
জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী মন্তব্য করেছেন যে, দেশে যেসব ঘটনা ঘটছে, সেগুলো কোনো দৃশ্যমান ঐক্যের ঘটনা নয়, বরং নির্বাচন পেছানোর দিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, "গোপালগঞ্জে এনসিপিকে মিটিং করতে হবে কেন? বাংলাদেশের যেকোনো জায়গায় যে কেউ মিটিং করতে পারে, কিন্তু জানা কথা গোপালগঞ্জে মিটিং করলে এরকম একটা সিন ক্রিয়েট হবে। এরপরে মামলা হবে।"
শামীম হায়দার পাটোয়ারী আরও বলেন, যে ধরনের বার্তা দিয়ে মিটিংটা করা হয়েছে, তাতে "অনেকেই ভেবেছিল বঙ্গবন্ধুর কবর ওইদিন গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে।" তার এই বক্তব্য গোপালগঞ্জে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ঘটনাকে একটি নাটকীয় পরিস্থিতি হিসেবে দেখছে এবং এর পেছনে একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে বলে ইঙ্গিত দিচ্ছে।
সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টক শো অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘পুরো জিনিসটা তো সাজানো নাটক এবং একটা সাজানো দাবার বোর্ড। সেখানে এনসিপি একটা বোর্ড যাদেরকে এঙ্গেজ করা হয়েছে নির্বাচন যেন না হয় এই পরিমাণ এনার্কি তৈরি করো। সেখান থেকে কক্সবাজারে গিয়ে সালাহউদ্দিন সাহেবের মতো এত জ্ঞানী মানুষের বিপক্ষে এমনভাবে কথা বলল।
চিটাগাং গিয়ে বলল, অর্থাৎ এনার্কি। এনসিপি আস্তে আস্তে এনার্কি পার্টি হয়ে যাচ্ছে। তাদের একমাত্র এজেন্ডা হচ্ছে ইলেকশনটাকে পিছিয়ে দেওয়া বা না করা। কারণ, স্ট্যাটাস করে তাদেরকে ফেভার করছে।
তারা সরকারি প্রোটোকল পাচ্ছে, সরকারি প্রটেকশন পাচ্ছে, ট্যাংকে করে তাদেরকে প্রটেকশন দেওয়া হচ্ছে। তো ঘটনা কিন্তু ঘটে গেল অনেকগুলো।’
শামীম বলেন, ‘এনসিপিকে গোপালগঞ্জ থেকে আর্মির কনভয় করে ব্যাক করতে হলো। এবং খুব দুঃখজনক যে ঘটনাটি ঘটলো এতগুলো শিশু মারা গেল। সেখানে কয়েকজন উপদেষ্টাকে ৯ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়েছিল।
৯ ঘণ্টা প্যারালাল সময় সচিবালয়ে সম্পূর্ণ রেন্সাম করেছে এবং টোটাল হাজার হাজার ছেলেপেলে ঢুকে পড়েছে। দেশে তো রাষ্ট্র নাই। সরকার নাই। সরকার বলে কিছু আছে বলে আমার মনে হচ্ছে না। এবং একটামাত্র অর্গানাইজেশন কিছুটা কাজ করার চেষ্টা করছে সেটা সেনাবাহিনী।’
এখনো সেনাবাহিনীতে চেইন অফ কমান্ড আছে। সেনাবাহিনী যদি উদ্ধার কাজে তাৎক্ষণিক না যেত, আমার বিশ্বাস ক্যাজুয়ালিটি আরো অনেক বেশি হতো। একমাত্র সেনাবাহিনী আছে। সেই সেনাবাহিনীকে আমরা যদি পুলিশ বানিয়ে ফেলি, ভুয়া বলি, গালি দেই, সেনাবাহিনী ডিমোরালাইজড হয়ে যাবে। সেনাবাহিনী যদি ডিমোরালাইজড হয়ে যায়, তাহলে দেশ আর কোনো অবস্থাতে থাকবে না। কোনো ক্রাইসিস হ্যান্ডেল করার মতো কোনো অর্গানাইজেশন এই মুহূর্তে নাই। এই যে এতগুলো ক্রাইসিস একসঙ্গে হচ্ছে কারণ কী? কারণ হচ্ছে প্রথম থেকেই একটা অনৈক্য সরকারে ছিল। দেখুন উইনস্টন চার্চিল যখন প্রাইম মিনিস্টার হলেন ওনাকে কিন্তু রেওয়ার্ড দেওয়া হয়নি। উনাকে পানিশমেন্ট দেওয়া হয়েছে। উনার পার্টি একটা সিংকিংশিপ তখন ছিল যে ইংল্যান্ড হেরে যেতে পারে জার্মানির সঙ্গে। পুরো ইউরোপ হেরে যাচ্ছে উইনস্টন চার্চিলের ওপর দিয়ে সব চলে যায়। ওকে প্রাইম মিনিস্টার করে দাও উনি অপোজিশনের সাপোর্ট ছিল উইনস্টন চার্চিল প্রাইম মিনিস্টার হয়ে প্রথমেই তার পার্টির চরম দুজন অপোজিশন হ্যালিফ্যাক্স এবং চ্যাম্বারলেনকে ওয়ার্ক নিয়ে নিলেন এবং অপোজিশন লেবার পার্টির লোককেও নিলেন। উনি যুদ্ধটাকে কিন্তু প্রতিহত করলেন।
