সাদা পাথর লুট: তদন্ত কমিটিতে অভিযুক্ত ইউএনও, সুষ্ঠু তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জে অবস্থিত জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র সাদা পাথরে ব্যাপক লুটপাটের ঘটনায় জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটিতে কোম্পানীগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুন্নাহারকে অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। ইউএনওর বিরুদ্ধে লুটপাট ঠেকাতে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগ থাকলেও তাকে তদন্ত কমিটিতে রাখায় সুষ্ঠু তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এই লুটপাটে স্থানীয় প্রশাসনের দায় দেখছে। এমনকি, ইউএনও আজিজুন্নাহারের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগও উঠেছে।
শনিবার ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, আজিজুন্নাহার আনসার সদস্যদের নিয়ে সাদা পাথর এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকলেও তার সামনেই নৌকায় করে পাথর লুট করা হচ্ছে, কিন্তু কোনো বাধা দেওয়া হয়নি। তবে ভিডিওটির সময়কাল সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি।
আজিজুন্নাহার গত ১৪ জানুয়ারি ২০২৫ থেকে কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। রোববার তাকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। পরিবেশকর্মী ও স্থানীয়দের অভিযোগ, স্থানীয় প্রশাসনের যোগসাজশে এই লুটপাট সংঘটিত হয়েছে।
স্থানীয়দের দাবি, গত বছরের ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে সাদা পাথর ও আশপাশের এলাকা থেকে প্রায় দেড় কোটি ঘনফুট পাথর লুট হয়েছে।
সমালোচনার মুখে গত ১২ আগস্ট সিলেটের জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদ তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পদ্মাসেন সিংহ, এবং সদস্য হিসেবে রয়েছেন ইউএনও আজিজুন্নাহার ও পরিবেশ অধিদপ্তরের একজন সহকারী পরিচালক। কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হলেও রোববার দুপুর পর্যন্ত কোনো প্রতিবেদন জমা পড়েনি।
দুদকের সিলেট কার্যালয়ের উপ-পরিচালক রাফি মো. নাজমুস সাদাত গত বুধবার সাদা পাথর পরিদর্শন শেষে বলেন, “স্থানীয় প্রশাসনের আরও সতর্ক ও কার্যকর ভূমিকা প্রয়োজন ছিল।”
পরিবেশ আইনবিদ সমিতি-বেলা সিলেটের সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট শাহ শাহেদা আক্তার বলেন, “প্রশাসন লুটপাটে উদাসীন ছিল। ইউএনওকে তদন্ত কমিটিতে রাখা জনগণের সঙ্গে তামাশা।”
জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদ জানান, ইউএনও সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবেন এবং তার কাছে থাকা তথ্য তদন্তে সহায়ক হবে। তিনি বলেন, “ইউএনওর গাফিলতি প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এদিকে, রোববার সিলেট সদর উপজেলার সালুটিকর ভাটা এলাকায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে মাটিচাপা অবস্থায় ১১ হাজার ঘনফুট পাথর জব্দ করা হয়েছে এবং দুজনকে আটক করা হয়েছে। শনিবার মধ্যরাতে কোম্পানীগঞ্জ থেকে চারজনকে আটক করা হয়। এ ছাড়া, শনিবার ধোপাগুলে আড়াই লাখ ঘনফুট, গোয়াইনঘাটের বিন্নাকান্দি থেকে ২৫০০ ঘনফুট এবং জৈন্তাপুর থেকে ৫০০০ ঘনফুট পাথর উদ্ধার করা হয়। ১৩ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া এসব অভিযানে এখন পর্যন্ত চার লাখ ঘনফুটের বেশি পাথর উদ্ধার করা হয়েছে।
শুক্রবার কোম্পানীগঞ্জ থানায় খনিজ সম্পদ অধিদপ্তর প্রায় দুই হাজার অজ্ঞাত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করে, এবং পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, বিএনপি ও আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা এই লুটপাটে জড়িত। ইতোমধ্যে পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আলমগীর হোসেন গ্রেপ্তার হয়েছেন, এবং কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহাব উদ্দিনের পদ স্থগিত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট সাত দিনের মধ্যে লুট হওয়া পাথর উদ্ধার করে যথাস্থানে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছে এবং জড়িতদের তালিকা দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে। রিটটি হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে সরওয়ার আহাদ করেন, এবং শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ।
Comments