
মানুষের জীবনে সবচেয়ে বড় অর্জন হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। কিন্তু আমাদের অনেক ভালো কাজও শুধুমাত্র নিয়তের ত্রুটির কারণে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। লোক-দেখানো ইবাদত, অহংকার এবং গর্ব মানুষের আমলকে মূল্যহীন করে তোলে। এমন অনেক মানুষ আছেন যারা অনেক ভালো কাজ করেও পরকালে আল্লাহর কাছে কোনো প্রতিদান পাবেন না। কেননা তাদের উদ্দেশ্য ছিল মানুষের প্রশংসা কুড়ানো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন নয়।
দয়ালু ও ক্ষমাশীল আল্লাহ তাআলা গুনাহগারদের ক্ষমা করে দেন, যদি তারা অনুতপ্ত হয়ে তওবা করে। কিন্তু তিনি মন্দ কাজের কঠোর শাস্তিদাতাও। একজন মুমিন গুনাহ করে অনুশোচনা করে তওবা করবে— এটাই ইসলামের শিক্ষা। আল্লামা ইবনে কাইয়ুম (রহ.) বলেছেন, "যে গুনাহ করে সে মানুষ। যে গুনাহে অটল থাকে সে শয়তান। আর যে গুনাহ থেকে তওবা করে, সে হলো মুমিন।"
একটি হাদিস থেকে জানা যায়, কিয়ামতের দিন যে তিন ধরনের ব্যক্তিকে সবার আগে জাহান্নামে পাঠানো হবে তাদের আমলগুলো ছিল লোক-দেখানো।
আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, কিয়ামতের দিন যাদের বিচার সবার আগে করা হবে তাদের মধ্যে রয়েছেন— একজন শহীদ, একজন দানশীল ব্যক্তি এবং একজন আলেম।
১. শহীদ: একজন শহীদকে আল্লাহ তাঁর নেয়ামতগুলো দেখিয়ে প্রশ্ন করবেন, "এসব নেয়ামতের বিনিময়ে তুমি কী করেছো?" সে উত্তর দেবে, "আমি আপনার পথে যুদ্ধ করে শহীদ হয়েছি।" তখন আল্লাহ বলবেন, "তুমি মিথ্যা বলছো। তুমি তো শহীদ হয়েছো, কারণ তুমি চেয়েছিলে লোকে তোমাকে বীর-বাহাদুর বলুক। আর তুমি তা দুনিয়াতেই পেয়ে গেছো। তাই এখানে তোমার কোনো প্রাপ্য নেই।" এরপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
২. দানবীর: এরপর একজন দানশীল ব্যক্তিকে উপস্থিত করা হবে। তাকে দেওয়া সম্পদ দেখিয়ে আল্লাহ প্রশ্ন করবেন, "তুমি এসব নেয়ামতের বিনিময়ে কী করেছো?" সে উত্তর দেবে, "আমি আপনার সন্তুষ্টির জন্য এ সম্পদগুলো আপনার পথে ব্যয় করেছি।" আল্লাহ বলবেন, "তুমি মিথ্যা বলছো। তুমি দান করেছো যাতে লোকে তোমাকে দানবীর বলে, আর তুমি তা দুনিয়াতেই পেয়ে গেছো। তাই এখানে তোমার কোনো প্রাপ্য নেই।" এরপর তাকেও জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
৩. আলেম: সবশেষে একজন আলেমকে আনা হবে। আল্লাহ তাকে প্রশ্ন করবেন, "তোমাকে আমি যে জ্ঞান দিয়েছিলাম, তা তুমি কোন পথে ব্যয় করেছো?" সে উত্তর দেবে, "আমি আপনাকে খুশি করার জন্য সে জ্ঞান অন্য মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছি।" আল্লাহ বলবেন, "তুমি মিথ্যা বলছো। তুমি চেয়েছিলে লোকেরা তোমার প্রশংসা করুক এবং তোমাকে প্রাধান্য দিক, আর তুমি তা দুনিয়াতেই পেয়ে গেছো। তাই এখানে তোমার কোনো প্রাপ্য নেই।" এরপর তাকেও জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২৩৮২)
মানুষের মধ্যে অহংকার এমন এক মারাত্মক ব্যাধি, যা তার সমস্ত ভালো কাজকে ধ্বংস করে দিতে পারে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, "যার মনে যবের দানা পরিমাণও অহংকার থাকবে, সে কখনো জান্নাতে প্রবেশ করবে না।"
এ কথা শুনে একজন সাহাবি জিজ্ঞেস করলেন, "মানুষ তার পোশাক ও জুতা সুন্দর হোক— এটা পছন্দ করে, তাহলে সেটাও কি অহংকার?" উত্তরে নবী (সা.) বললেন, "আল্লাহ সুন্দর এবং তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন। আসলে অহংকার হচ্ছে সত্য ও ন্যায়কে উপেক্ষা করা এবং মানুষকে তুচ্ছ করা।" (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯১)
এই হাদিস আমাদের শিক্ষা দেয় যে, আমাদের প্রতিটি আমল শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হওয়া উচিত। অন্যথায়, আমাদের ইবাদত-বন্দেগি বৃথা যাবে।
Comments