তিনি বলেন, ড. ইউনূস স্যার সবাইকে নিয়ে দেশ চালালে আজকে এই সমস্যাটা হতো না। উনি প্রথমেই উনার প্রায়োরিটি সেট করতে পারেননি। উনার প্রায়োরিটি সেট হওয়া উচিত ছিল। ইলেকশন ইলেকশন ইলেকশন। উনি এসে প্রথমে তিন মাসের মধ্যেই ইলেকশন দিলে আমার মনে হয় সে সময় এনসিপির ছেলেপেরাও স্বতন্ত্র দাঁড়ালেও পাস করতে পারত। কিন্তু দিন যাচ্ছে স্বাভাবিকভাবে পলিটিক্স করলে পলিটিক্যাল ব্যাগেজ ঘারে চলে আসে। মঞ্চ করে অনুষ্ঠান করলেই প্রশ্ন আসে টাকাটা কে দিল? কেন দিল? কোত্থেকে আসলো? এগুলো খুব কমন বিষয়। এই ব্যাগেজগুলো নিয়ে এই তরুণ ছেলেপেরা সামনের দিনে রাজনীতিতে আগাবে কিভাবে? খুব কঠিন হবে এবং পলিটিক্স ইজ নট এন আর্ট অফ ওয়ার।
পলিটিক্স ইজ এন আর্ট অফ প্যাসিফিকেশন। দেশটাকে শান্ত করা। এই শান্ত করার কোন উদ্যোগ কিন্তু আমরা গত ১০ মাসে সরকার থেকে দেখিনি। শিক্ষার্থীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠার পদত্যাগ চাচ্ছে। পুরো ব্যাপারটার মধ্যে আমি তো ওনার কোনো ফল দেখি না। আসলে ওনার নাম কেন আসলো হঠাৎ করে? এখন আমি ওনাকে পার্সোনালি চিনি সব ব্যবস্থা নিয়ে অত্যন্ত আপসেট।
যেসব ইনভেস্টমেন্টের তত্ত্ব দেওয়া হয়েছে ইনভেস্টমেন্ট যে শো করা হয়েছে টোটালি ফারস। কোনো বড় ইনভেস্টর ক্যাটাগরিক্যালি বাংলাদেশকে ইনভেস্টমেন্ট এর ব্যাপারে কোনো আশ্বাস এই মুহূর্তে দেয়নি। দেওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। যেখানে দেশের স্টেবিলিটি নাই সেখানে কি করে ইনভেস্টমেন্ট হবে? ইলেক্টেড গভমেন্ট থাকলে পাঁচ বছর থাকলে অনেক ইনভেস্টর সেখানে ইনভেস্ট করে। তো এখান থেকে উত্তোরণের তো আমি কোনো ওয়ে আউট দেখি না এবং যে আলোচনাটি হলো সেখানে কিন্তু এনসিপিকে ডাকা হলো এবং এনসিপি ড. ইউনূস স্যারের ঠিক ডান পাশেই ছিলেন।
তো এটা তো ইঙ্গিতবাহী একটা নিবন্ধনবিহীন দল হয়ে গেল চারটা মুখ্য দলের মধ্যে একটা দল। তাদেরকে বলা হচ্ছে বড় দল। তো আমি তো মনে করি এখনো নিবন্ধন পায়নি তারা। মার্কা পায়নি। তো কিভাবে তাদেরকে আসলে এটা তো বৈষম্য। চরম এবং এটাও একটা প্রশ্ন যে দৃশ্যমান ঐক্য বলতে আসলে এই একেবারে পরস্পরবোবিধি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দৃশ্যমান ঐক্য এবং এই ঐক্যটা হচ্ছে একটা রাজনীতিকে কার সঙ্গে ঐক্য করবে করবে না সেটা একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ডিক্টেট করতে পারে কিনা না। অবশ্যই পারে উনি তো ভাগ করে ফেলছেন। আসলে দেশটাকে ভাগ করে ফেলছেন।
