
ওপারে কুড়িগ্রামের চিলমারী, এপারে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ। মাঝখান দিয়ে বয়ে চলেছে দেড় কিলোমিটার প্রশস্ত তিস্তা নদী। বর্ষাকালে ভয়ংকর হয়ে ওঠা এই নদী তছনছ করে দেয় একের পর এক বসতভিটা ও ফসলি জমি। যার ফলে নিঃস্ব হয়ে পড়ে এই অঞ্চলের মানুষ। দুই উপজেলার লাখ লাখ মানুষের নদী পারাপারের একমাত্র ভরসা ছিল খেয়া নৌকা। দিনের বেলায় খেয়া নৌকায় নদী পার হওয়া গেলেও সন্ধ্যা নামলেই বন্ধ হয়ে যেত সেই খেয়া। দূরত্ব মাত্র দেড় কিলোমিটার হলেও খেয়া ধরতে না পারলে বা দেরি হলে নদী পার হতে না পেরে অপেক্ষারত মানুষদের খেয়াই রাত কাটাতে হতো। সকাল হলে তবেই তারা বাড়ি ফিরতে পারতেন। দীর্ঘদিনের আন্দোলনের পর অবশেষে বাস্তবে রূপ পেতে চলেছে সেই স্বপ্নের তিস্তা সেতু। সেতুটি নির্মিত হলে নদী পারাপারের দুর্ভোগ লাঘব হবে দুই পারের লাখ লাখ মানুষের।
অবকাঠামোর বেশিরভাগ কাজ শেষ হওয়ায় সেতুটি এখন প্রায় সম্পন্ন হওয়ার পথে। কুড়িগ্রাম অংশে সংযোগ সড়ক, সেতুর বাতি ও পিচ ঢালাইয়ের কাজ শেষ হলেই সেতুটি পুরোপুরি তৈরি হয়ে যাবে। সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পথে থাকায় তিস্তার দুই পাড়ের মানুষের মনে আশা জেগেছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে সেতুটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
জেলা এলজিইডির তথ্যে জানা যায়, এই সেতুটি তাদের বাস্তবায়িত দেশের দীর্ঘতম সেতু হতে চলেছে। ১ হাজার ৪৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতুতে ৩১টি স্প্যান বসানো হয়েছে। দুই পারের মানুষের স্বপ্নের এই সেতুর নির্মাণ কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, এই সেতুটি চালু হলে তিস্তা পাড়ের মানুষেরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন এবং নদী ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাবেন। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে, কুড়িগ্রাম, উলিপুর, নাগেশ্বরী, ভুরাঙ্গামারী, চিলমারী থেকে সড়কপথে ঢাকার দূরত্ব প্রায় ১৩৫ কিলোমিটার কমে যাবে। শুধু তাই নয়, রংপুর বিভাগীয় শহরের সাথেও দূরত্ব কমবে। এই অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে।
রুহুল কবির মুকুল নামের এক মাদ্রাসা শিক্ষক বলেন, কুড়িগ্রাম যেতে বা অন্য পাড় থেকে এই পাড়ে আসতে নৌকায় দুই ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। এছাড়াও, সিরিয়ালের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। কিন্তু সেতু চালু হলে মাত্র ১০ মিনিটে এক পাড় থেকে অন্য পাড়ে যাওয়া যাবে। এর ফলে সময় ও অর্থের অনেক সাশ্রয় হবে।
গাইবান্ধা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাবিউল ইসলাম জানান, সেতুর পাশাপাশি প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার এলাকায় স্থায়ীভাবে নদী শাসন করা হচ্ছে। সেতুর উভয় পাশে ৮৬ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। সেতুটি চালু হলে দুই পাড়ের মানুষের যোগাযোগ বাড়বে এবং অনেক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। ২০২৫ সালের জুন মাসে সেতুটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৬ জানুয়ারি সেতুটির নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হলেও নানা জটিলতা কাটিয়ে ২০২১ সালে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সেতুটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৩০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।
Comments