের এই টুইন টাওয়ার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই শক্ত পদক্ষেপ না নিলে শুধু বিমান নিরাপত্তা নয়, নগর পরিবেশ ও জনজীবনও মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়বে।

বিমানবন্দরের পাশে কাইয়ূমের বেআইনি টুইন টাওয়ার নির্মাণ: বিপদের মুখে বিমান চলাচল রাজধানীর আকাশসীমায় বিমান চলাচলের নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে ফেলেছে এম এ কাইয়ূমের এই টুইন টাওয়ার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই শক্ত পদক্ষেপ না নিলে শুধু বিমান নিরাপত্তা নয়, নগর পরিবেশ ও জনজীবনও মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়বে।

পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়াই আবাসন ব্যবসা: সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, কাইয়ূমের প্রতিষ্ঠান স্বদেশ প্রোপার্টিজ বিভিন্ন এলাকায় আবাসন প্রকল্প হাতে নিয়ে প্লট বিক্রির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এসব প্রকল্পের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের বাধ্যতামূলক পরিবেশগত ছাড়পত্র নেয়নি। পরিবেশবিদরা বলছেন, ছাড়পত্রবিহীন আবাসন প্রকল্প শুধু পরিবেশ ধ্বংস করে না, বরং জলাবদ্ধতা, নগর বন্যা এবং কৃষিজমি নষ্টের মতো ভয়াবহ সমস্যা ডেকে আনে। 

পরিবেশ আইনবিদদের মতে, আইন অমান্যকারী এসব প্রতিষ্ঠানকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দিলে অন্যরা একই পথে হাঁটবে। আবাসন খাতে স্বচ্ছতা আনতে হলে অনুমোদন প্রক্রিয়া কঠোরভাবে কার্যকর করার বিকল্প নেই। রাজধানীর খিলক্ষেত ও মাদানী এভিনিউ এলাকায় আইন লঙ্ঘন করে খাসজমি, ফ্লাড-ফ্লো জোন ও প্রাকৃতিক জলাধার ভরাটের অভিযোগ উঠেছে স্বদেশ প্রপার্টিজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে। 

প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০ এবং রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা আইন-২০১০ ভঙ্গ করায় প্রতিষ্ঠানটিকে গত ১২ ডিসেম্বর নোটিশ দিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।