এবং এই সর্বশেষ বৈঠকের পরে এটাও দেখলাম যে আপনারা আপনাদের এই বিভিন্ন দলের নেতারা নাকি বলেছেন যে এই অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ যেটা নিয়ে সরকার উদ্বিগ্ন। আপনারা একেক দলের বিরুদ্ধে এটা রাজনীতিতে হয়েই থাকে। ব্যাপারটা কি আসলে এই মানে আপনারা যা বলেন বলার জন্য নাটক নাটকের মঞ্চে দর্শক থেকে দর্শকদের যে আপনি জামাতের বিরুদ্ধে বলছেন। বা জামাত আপনার বিরুদ্ধে বলার জন্য বলেন। আসলে আপনারা মিন করছেন আমার জায়গা থেকে আমি বলার জন্য বলি না। এটা আপনার সরকারের আমার নিজস্ব আমার নিজস্ব মেধা জ্ঞান বুদ্ধি যে ওই বৈঠকে এটা বলা। আমার সেটা দিয়ে আমি আমার বক্তব্য তুলে ধরার চেষ্টা করি। আপনার উপদেষ্টা পরিষদ দিয়ে আমার যেটা মন্তব্য যে আপনার এটা আমার ব্যক্তিগত অভিমত। যে আমাদের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা শুরুতেই আরো গ্রহণযোগ্য আরো অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের দ্বারা উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করতে পারতেন। এতে রাষ্ট্র উপকৃত হতো। আজকে উপদেষ্টা পরিষদ নিয়ে আমরা সমালোচনা করতে চাই না। কারণ আমরা যেহেতু এই উপদেষ্টা পরিষদকে বা সরকারকে আমরা সহায়তা দিচ্ছি একটা ক্রিটিক্যাল সময়ে। একটা দুর্যোগময় সময়ে দায়িত্ব নিয়েছে।
উপদেষ্ঠা পরিষদ নিয়ে এনসিপিও কোনো জায়গায় দেখলাম সমাবেশ করতে গিয়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে নিয়ে বড় ধরনের অভিযোগ নিয়ে এসছে। স্বজন প্রীতির অভিযোগ নিয়ে এসছে। এর আগে, আমাদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে নিয়ে তারা কথা বলেছে। আরো অনেক উপদেষ্টাকে নিয়ে তারা কথা বলছে। সুতরাং এটা এটা স্বীকার করতে হবে যে আপনার উপদেষ্টা পরিষদ একটা দুর্বলতা রয়েছে। দ্বিতীয়ত হচ্ছে, আপনার সচিবালয়ের মধ্যে মারাত্মক স্থবিরতা রয়েছে। যেটা প্রমাণ এই শিক্ষা উপদেষ্টা শিক্ষা সচিবের যে আপনার ঘটনার মধ্য দিয়ে যে প্রকাশ হয়েছে সাম্প্রতিক সমিতি প্রমাণ করে যে বর্তমানে সচিবালয়ে আপনার একটা স্থবীরতা বিরোজমান। এবং সমন্বয়ের অভাব বিদ্যমান রয়েছে। দ্বিতীয়ত হচ্ছে যে আপনার সরকার এই নয় মাসের মধ্যে যে কাজগুলো করতে পারতো যেমন, আজকে আপনার লক্ষাধিক শূন্য পদে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে প্রাইমারি স্কুল থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় বহু শূন্য পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া। উনি অত্যন্ত সুষ্ঠভাবে শান্তিপূর্ণভাবে পিএসসি গঠিত হয়ে গেছে। আপনার বিভিন্ন অধিদপ্তরের যে নিয়োগগুলো আছে শূন্য
পদগুলো আছে দিলে এখানে অন্ততপক্ষে লক্ষাধিক কর্মসংস্থানের সুযোগ পেত। বেকার লোকরা আজকে শিক্ষিত বেকার যারা আজকে ঘুরে বেড়াচ্ছে এদেরকে আপনার নিয়োগ প্রক্রিয়া উনি সম্পন্ন করতে পারতেন।
জাতীয় পার্টির (জাপা) এ মহাসচিব বলেন, ‘আমি মনে করি বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বিচারের সঙ্গে কোনো শর্ত দেওয়া ঠিক হবে না। এটা পাঁচ বছরও চলতে পারে, ১০ বছরও চলতে পারে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, দেশকে যদি সত্যিকার অর্থেই আপনি ভালো জায়গায় নিয়ে যেতে চান আমি আশাবাদী। কারণ এত বড় রক্তপাতের মধ্য দিয়ে এখনো পর্যন্ত গুমের কোনো বিচার আমরা পাইনি। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের আমরা এখনো বিচার পাইনি। এবং এই অপরাধগুলোর সঙ্গে যারা সরাসরি জড়িত, এখনো তারা বিভিন্ন জায়গায় কর্মরত আছে।’
Comments