
বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানা সম্প্রতি একটি টক শোতে জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক কৌশল ও সাংগঠনিক শক্তি নিয়ে স্পষ্ট মন্তব্য করে আলোচনার জন্ম দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, জামায়াত যদি কাউকে শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে, তবে তাকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য যে আক্রমণাত্মক কৌশল অবলম্বন করে, তা বাংলাদেশের অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে সম্ভব নয়।
রুমিন ফারহানা জামায়াতের সাংগঠনিক কাঠামোর প্রশংসা করে বলেন, “জামায়াত একটি অত্যন্ত সুসংগঠিত দল। এটি অত্যন্ত কঠোরভাবে সংগঠিত এবং তাদের কর্মী, সমর্থক ও ভোটাররা দলের জন্য জীবন দিতেও প্রস্তুত। তারা দলের নির্দেশ অন্ধভাবে পালন করে, ভালো-মন্দ বিচার না করে। এটি অনেকটা সামরিক বাহিনীর মতো, যেখানে কঠোর প্রশিক্ষণ ও শৃঙ্খলা থাকে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, জামায়াতের আমির সম্প্রতি তাদের সংগঠনকে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর সঙ্গে তুলনা করেছেন, যা তাদের সাংগঠনিক শক্তির ইঙ্গিত দেয়।
ডিজিটাল মাঠে জামায়াতের আধিপত্য
রুমিন ফারহানা রাজনীতির দুটি মাঠের কথা উল্লেখ করেন—প্রচলিত মাঠ ও ডিজিটাল মাঠ। তিনি বলেন, “প্রচলিত মাঠে আমরা জনসভা, আন্দোলন করি, যেখানে আমাদের জেলে পাঠানো হতে পারে। কিন্তু ডিজিটাল মাঠ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। একটি জনসভায় সর্বোচ্চ ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ মানুষ উপস্থিত হতে পারে, কিন্তু একটি ডিজিটাল কনটেন্ট মুহূর্তে ১০ লাখ থেকে ১ কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে যায়।”
তিনি জানান, জামায়াত ডিজিটাল মাঠে তাদের প্রতিপক্ষ বা শত্রু হিসেবে চিহ্নিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অত্যন্ত আক্রমণাত্মক ভাষা ব্যবহার করে। “তাদের অসংখ্য বট আইডি রয়েছে, যার মাধ্যমে তারা যে কাউকে যে কোনো ভাষায় আক্রমণ করতে পারে এবং কুৎসিত মন্তব্য করতে দ্বিধা করে না,” বলেন তিনি।
রাজনৈতিক শিষ্টাচারের অভাব
জামায়াতের রাজনৈতিক শিষ্টাচার নিয়ে প্রশ্ন তুলে রুমিন বলেন, “রাজনৈতিক শিষ্টাচার এখন সুদূর পরাহত। আমি পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে বলেছিলাম, জামায়াতের অবস্থা এমন হয়েছে যে তাদের একটা তকমা দিয়ে পিটিয়ে মারা হচ্ছে। এটা একটি সভ্য দেশে হতে পারে না।” তিনি আরও বলেন, তিনি যখন জামায়াতের দুর্দিনে তাদের পক্ষে কথা বলেছিলেন, তা তারা মনে রাখেনি। “এখন আমার কোনো বক্তব্য বা জাতীয় পার্টির কোনো রাজনৈতিক অবস্থান যদি জামায়াতের জন্য হুমকি মনে হয়, তাহলে তারা দুইবার চিন্তা না করে আমাদের নিশ্চিহ্ন করতে বা মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে চেষ্টা করবে,” যোগ করেন তিনি।
জামায়াতের কৌশল: একটি বিশ্লেষণ
রুমিন ফারহানার মতে, জামায়াতের এই আক্রমণাত্মক কৌশল তাদের সাংগঠনিক শক্তি এবং শৃঙ্খলার ফল। তাদের কর্মী-সমর্থকদের দলের প্রতি অন্ধ আনুগত্য এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে তাদের কার্যকর উপস্থিতি তাদের অন্যান্য রাজনৈতিক দল থেকে আলাদা করে। তবে, তিনি জামায়াতের এই কৌশলকে রাজনৈতিক শিষ্টাচারের পরিপন্থী হিসেবে সমালোচনা করেন।
Comments