
নীলফামারীর সৈয়দপুরে কুটির শিল্প মেলার নামে চলা অবৈধ লটারির জুয়ার কারণে শতাধিক চা বিক্রেতার জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে। আগে যেখানে চায়ের দোকানে গ্রাহকের ভিড় লাগত, এখন সেই ১০-২০ টাকার চা খাওয়ার টাকা দিয়ে মানুষ লটারির টিকিট কিনছে, যা চা বিক্রেতাদের আয়ে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।
সৈয়দপুর শহরের রেললাইন এলাকার চা বিক্রেতা আকরাম হোসেন কষ্টের সুরে বলেন, “আগে চা খাওয়ার জন্য মানুষ লাইন ধরত, এখন আর ভিড় হয় না। যারা ১০-২০ টাকার চা খেত, তারা এখন সেই টাকা দিয়ে লটারির টিকিট কিনছে। আমরা পরিবার নিয়ে কষ্টে আছি।”
তিনি সামনে লটারির টিকিটের ডিব্বা দেখিয়ে বলেন, “দেখেন, চায়ের দোকানের সামনেই লটারির ডিব্বা নিয়ে বসে আছে। এতে আমাদের রুজি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।”
একই কথা বলেন ফেরিওয়ালা চা বিক্রেতা গোলাহাটের সাগর। তিনি জানান, “আগে দিনে খরচ বাদ দিয়ে ৪০০-৫০০ টাকা আয় হতো। কিন্তু মেলায় লটারি জুয়া শুরুর পর থেকে মানুষ চায়ের টাকা বাঁচিয়ে টিকিট কিনছে। এখন ৩০০ টাকা আয় করাও মুশকিল। পরিবার নিয়ে হিমশিম খাচ্ছি।”
সরেজমিনে দেখা গেছে, শুধু ছোট রেলঘুন্টি থেকে বড় রেলঘুন্টি পর্যন্ত ১৫-১৮টি ভ্রাম্যমাণ চায়ের দোকানের আশপাশে লটারির টিকিটের ডিব্বা বসানো হচ্ছে। এতে চা বিক্রেতাদের ব্যবসার উপর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। এই সমস্যা শুধু রেললাইন এলাকার নয়, উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তের শতাধিক চা বিক্রেতার ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চা বিক্রেতা বলেন, “চা বিক্রি করে কষ্ট হলেও সংসার চালাতাম। এখন লটারির জুয়া আমাদের কমর ভেঙে দিয়েছে। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি।”
সৈয়দপুর শহরের বিমানবন্দর সড়কে ফেয়ার পার্কে চলা এই কুটির শিল্প মেলায় প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ২৫০টির বেশি টিনের ডিব্বায় অবৈধ লটারির টিকিট বিক্রি হচ্ছে। এতে শুধু চা বিক্রেতারাই নয়, হাজার হাজার খেটে খাওয়া মানুষও সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। মেলার কারণে শহরে যানজট ও কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত বেড়েছে, পাশাপাশি পারিবারিক অশান্তিও দেখা দিয়েছে।
সৈয়দপুর আল-ফারুক স্কুলের শিক্ষক শাহবাজ ও সৈয়দপুর মহিলা মহাবিদ্যালয়ের প্রভাষক শিউলী সুলতানা জানান, “প্রতিদিন ২৫০টির বেশি ডিব্বায় ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টিকিট বিক্রি হচ্ছে। এ হিসাবে প্রতিদিন ১ কোটি টাকার বেশি এবং ৪৫ দিনে ৪৫ কোটি টাকারও বেশি সাধারণ মানুষের পকেট থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এভাবে চললে সৈয়দপুর মঙ্গার কবলে পড়বে।”
স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন অটোরিকশা ও মাইকিংয়ের মাধ্যমে সৈয়দপুর, নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুরের বিভিন্ন উপজেলায় মোটরসাইকেল, সোনার গহনার মতো লোভনীয় পুরস্কারের প্রলোভন দেখিয়ে টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। সংবাদপত্র ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই অবৈধ জুয়া বন্ধের দাবি উঠলেও প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে শহরবাসী।
এ বিষয়ে জানতে আয়োজক কমিটি ও নীলফামারী জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
Comments